৮ম শ্রেণি : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় : ১০ম সপ্তাহ : ২০২১

৮ম শ্রেণি : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় : ১০ম সপ্তাহ

অ্যাসাইনমেন্ট : মনে কর, ১৯৭১ সালে তুমি ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিচের ঘটনার ক্ষেত্রে তুমি উপস্থিত থাকলে ঐ সময় কী করতে তার বর্ণনা দাও।

(যে কোনো তিনটি ঘটনার ক্ষেত্রে নিজের অনুভূতি লিখতে হবে)

ক) রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ভাষণ শুনছ।
খ) ২৫শে মার্চ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী।
গ) পাকিস্তান হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামস এলাকাবাসীকে নির্যাতন করছে।
ঘ) মুক্তিবাহিনীকে হানাদাররা তাড়া করছে।
ঙ) ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করছে।

নমুনা সমাধান

১৯৭১ সাল বাঙালি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল। এই বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে বাঙালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য ঝাপিয়ে পরে ফলে বাঙালিরা পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে এবং আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে এই সময়ে। নিম্নে সেসব ঘটনা বর্ণনা করে এবং নিজেকে ৮ম শ্রেনির শিক্ষার্থী মণেকরে আমার অনুভূতির ব্যাখ্যা করা হলো:

রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ভাষণ : বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ এর ভাষণের সময় আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সেদিন ছিল রবিবার। সেদিন ক্লাস শেষে শিক্ষক জানায় বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিবে। যেহেতু রেসকোর্স ময়দান বাসা থেকে ১০ মিনিট দূরুত্বের পথ ছিল তাই স্কুল ছুটির পর আমি বাবার সাথে গিয়েছিলাম। তাঁর ভাষণের মূল বক্তব্য ছিল- যেহেতু বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে সেহেতু জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকারের সর্বাত্মক অসহযোগিতার নির্দেশ দিয়ে তিনি তাঁর ভাষবে কোর্ট কাচারি, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। এমনকি যে পর্যন্ত আমরা মুক্তি পাচ্ছি, ততদিন আমরা খাজনা ট্যাক্স দেয়া বন্ধ রাখব। তাঁর এই ভাষণকে উপস্থিত জনগণ সমর্থন জানায়। এটি ছিল আমাদের কাছে অধিক গর্বের জায়গা।

২৫শে মার্চ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী : পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের ওই সেনা অভিযানের সাংকেতিক নাম বা কোডনেম দিয়েছিল 'অপারেশন সার্চলাইট'।

এই অভিযানটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল তারও এক সপ্তাহ আগে, ১৮ই মার্চ।

সময়টা ছিল রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ। গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করায় ঢাকা তখন বিক্ষোভের শহর। ঢাকায় ইতিমধ্যে ওড়ানো হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এরই মধ্যে ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিয়েছেন। ডামি রাইফেল নিয়ে ঢাকার রাস্তায় মার্চ করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

ঢাকায় তখন চলছে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। আলোচনায় অংশ নিতে জুলফিকার আলী ভুট্টোও রয়েছেন শহরে। সব মিলে খুবই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।

এরকম প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা অপারেশন সার্চলাইটের, যুক্তি ছিল রাজনৈতিক সমঝোতা 'ব্যর্থ' হলে সামরিক অভিযান চালিয়ে 'পাকিস্তান সরকারের কর্তৃত্ব' প্রতিষ্ঠা করা হবে।

'কালরাত্রির' সেই ভয়াবহ সেনা অভিযানের পরিকল্পনা কীভাবে হয় তার ধারণা পাওয়া যায় সেসময় ঢাকায় দায়িত্বরত পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতিকথা থেকে।

পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের সহযোগী কর্তৃক এলাকাবাসীদের উপর নির্যাতন : ৭ই মার্চের ভাষণের পর পাকিস্তানি সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, বাঙালিদের মাঝে বিরাজ করে উত্তাল অবস্থা। হানাদার বাহিনী বাঙালির উপর শুরু করে অমানবিক নির্যাতন। তাদের রাস্তাঘাট দেখিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, পথ চিনিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ সহযোগী সংগঠন গড়ে তোলে, যা আলবদর, আলশামস, রাজাকার নামে পরিচিত। আমাদের এলাকায়ও শুরু হয় এই অত্যাচার। ঘরের বাইরে দেখলেই শুরু হতো। তখন মুক্তিযোদ্ধার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে রাজাকাদের গতি পথ থেকে শুরু করে সব কিছু লক্ষ করতাম আর মুক্তিবাহিনীদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হতাম। একসময় তাদের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে আমাদের এলাকা মুক্তিবাহিনীর ঘাটিতে পরিণত হয়েছিল।

মুক্তিবাহিনীকে হানাদাররা তারা করেছে : হানাদার বাহিনীরা মা বোনের ইজ্জত নেয়া থেকে শুরু করে নির্বিচারে শিশুদের হত্যা পর্যন্ত করতে পিছ পা হয় নি। তাই এই নরক যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে মুক্তবাহিনী তৎপর হয়ে উঠেছিল। তাই তারা সর্বদা খবর রাখতো যার কারণে আমাদের এলাকা থেকে মুক্তিবাহিনীকে তাড়াতে সক্ষম হয়েছিল।

১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীদের আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর : ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের চারদিক থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করে। মিত্রবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে তারা টিকতে না পেরে পিছু হটে গিয়ে বড় শহরগুলোতে সমবেত হতে থাকে। একই সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পাকিস্তানি সেনাদের ছোট ছোট দল মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে থাকে।

পরাজয় অনিবার্য দেখে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার জেনারেল এ এ কে নিয়াজিকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সে দিন বিকেলেই নিয়াজি যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠান। ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সংবরণ করে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান জেনারেল হামিদ এ প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার জন্য নিয়াজিকে সংকেত দেন। মানেকশ নিয়াজিকে প্রস্তাব গ্রহণ ও কার্যকর করার জন্য ১৫ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটা থেকে পরদিন সকাল নয়টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। পরে এই মেয়াদ বেলা তিনটা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

১৬ ডিসেম্বর সকাল সোয়া নয়টার সময় মানেকশ ভারতের পূর্বাঞ্চল বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জেকবকে আত্মসমর্পণের দলিল ও আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত করার জন্য ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় আলোচনাকালে নিয়াজি দলিলে ‘আত্মসমর্পণ’ শব্দটির জায়গায় ‘যুদ্ধবিরতি’ লেখার প্রস্তাব দিলে জেকব তা বাতিল করে দেন। এরই মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মানসিকভাবে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিল। আত্মসমর্পণের দলিলসহ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন বিষয়ে নিয়াজির সম্মতি পেতে জেকবকে তাই বিশেষ বেগ পেতে হয়নি।

অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের জয়ী ও পরাজিত দুই পক্ষের মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিল স্বাক্ষরিত হয়। দেশের অন্যান্য জায়গায় স্থানীয়ভাবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হতে থাকে।


আরো দেখুন :
১০ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
৮ম শ্রেণি : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post