দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা (২য় পত্র)
প্রথম পত্র
(ক) ব্যবস্থাপনার ধারণা : ব্যবস্থাপনা শব্দটি ইংরেজি Management শব্দের প্রতিশব্দ। ইংরেজি Management শব্দটির সমার্থক শব্দ হিসেবে 'to handle' গণ্য করা হয়, যার অর্থ চালনা করা বা পরিচালনা। ইংরেজি এর শব্দটি অধিকাংশের মতে ল্যাটিন শব্দ 'maneggiare' থেকে এসেছে, যার অর্থ 'to trained up the horses' অর্থাৎ অশ্ব কে প্রশিক্ষিত করে তোলা।
প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এতে নিয়োজিত উপকরণাদির সঠিক ব্যবহারের সকল প্রয়াস ও প্রচেষ্টাকে ব্যবস্থাপনা বলে। এরূপ প্রয়াস বা প্রচেষ্টার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে ব্যবস্থাপক বলা হয়। একটি প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের উপকরণ থাকে মানবীয় ও বস্তুগত মানবীয় উপকরণ বলতে মানুষ বা জনশক্তি বা কর্মীবৃন্দকে বোঝায়। বস্তুগত উপকরণ বলতে যন্ত্রপাতি,মালামাল,অর্থ,বাজার পদ্ধতিকে বোঝায়। এদের সংক্ষেপে 6m (Man, Money, Materials, Money, Market, Method) বলা হয়। এ সকল উপকরনের কার্যকর ব্যবহার সম্ভব হলে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করতে পারে। তাই প্রকৃত অর্থে উপকরণাদি কার্যকর ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা বলে।
(খ) ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী : প্রক্রিয়া বলতে পরস্পর নির্ভরশীল ধারাবাহিক কাজের সমষ্টিকে বোঝায়। ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াতেও এমন কতগুলো উপকরণে রয়েছে যার ধারাবাহিক আবর্তনের ফলে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
১) পরিকল্পনা : ভবিষ্যতে কি করা হবে তা আগাম ঠিক করে রাখার নামই হলো পরিকল্পনা। ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার প্রথম ও প্রধান কাজই হলো পরিকল্পনা। এটি ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য কাজের ভিত্তি স্বরূপ। পরিকল্পনা অনুসারে ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজ ধারাবাহিকতা মেনে সম্পন্ন হয়। তাই পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যবস্থাপক গণিত অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন পড়ে। শুধু কি করা হবে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ কে পরিকল্পনা হিসেবে না দেখে কখন ও কোথায় করা হবে, কত সময়ের মধ্যে করতে হবে, কে বা কারা তার সম্পাদন করবে ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে তবে তা একটি আদর্শ পরিকল্পনা বিবেচিত হয়।
২) সংগঠন : গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উপকরণাদি কে সংগঠিত ও কাজে লাগানোর উপযোগী করাকে সংগঠন বলেন। ইট, বালি, সিমেন্ট,রড ইত্যাদি যখন আলাদা থাকে তখন তা সৃষ্টি করতে পারে না। এই উপকরণগুলোকে যখন একত্রিত করে নির্মাণের কাজে লাগানো হয় তখন তা থেকে বিল্ডিং, সেতু ইত্যাদি নির্মিত হয়। মানুষগুলো যখন আলাদা থাকে তখন তাদের দ্বারা ও কিছু সৃষ্টি হয় না। কিন্তু যখন এই মানুষগুলোকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়, দায়িত্ব ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, একের সাথে অন্যের সম্পর্ক বলে দেয়া হয় তখনই মানুষগুলো একটি সংগঠনের রূপায়িত ও কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। তাই উদ্দেশ্যে অনুযায়ী কাজকে বিভাজন, প্রতিটি কাজের জন্য দায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্দিষ্টকরণ এবং সে অনুযায়ী উপায়-উপকরণ সংহত করে তাদের মধ্যে সম্পর্ক নির্দিষ্ট করার কাজকে সংগঠন বলা হয়ে থাকে।
৩) কর্মীসংস্থান : প্রতিষ্ঠান জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, নিয়োগ ও উন্নয়নের কাজকেই কর্মীসংস্থান বলে। সংগঠন প্রক্রিয়ায় কাজ এবং প্রতিটা কাজের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্ধারণের পর ওই কাজ সম্পাদনের জন্য যোগ্য জনবল সংস্থানের প্রয়োজন পড়ে। এই জনবলের যোগ্যতা, আগ্রহ ও আন্তরিকতার ওপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। তাই কর্মী নিয়োগে ভুল করলে প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদে তার কুফল ভোগ করতে হয়। তাই কোথায়, কোন মানের, কি সংখ্যক লোকের প্রয়োজন সে অনুযায়ী যোগ্য কর্মী নিয়োগ করতে হয়।
৪) নেতৃত্বদান : কোন দল বা গোষ্ঠীর আচরণ ও কাজকে উদ্দেশ্যপানে এগিয়ে নেওয়ার কৌশলকে নেতৃত্ব বলে। যিনি বা যারা এরূপ প্রয়াস চালান তাকে বা তাদেরকে নেতা বলা হয়ে থাকে। নেতৃত্বদানের বিষয়টি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য আদেশ দেওয়া, পরিচালনা করা, প্রভাবিত করা, উৎসাহিত করা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত করা, দলগত প্রচেষ্টা জোরদার করা ইত্যাদি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। তাই ব্যবস্থাপনায় নির্দেশনা, প্রেষণা ও সমন্বয় কাজ নেতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়। সেজন্য আমেরিকান বইগুলোতে ব্যবস্থাপনার কাজ উল্লেখ করতে যেয়ে পরিকল্পনা, সংগঠন, নেতৃত্বদান ও নিয়ন্ত্রণ এভাবে কাজের পরম্পরা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। অবশ্য এখন অনেকেই পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নেতৃত্বদান ও নিয়ন্ত্রণ -এই ৫টি কাজকে ব্যবস্থাপনা কাজ হিসেবে গণ্য করেন। নিম্নে নেতৃত্তের আওতাধীন ব্যবস্থাপনার কাজ সমূহ উল্লেখ করা হলো:
ক) নির্দেশনা : অধস্তন জনশক্তিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান, তত্ত্বাবধান, উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান এবং অনুসরণ কার্যকে নির্দেশনা বলে। যোগ্য জনবল কোথাও থাকলে তারা কাজ করবে এমন প্রত্যাশা করা যায় না, কি কাজ করবে এ বিষয়ে সময়ে-অসময়ে আদেশ নির্দেশ প্রদান করতে হয়। তারা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা বা করতে পারছে কিনা তার তত্ত্বাবধানে প্রয়োজন পড়ে। ক্ষেত্রবিশেষে উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করতে হয়।
খ) প্রেষণা : অধঃস্তন কর্মীদের কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত করার কাজকে প্রেষণা বলে। কর্মীদের কোন কাজ করতে বললে তারা সবসময় আন্তরিকতা নিয়ে সম্পাদন করবে এটা আশা করা যায় না। যন্ত্রপাতি সহ অন্যান্য বস্তুগত উপকরণের সাথে জনশক্তির এখানেই বড় পার্থক্য বিদ্যমান। জনশক্তি যদি কাজে স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত না হয় তবে তাদের যত আদেশ নির্দেশ প্রদান করা হোক, তত্ত্বাবধান করা হোক তা কখনোই কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারেনা। ভীতি প্রদর্শন বা কাজের চাপ সৃষ্টি করলে স্বল্প সময়ের জন্য কখনো কিছুটা ভালো করে লক্ষ্য করা গেলেও বাস্তবে তা কার্যকর নয়। তাই ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে কর্মীদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে কাজ আদায় এবং প্রতিষ্ঠান ধরে রাখার কাজ বর্তমানকালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক ও অনার্থিক বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
গ) সমন্বয় সাধন : বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভাগের কাজকে এক সূত্রে গ্রথিত ও সংযুক্ত করার কাজকে সমন্বয় বলে। একটা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভাগ কাজ করে। প্রতিটা ব্যক্তি ও বিভাগ যদি নিজেদের ইচ্ছামতোই কাজ করে, অন্যের সাথে নিজের কাজের সমন্বয় - সংযুক্তির বিষয়টি না ভাবে তবে দেখা যাবে এক পর্যায়ে সামগ্রিক কাজের প্রচণ্ড বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। সম্মিলিত যেকোনো কাজ সকল ব্যক্তি ও বিভাগকে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জন বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একে অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলার প্রয়োজন পড়ে। এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব উর্দ্ধতন নেতৃত্বের।
৫) নিয়ন্ত্রণ : পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদি সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা পরিমাপ, ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা নির্ণয় ও বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রক্রিয়া কে নিয়ন্ত্রণ বলে। প্রতিষ্ঠানের যেকোনো কাজ শুরুর পূর্বে পরিকল্পনা প্রণীত হয়। তার আলোকে উপায়-উপকরণাদির সংহত করা হয়ে থাকে। এরপর অধস্তনদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়। কার্য চলাকালে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধন করা হয়। এরপর সময় শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ কতটা সম্পন্ন হয়েছে তা মূল্যায়নের প্রয়োজন পড়ে। এতে ব্যবস্থাপনা কার্য কতটা দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়েছে তার প্রমাণ মেলে।এতে ব্যবস্থাপনার জবাবদিহিতা ও কার্য দক্ষতার মান বৃদ্ধি পায়।
(গ) ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব : যেকোনো সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় ব্যবস্থাপনা একটি শক্তিশালী উপাদান। এটি এমন এক শক্তি যা প্রতিষ্ঠানের সকল উপায়-উপকরণ কে কার্যকরীভাবে সংগঠিত ও লক্ষ্যপানে পরিচালিত করে। এমনই প্রতিষ্ঠানকে সফলতা দান করে তেমনি ব্যবস্থাপনা কার্যে অদক্ষতা প্রদর্শিত হলে উপায়-উপকরণ যত উন্নত হোক না কেন তা কোন কার্যকরী ফল দিতে পারে না। তাই প্রতিটি পরিবার সমাজ প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রসহ সর্বত্রই সঠিক পরিচালনা ব্যবস্থা করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিম্নে ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১) উপকরণাদি সুষ্ঠু ব্যবহার : উপকরণ বলতে কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত বস্তুকে বোঝায়। তাই উৎপাদনের কাজে লাগে এমন প্রয়োজনীয় বস্তুকে উৎপাদনের উপকরণ বলে। ভূমি, শ্রম মূলধন ইত্যাদি উপকরণ কোথাও থাকাই উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট নয়। এগুলো যথাযথ ব্যবহারের জন্য যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তাই ব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনা হল সেই ধরনের কাজ যা অসংগঠিত মানুষ ও অবস্তুগত সম্পর্কে ব্যবহারযোগ্য ফলদায়ক পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। তাই উপকরণের কার্যকর ব্যবহারে যোগ্য ব্যবস্থাপনার বা ব্যবস্থাপকের বিকল্প নেই।
২) দক্ষতা বৃদ্ধি : দক্ষতা হলো কম খরচে বেশি কাজ বা লাভের সামর্থ্য। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারো দক্ষতা হিসেবে গণ্য। ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। কারণ উত্তম ব্যবস্থাপনার অধীনে এর প্রতিটা জনশক্তির দক্ষতা বাড়ে, ফলে বস্তুগত উপকরণ যেমন- যন্ত্রপাতির, কাঁচামাল, মূলধনের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং মুনাফার পরিমাণ ও বৃদ্ধি পায়।
৩) শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা : শৃঙ্খলা রীতি, নিয়ম-নীতি, সুব্যবস্থা ইত্যাদিকে বোঝাই। একটি প্রতিষ্ঠানে যদি এগুলো না থাকে তবে ওই প্রতিষ্ঠানের কখনোই ভালো চলতে পারে না। একটা প্রতিষ্ঠান, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে এ বিষয়টি প্রযোজ্য। একটা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব থাকে মূলত পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার ওপর। তারা যদি তাদের কাজের মধ্য দিয়ে সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন তবে প্রতিষ্ঠানগুলো চলতে পারেনা। আমাদের দেশের সর্ব ক্ষেত্রে বিশৃংখলার পেছনে মূল কারণ হলো ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের অদক্ষতা।
৪) উত্তম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা : একটা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ যেমন - মালিক, ব্যবস্থাপক, শ্রমিক -কর্মী, ক্রেতা ও ভোক্তা সরবরাহকারী ইত্যাদি সবার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা বর্তমানকালে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।একটা প্রতিষ্ঠান দক্ষ ব্যবস্থাপনায় শুধুমাত্র তা নিশ্চিত করতে পারে। একটা পরিবারের বাবা-মার মধ্যে উত্তম সম্পর্ক না থাকে তবে ওই পরিবারে অশান্তির শেষ থাকে না। সন্তানের মধ্যে অস্থিরতা, অস্বাভাবিকতা জন্ম নেয়। একটা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সর্বত্র ভাবে। প্রযোজ্য মালিক ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে যদি সুসম্পর্কের অভাব থাকে, গ্রুপিং-লবিং যদি নিত্যদিনের বিষয় হয় তবে নীচের স্তরে কর্মরত শ্রমিক কর্মীরাও তার দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয়ে থাকে। এতে প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক, স্বচ্ছন্দ ও কর্মমুখী পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।একটা প্রতিষ্ঠানের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় শুধু সর্বস্তরে উত্তম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে সে অবস্থা থেকে প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দান ও সামনে এগিয়ে নিতে পারে।
৫) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি বলতে মানুষকে কাজে লাগানোর মত নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি কে বুঝায়। উত্তম ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন নিশ্চিত করে না, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও নতুন নতুন ব্যবসায় গঠনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের স্কয়ার গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ এ সকল প্রতিষ্ঠান দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে -তা তাদের ব্যবস্থাপনার দক্ষতার কারণে সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী অনেকেই তাদের ব্যবস্থাপনা দক্ষতার কারণে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নতুন নতুন কারখানা গড়ে হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছেন।
(ঘ) প্রতিষ্ঠান সাফল্যের জন্য ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী সঠিকভাবে প্রয়োগ যৌক্তিক ভাবে উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করা হলো:
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে পরিকল্পনা অনুসারে কার্য সম্পাদনের উপর। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন উওম ব্যবস্থাপনা। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে এবং উপায়-উপাদানের সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে পরিকল্পনা সংগঠন নির্দেশনা প্রেষণা সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে ব্যবস্থাপনা বলে এ সকল কাজে প্রতিষ্ঠানের উচ্চ স্তর হতে নিম্নস্তর পর্যন্ত সকলেই কমবেশি সম্পাদন করা হয়। তাই ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কোন একটিমাত্র স্থলে সীমাবদ্ধ কথা বলা যায়না নিন্মে ব্যবস্থাপনার স্তর সমূহ আলোচনা করা হলো:
১) উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা : প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের নির্বাহীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ব্যবস্থাপনাকে উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা বলে। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও নীতি নির্ধারণ এবং দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে ব্যবস্থাপনার উচ্চপর্যায়ে সম্পৃক্ত থাকে। কোন কোম্পানির পরিচালক মন্ডলী, পরিচালকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সচিব ও ক্ষেত্রবিশেষে জেনারেল ম্যানেজার এ পর্যায়ে ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত।
২) মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা : উচ্চ পর্যায়ে গৃহীত লক্ষ্য পরিকল্পনা ও নির্দেশনা বাস্তবায়নের নিম্নপর্যায়ের ব্যবস্থাপককে কাজে লাগাতে ব্যবস্থাপনা যে পর্যায়ে কাজ করে তাকে মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা বলে। এরূপ পর্যায়ে উচ্চ ও নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার মধ্যে সেতুবন্ধকের ভূমিকা পালন করে। এরূপ ব্যবস্থাপনার উচ্চপর্যায়ের গৃহীত লক্ষ্য নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ,উপকরণাদি সংগঠিতকরণ, পরিচালনা, নেতৃত্ব প্রদান, সমন্বয় এবং নিয়ন্ত্রণ কার্য পরিচালনা করে।
৩) নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা : মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনা ও নীতি-কৌশল মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যবস্থাপকগণ নিম্নপর্যায়ের ব্যবস্থাপনা বলে। এ পর্যায়ের উপরে দিকে থাকে মধ্যপর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণ, নিচের দিকে থাকে ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কর্মী বা স্রমিক। নিচের দিক থেকে উপর দিকে চিন্তা করলে একেবারে প্রথম সারির ব্যবস্থাপকগণ এ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। এ পর্যায়কে তত্ত্বাবধান পর্যায় নামেও আখ্যায়িত করা হয়।
ব্যবস্থাপনার কাজকে প্রকৃতিগত ভাবে চিন্তা করা ও কাজ করা এই দুই ভাগে ভাগ করা হলে উচ্চপর্যায়ে ব্যবস্থাপনা অধিকমাত্রায় চিন্তনীয় কাজ এবং নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা অধিকমাত্রায় সরাসরি কাজের তত্ত্বাবধানের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। অন্যদিকে মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত নির্বাহীগণ মোটামুটি ভাবে উভয় ধরনের কর্ম সম্পাদন করে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি | ইসলাম শিক্ষা | পদার্থবিজ্ঞান | ইতিহাস |
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা | জীববিজ্ঞান | উচ্চতর গণিত | সমাজবিজ্ঞান | ভূগোল | ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা | উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন | রসায়ন | অর্থনীতি | পৌরনীতি ও সুশাসন | যুক্তিবিদ্যা | হিসাব বিজ্ঞান
প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা (১ম পত্র)
১ম সপ্তাহ
একটি দেশের অর্থনীতি ও জনগোষ্ঠির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মুখ্য চালিকা শক্তি হলো ব্যবসায় -উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ।
নমুনা সমাধান
ক) ব্যবসায়ের ধারণা : ইংরেজি business শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো যেকোনো কাজে ব্যস্ত থাকা। কিন্তু যে কোন কাজকে অর্থনীতিতে ব্যবসায় বলে না। এখানে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন ও বন্টন সহ সকল বৈধ অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় বলে। অর্থনৈতিক কাজ বলতে অর্থ উপার্জন বা আয়-রোজগারের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করাকে বুঝায়। কোন কাজ অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট হলেই তাকে ব্যবসায় বলা যাবে না। ঐ কাজ করার পেছনে অবশ্যই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকতে হয় তেমনি তা আইনত বৈধ হওয়া আবশ্যক। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ শিল্পের মাধ্যমে ও বন্টন সংক্রান্ত কাজ বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে শিল্প, বাণিজ্য ও এর সহায়ক সকল কাজই ব্যবসায়।
অর্থাৎ ব্যবসায়ী = মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কাজ + বণ্টন সংশ্লিষ্ট কাজের সমষ্টি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জমির শেখ কৃষক, আলী হোসেন কাপড়ের দোকান, সুমন দাস চালের ব্যবসায়ী, শান্তা সরকার চাকরি করেন এদের প্রত্যেককেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। কিন্তু সকল কাজেই ব্যবসায়ী নয়। জমির শেখ যদি পরিবারের খাবারের প্রয়োজন মেটাতে চালডাল তরিতরকারি উৎপন্ন করেন, তবে তার এ অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় হবেনা। কিন্তু তিনি যদি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উৎপন্ন করেন এবং তা থেকে লাভের প্রত্যাশা করেন তবে তার কাছে ব্যবসায় হিসেবে গণ্য।মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আলী হোসেন কাপড় ও সুমন দাস চাল কিনে বিক্রি করেন।ফলে তাদের দুজনই ব্যবসায়ী। শান্তা সরকার চাকরি করে। মাস গেলে নির্দিষ্ট মাইনে পান।তিনি চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী নন। একইভাবে কাপড় বা চালের কোনো ব্যবসায়ী যদি চোরাই পণ্য কিনে বিক্রি করে তবে ঐ কাজ বৈধ না হওয়ায় তা ও ব্যবসায় পর্যায়ে পড়বে না।
খ) ব্যবসায়ের আওতা অথবা পরিধি : মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন, বন্টন এর সহায়ক যাবতীয় কাজে সমষ্টিকে ব্যবসায় বলে। এইয়উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ শিল্পের মাধ্যমে ও বন্টন সংক্রান্ত কাজ বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বন্টনের ক্ষেত্রে ক্রয় বিক্রয় বা পণ্য বিনিময় মুখ্য কাজ হিসেবে গণ্য। অন্যান্য কাজ পণ্য বিনিময় এর সহায়ক কার্যাবলী হিসেবে বিবেচিত হয়।ব্যবসায়ীকে শিল্প-বাণিজ্যের সমষ্টি গণ্য করা হলেও সমাজে প্রত্যক্ষ সেবা ক্রয় বিক্রয় বর্তমানকালে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি অর্থনৈতিক কার্য হিসেবে বিবেচিত। তাই ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি নিম্নোক্ত রেখাচিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করা হলো:
১) শিল্প : শিল্প উৎপাদনে বাহন। যে কার্যপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং এতে উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী জন্য প্রস্তুত করা হয় তাকে শিল্প বলে। শিল্প কে প্রধানত ৫ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
ক) প্রজনন শিল্প : অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্বাচিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর বংশবিস্তারকরণ প্রচেষ্টাকে প্রজনন শিল্প বলে। যেমন -নার্সারি, হ্যাচারি, হাঁস-মুরগির খামার ইত্যাদি।
খ) নিষ্কাশন শিল্প : মে শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভূগর্ভ, পানি, বায়ু হতে সম্পদ উত্তোলন করা হয় তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে যেমন খনিজ পদার্থ উত্তোলন, মৎস্য শিকার এরূপ শিল্পের অন্তর্গত।
গ) নির্মাণ শিল্প : যে শিল্প প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ, দালান কোঠা নির্মাণ করা হয় তাকে নির্মাণ শিল্প বলে।
ঘ) প্রস্তুত শিল্প : শ্রম ও যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাঁচামাল ও অর্ধ প্রস্তুত জিনিসকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী চূড়ান্ত পণ্যে প্রস্তুত করার প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত শিল্প বলে। যেমন - বয়ন শিল্প, ইস্পাত শিল্প ইত্যাদি।
ঙ) সেবা পরিবেশক শিল্প : যে শিল্প মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করার কাজে নিয়োজিত থাকে তাকে সেবা পরিবেশক শিল্প বলে। যেমন - গ্যাস,বিদ্যুৎ, টেলিফোন, পর্যটন, ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এই শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।
২) বাণিজ্য : শিল্পে উৎপাদিত পণ্য প্রকৃত ভোগকারী বা ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে তারা দূরীকরণের জন্য গৃহীত যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে বাণিজ্য বলে। সুতরাং বাণিজ্য ব্যবসায়ী গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বন্টন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। বাণিজ্যের আওতাভুক্ত বিষয় সমূহ নিম্নরূপ:
ক) পণ্য বিনিময় : মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য (যার মধ্যে সেবা অন্তর্ভুক্ত) ক্রয়-বিক্রয় কার্যকে ট্রেড বা পণ্য বিনিময় বলা হয়।এই বিনিময় বা ক্রয়-বিক্রয় বন্টনের ক্ষেত্রে মালিকানা হস্তান্তর কার্য সম্পন্ন করে ব্যক্তিগত বাধা দূর করে।
খ) পণ্য বিনিময় সহায়ক কার্যাবলী : এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় কার্য সুষ্ঠুভাবে সমাধানের সময় ঝুঁকিগত, স্থানগত, কালগত, ও জ্ঞানগত বাধা দেখা দেয়। এ সকল বাধা দূরীকরণের জন্য যথাক্রমে ব্যাংক-বীমা, পরিবহন, গুদামজাতকরন, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কাজে সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। তাই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য এসকল কার্য সম্পাদনের জন্য সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানও স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ের আওতাধীন।
৩) প্রত্যক্ষ সেবা : অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীগণ প্রত্যক্ষভাবে সেবাকর্ম বিক্রি করেন। এদের কাজ সাধারণভাবে ব্যবসায়ের আওতাধীন মনে করা হলেও প্রকৃত অর্থে তা পেশা বা বৃত্তি হিসেবে গণ্য হয়। তবে কয়েকজন ডাক্তার মিলে ক্লিনিক ব্যবসায় বা কয়েকজন উকিল মিলে অ্যাটর্নি ফার্ম বা প্রকৌশলীরা মিলে ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম গঠন করতে পারেন যা প্রত্যক্ষ সেবা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সঙ্গত কারণেই ব্যবসায়ের আওতায় আসে।
গ) ব্যবসায়ের কার্যাবলী : মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য দ্রব্য ও সেবা কোন উৎপাদন, বন্টন এর সহায়ক যাবতীয় কাজই ব্যবসায়িক কার্যাবলী হিসেবে গণ্য। যথা:
১) উৎপাদন : উৎপাদন ব্যবসায়ের প্রথম ও মৌলিক কাজ। একজন ব্যবসায়ী বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পণ্য বা সেবা সামগ্রী উৎপাদন করে থাকেন। শিল্প উৎপাদনের বাহন। উৎপাদন বলতে এক্ষেত্রে বিনিয়োগযোগ্য নতুন উপযোগ সৃষ্টি করাকে বুঝায় যার ক্রেতাদের মাঝে ক্রয় আগ্রহ সৃষ্টি করে। উৎপাদন মূলতব্যবসায়ের ক্ষেত্রে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করে।
২) ক্রয়-বিক্রয় : নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে পণ্য বা সেবার মালিকানা হস্তান্তরের কাজকে ক্রয়-বিক্রয় বলা হয়। ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে পণ্যের মালিকানা বিক্রেতার নিকট থেকে ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হয়। ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসায়ের জন্য একটি সহজাত কাজ। তাই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের কাজকে ব্যবসায় হিসেবে গণ্য করা হয়। উৎপাদনকারী নিকট থেকে পণ্য বা সেবা ভোক্তা বাব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছাতে ক্রয়-বিক্রয় ব্যক্তিগত বাধা দূর করে।
৩) অর্থসংস্থান : প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুসারে কাম্য পরিমাণ মূলধন উপযুক্ত উৎস বা উৎস সমূহ থেকে সংগ্রহ করার ও কাজে লাগানোর প্রক্রিয়াকে অর্থসংস্থান বলা হয়। একজন শিল্প উদ্যোক্তাকে শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য স্বল্পমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদি অর্থসংস্থান করতে হয় ঠিক তেমনি একটি ছোট দোকানের মালিক কেও দোকান ভাড়া অগ্রিম প্রদান দোকানে সাজসজ্জার ইত্যাদি সংক্রান্ত কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে হয়।
৪) ঝুঁকি গ্রহণ : ঝুঁকি হলো আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি কে ঘিরে সর্বদাই ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটা বেশি। যেমন বাজারে পণ্যের মূল্য কমে যেতে পারে, চুরি ডাকাতির সম্ভাবনা, বাজারে মন্দাভাব সৃষ্টি হতে পারে, পণ্য বিনষ্ট হতে পারে, আগুনে বিনষ্ট, জাহাজডুবি ইত্যাদি।ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা বিমার মাধ্যমে দূরীভূত হয় অর্থাৎ বিমা ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে।
৫) পরিবহন : পরিবহন ব্যবসায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। উৎপাদিত পণ্য উৎপাদকের নিকট থেকে চূড়ান্ত ভোক্তার নিকট পৌঁছানোর জন্য পণ্যের স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করাকে পরিবহন বলা হয়। তাই পরিবহন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে স্থানগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। এই বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের এক প্রান্তে উৎপাদিত পণ্য আজ অন্য প্রান্তের সহজেই ব্যবহার করা যাচ্ছে,তা একমাত্র সম্ভব হচ্ছে পরিবহনের মাধ্যমে। যেমন - বাংলাদেশের পোশাক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার গুঁড়ো দুধ বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করছে ইত্যাদি অর্থাৎ পরিবহন ব্যবসায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৬) গুদামজাতকরন : উৎপাদন ও ভোগের মধ্যবর্তী সময়ে পণ্য বিনষ্ট না হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীগণ পণ্য সংরক্ষণের জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে গুদামজাতকরন বলে। এটি ব্যবসায় ক্ষেত্রে সময়গত বাধা দূর করে। গুদামজাতকরন এর ফলে আমরা শীতকালীন দ্রব্য বা পণ্য সারাবছরই ভোগ করতে পারি, আলু উৎপাদনের পর রাখা হয় কোল্ড স্টোরেজে, মাছ রাখা হয় বরফের বাক্সে,তরিতরকারি শাকসবজি বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাচের হিমাগারে রাখা হয় ইত্যাদি।
৭) প্রমিতকরণ ও পর্যায়িতকরণ : পণ্যের আকার, ওজন, গুনাগুন, রং, স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে পণ্যের মান নির্ধারণ করাকে প্রমিতকরণ বলা হয়। পূর্ব নির্ধারিত মান অনুযায়ী পণ্যকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা কে পর্যায়িতকরণ বলা হয়।
৮) মোড়কীকরণ : পণ্যের মান সংরক্ষণ, ক্ষতি থেকে রক্ষা করা এবং পণ্যকে গ্রাহকের নিকট আকর্ষণীয়রূপে তুলে ধরার জন্য মোড়ক দিয়ে পণ্যকে ঢেকে রাখার কাজকে মোড়কীকরণ বলা হয়। যেমন চানাচুর, চিপ্স, চকলেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ যদি পণ্যকে প্যাকেটজাত না করে খোলা বিক্রি করতো তাহলে পণ্যের মান ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেত। তাই গ্রাহকের সুবিধার্থে পণ্যকে বিভিন্ন আকার ও ওজন অনুসারে বিভক্ত করে এবং মোড়কীকরণের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। এতে পণ্যের গুণাগুণ রক্ষা পায় এবং পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি পায়।
৯) বাজারজাতকরণ প্রসার : পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সম্ভাব্য ক্রেতা বা গ্রাহকদের আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা প্রচেষ্টাকে বাজারজাতকরণ প্রসার বলা হয়। এটি ভোক্তাদের কাছে পণ্যের জ্ঞানগত বা প্রচার গত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সহায়তা করে। যেমন : পত্রপত্রিকায়, টিভিতে বিজ্ঞাপন, বড় বড় সুন্দর সাইনবোর্ড ইত্যাদি।
ঘ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যবসায়ের ভূমিকা:
ব্যবসায় যে কোন দেশে অর্থনীতির চালিকা শক্তি। উৎপাদন, বণ্টন, সঞ্চয়, বিনিয়োগ ইত্যাদি অর্থনীতির প্রধান উপাদান যা দেশের ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ব্যবসা-বাণিজ্যে। অগ্রসর দেশই বর্তমানকালে উন্নত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। উন্নত দেশের পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে এখানে ব্যবসায়, শিল্প-বাণিজ্যের অগ্রগতির কোন বিকল্প নেই। কৃষিনির্ভর দেশ হলেও এদেশের অর্থনীতিতে ব্যবসায়ের ভূমিকা বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যবসায়ের ও গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১) সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক নানান ধরনের সম্পদের যথাযথ ব্যবহারে ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক গ্যাসের বাণিজ্যিক ব্যবহার, কৃষিভিত্তিক শিল্প গঠন, বনজ সম্পদ, জনশক্তি ইত্যাদি কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।
২) ব্যক্তিগত ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি : প্রকট বেকার সমস্যার এদেশেও ব্যাপক মানুষ ব্যবসায়ের বিভিন্ন শাখায় যেমন মালিক, কর্মী, সরবরাহকারী সেবাদানকারী, ঋণদাতা ইত্যাদি নানান কাজে নিয়োজিত থাকে। ফলে তাদের আয় রোজগার বৃদ্ধি পায়। এতে সামগ্রিক জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ে।
৩) জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়ন : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে জাতীয় উৎপাদনের সম্পর্ক বিদ্যমান। এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেশের নানান ধরনের শিল্প ও সেবাখাতসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ২০১৬-২০১৭ সালে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (৭.২%) ঘটেছে তাতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ৮৫.১৭%।
৪) সঞ্চয় : উৎসাহদান ব্যবসায় সবসময় নতুন বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে এছাড়া নতুন ব্যবসায় গঠনেও পুঁজির প্রয়োজন হয় তাই এই প্রত্যাশা ও প্রয়োজনকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবসায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।
৫) মূলধন গঠন ও তার সদ্ব্যবহার : ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এর উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাকে মূলধনের পরিণত করে বাংলাদেশের পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি সমূহ জনগণের নিকট শেয়ার বিক্রি করে এবং ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসমূহ আমানত সংগ্রহ করে মূলধন গঠনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।
৬) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি : বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ হলেও এ দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ব্যবসায় ক্ষেত্রে কর্মরত।লেভার ফোর্স সার্ভে ২০১৩ অনুযায়ী সেবা খাতে দেশের মোট শ্রমিকের ৫৪.৯০% কর্মরত। ধীর হলেও দেশের শিল্প বাণিজ্য খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেশের বর্ধিত বেকার সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে।
৭) প্রযুক্তিগত উন্নতি লাভ : বিজ্ঞানের গবেষণা লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নব-নব প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তি আমদানি করে তাকে কাজে লাগানোর প্রয়াস চালায়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে দেশ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের সুফল ভোগ করছে।
সুতরাং বলা যায় দেশ ও জাতির উন্নয়নে ব্যবসায়ের ভূমিকা অপরিসীম।