তৃতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
অধ্যায় ০৩
অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ
৪র্থ সপ্তাহ
অ্যাসাইনমেন্ট : ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ে একের পর একক ফুচকা খেলে
ফুচকার উপযোগ ক্রমেই কমতে থাকে’ -উক্তিটি পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখিত বিধির সাথে
সম্পর্কযুক্ত সূচি ও রেখার সাহায্যে বিশ্লেষণ -সকল ক্ষেত্রে বিধিটি
কার্যকর কিনা তা সম্পর্কে মতামত প্রদান।
নমুনা সমাধান
(ক) উপযােগ, মােট উপযােগ ও প্রান্তিক উপযােগ:
উপযােগ : ব্যক্তির বেঁচে থাকার জন্য অনেক দ্রব্য-সামগ্রীর প্রয়ােজন হয়। খাবার
সামগ্রী, পরিধানের সামগ্রীস অনেক কিছুরই প্রয়ােজন হয়। এগুলাে না থাকলে আমরা
স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি না। যেমন - খাদ্য, বস্ত্র, বইপত্র ডাক্তারের
সেবা প্রভৃতি। দ্রব্য ও সেবা ব্যক্তি মানুষের অভাব মেটায়। অতএব, অর্থনীতিতে
উপযােগ বলতে কোনাে দ্রব্যের বা সেবার দ্বারা ব্যক্তির অভাব পূরণের ক্ষমতাকে
বােঝানাে হয় উপযােগ একটি ব্যক্তিগত মানসিক ধারণা।
মােট উপযােগ : বাজারে গিয়ে ঋতু খাওয়ার জন্য একাধিক ফুচকা কিনতে চায়। একটি
নির্দিষ্ট সময়ে ১ম ফুচকার প্লেটটি কিনতে ঋতু যে টাকা ব্যয় কর ২য়, ৩য় বা
৪র্থ বার ফুচকার প্লেট ক্রয় করতে তা করবে না। কারণ ১ম ফুচকার প্লেট ভােগ করার
পর তার ফুচকা খাওয়ার অভাব অনেকটা পূরণ হয়ে যায়। ২য় বার ফুচকার প্রতি তার
আকাঙ্ক্ষা বা আগ্রহ কমে যায়। ৩য়, ৪র্থ ফুচকার প্লেটের সময় আরও কমবে এমন হতে
পারে। এমনও হতে পারে যে, ঋতু আর ফুচকা কিনবে না। কারণ ফুচকা খাওয়ার প্রতি সে
সময়ে তার আর কোনাে আগ্রহ থাকে না বা তার কাছে অতিরিক্ত ফুচকার উপযােগ শূন্য।
ফুচকার প্লেট ক্রয় করতে তাকে টাকা ব্যয় করতে হয়। ধরি, ১ম ফুচকার প্লেটটি ঋতু
কিনলো ৫ টাকায়, ২য় প্লেটটি কিনতে সে ৪ টাকা দিতে রাজি থাকবে, ৩য় প্লেটের
জন্য ৩ টাকা দিতে চায় এবং ৪র্থ প্লেটের জন্য ২ টাকা। এভাবে (৫+৪+৩+২)=১৪
টাকা দিয়ে ঋতু ৪ টি ফুচকার প্লেট কিনলো। টাকাকে উপযােগের মাপকাঠি ধরলে এখানে ৪
টি ফুচকার প্লেটের মােট উপযােগ ১৪। অতএব, কোনাে নির্দিষ্ট সময়ে একটি দ্রব্যের
বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত তৃপ্তির সমষ্টিকে মােট উপযােগ বলে। যেহেতু অতিরিক্ত
ফুচকার প্লেট থেকে ক্রমান্বয়ে কম তৃপ্তি পাওয়া যায়, সেহেতু ভােগের পরিমাণ
বাড়ার সাথে সাথে মােট উপযােগ ক্রমহ্রাসমান হারে বাড়ে।
প্রান্তিক উপযােগ : মনে করি ঋতু ৩টি ফুচকার প্লেট কিনেছে। এখন ঋতু আবার আরেকটি
ফুচকার প্লেট কিনলো। এই অতিরিক্ত ৪র্থ প্লেটটি হলাে প্রান্তিক ফুচকার প্লেট। এই
প্রান্তিক ফুচকার প্লেট থেকে ঋতু যে তৃপ্তি বা উপযােগ পেলো, তাই প্রান্তিক
উপযােগ। এই ফুচকার প্লেটি কিনতে ঋতু ২ টাকা ব্যয় করলে এখানে প্রান্তিক উপযােগ
হবে ২ টাকার সমান অর্থাৎ অতিরিক্ত এক একক দ্রব্য বা সেবা ভােগ করে যে অতিরিক্ত
উপার্জন বা তৃপ্তি পাওয়া যায়, তাকে প্রান্তিক উপযােগ বলে।
(খ) সূচি তৈরি:
সূচিার মাধ্যমে মোট উপযোগ ও প্রান্তিক উপযোগের উপস্থাপন
ফুচকার প্লেট একক | মোট উপযোগ (টাকায়) | প্রান্তিক উপযোগ (টাকায়) |
---|---|---|
১ম | ৫ | ৫ |
২য় | ৫+৪=৯ | ৪ |
৩য় | ৯+৩=১২ | ৩ |
৪র্থ | ১২+২=১৪ | ২ |
৫ম | ১৪+১=১৫ | ১ |
৬ষ্ঠ | ১৫+০=১৫ | ০ |
৭ম | ১৫-১=১৪ | -১ |
চিত্রে ঋতু ১ম ফুচকার প্লেট থেকে ৪ পরিমাণ উপযোগ তথা প্রান্তিক উপযোগ লাভ কর এবং ১ম ফুচকার প্লেটের জন্য ৫ টাকা দাম দেয়। ভোগ বাড়ার সাথে সাথে ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম প্লেট থেকে সে যথাক্রমে bby, c1, dd, এবং ce, পরিমাণ প্রান্তিক উপযোগ লাভ করে। অর্থাৎ ভোগ বাড়ার সাথে সাথে সে ২র ফুচকার প্লেটের জন্য ৪ টাকা, ৩য় প্লেটের জন্য ৩ টাকা, ৪র্থ প্লেটের জন্য ২ টাকা, ৫ম প্লেটের জন্য ১ টাকা দিতে রাজি থাকে। ৬ষ্ঠ ফুচকার প্লেটে প্রান্তিক উপযােগ শূন্য এবং ৭ম ফুচকার প্লেটে প্রান্তিক উপযােগ ঋণাত্মক অর্থাৎ -১.০০ টাকা। ভূমি অক্ষ রেখার f বিন্দু শূন্য প্রান্তিক উপযােগ নির্দেশ করে। ৭ম ফুচকার প্লেট প্রান্তিক উপযােগ ঋণাত্মক (-১ টাকা) বিধায় তা নির্দেশ করে। এখানে eedd,cc,<bb<aa,। এ থেকে বুঝা যায়, ফুচকার জন্য ভােগ বাড়ার সাথে সাথে ঋতুর কাছে অতিরিক্ত এককগুলাের উপযােগ ক্রমেই কমে যায়। এবার a, b, cj, di, ei, f এবং g। বিন্দুগুলাে যােগ তরে প্রান্তিক উপযােগ বা MU (Marginal Utility) রেখা পাওয়া যায়। রেখাটি ডান দিকে নিমগামী। এখানে লক্ষ করা যাচ্ছে, ভােগের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে প্রান্তিক উপযােগ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। সে কারণেই প্রান্তিক উপযােগ রেখাটি বাম থেকে ডান দিকে নিম্নগামী হয়। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। এই বিধির পূর্বশর্তগুলাে অনুপস্থিত থাকলে এই বিধি কার্যকর হবে না যেমন: ডাকটিকেট সংগ্রহ।
(ঘ) বিধিটির কার্যকারিতা : “একটি নির্দিষ্ট সময়ে একের পর এক ফুচকা খেলে ফুচকার উপযােগ ক্রমেই কমতে থাকে”- উক্তিটি উপযােগের ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগের বিধির অনুরূপ।
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগের বিধিটি হলাে : অন্যান্য অবস্থা স্থির রেখে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভােক্তা যদি একটি পণ্যের ভােগের পরিমাণ বাড়াতে তাহলে ঐ পণ্যের অতিরিক্ত এককগুলাে থেকে যে উপযােগ পায় তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।ক্রমহাসমান প্রান্তিক উপযােগ বিধির সকল ক্ষেত্রে প্রযােজ্য নয় অর্থাৎ এর কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর কার্যকারিতা সীমাবদ্ধতাগুলাে :
১। অপরিবর্তনীয়তা : নির্দিষ্ট সময় মেয়াদে ভােক্তার আয়, রুচি, অভ্যাস, পছন্দ ছিল বলে অনুমান করা হয়। এগুলাে কোনাে একটির পরিবর্তন হলে এ বিধি কার্যকর হয় না।
২। সময় ব্যবধান : সময় ব্যবধান মেনে নিলে এ বিধি কার্যকর হয় না। কারণ, দীর্ঘ সময় পরে মানুষের কোনাে দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ না কমে বাড়তে পারে।
৩। পরিমাণ : অভাবের তুলনায় দ্রব্য ভােগের পরিমাণ খুবই সামান্য হলে এ বিধি কার্যকর হয় না ।
৪। শৌখিন দ্রব্য : শৌখিন দ্রব্যের বেলায় এ বিধি কার্যকর হয় না। শখের কারণে দূপ্রাপ্য দ্রব্য সামগ্রী সংগ্রহ ও ভােগের ক্ষেত্রে প্রান্তিক উপযােগ ক্রমবর্ধমান হয়।
৫। বিলাসজাত দ্রব্য : সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির কারণে বিলাসজাত দ্রব্যের প্রান্তিক উপযােগ ক্রমশ বাড়ে।
৬। ভােক্তার চরিত্র : ভােক্তার চরিত্র অস্বাভাবিক হলে অর্থাৎ ভােক্তা যুক্তিশীল না হলে এ বিধি কার্যকর হয় না।
৭। দুষ্প্রাপ্য দ্রব্য : দুষ্প্রাপ্য দ্রব্যের বেলায় বিধিটি কার্যকর হয় না। কারণ, এসব দ্রব্যের বেলায় মানুষের আকাঙক্ষা বেশি থাকে।
উচ্চতর গণিত | পৌরনীতি ও নাগরিকতা | ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং | জীববিজ্ঞান | অর্থনীতি | হিসাব বিজ্ঞান | রসায়ন | ভূগোল ও পরিবেশ | ব্যবসায় উদ্যোগ | পদার্থ বিজ্ঞান | বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
অধ্যায় ০২
অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ
৩য় সপ্তাহ
অ্যাসাইনমেন্ট : সূর্যের আলো ভূমি, নদীর পানি এগুলোর কোনটি সম্পদ
বা সম্পদ নয় তা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ পূর্বক ব্যাখ্যা
প্রদান এবং উৎপত্তির বিত্তিতে সম্পদের শ্রেণিকরণ।
নমুনা সমাধান
(ক) অর্থনৈতিক সম্পদ : অর্থনীতিতে সম্পদ হলাে সেই সমস্ত জিনিস বা
দ্রব্য, যেগুলাে পেতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হয়। সংক্ষেপে আমরা এ
দ্রব্যগুলােকে অর্থনৈতিক দ্রব্যও বলে থাকি। যেমন- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, টিভি
ইত্যাদি দৃশ্যমান বস্তুগত সম্পদ এবং ডাক্তারের সেবা শিক্ষকের পাঠদান ইত্যাদি
অদৃশ্যমান বা অবস্তুগত সম্পদ। উল্লিখিত জিনিসগুলাে পেতে চাইলে অর্থ ব্যয়
করতে হবে। আমরা সবাই ‘সম্পদ’ শব্দটির সাথে কমবেশি পরিচিত। আমাদের প্রতিদিনের
আলােচনায় অনেকভাবে সম্পদ শব্দটি আসে। যেমন মি. সুজন অনেক সম্পদের মালিক।
একজন অর্থনীতিবিদের কাছে সব জিনিস সম্পদ নয়।
(খ) সম্পদের বৈশিষ্ট্য : কোনাে জিনিসকে যদি অর্থনীতিতে সম্পদ
বলতে হয় তবে তার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। বৈশিষ্টগুলাে হলাে :
১. উপযােগ : উপযােগ বলতে বােঝায় কোনাে দ্রব্যের মানুষের অভার
মেটানাের ক্ষমতা।কোনাে দর্য সম্পদ হতে হলে সেই দ্রব্যের উপযােগ সৃষ্টির
ক্ষমতা থাকতে হবে উপযােগ নেই এমন দ্রব্য বা সেবা মানুষ অর্থ দিয়ে কেনে না।
২. অপ্রাচুর্যতা : কোনাে দ্রব্য সম্পদ হতে হলে তার পরিমাণ ও
যােগান সীমিত থাকবে। যেমন : নদীর পানি, বাতাস প্রভৃতির যােগান। এগুলাে সম্পদ
নয়। তবে শ্রম ব্যবহার করে। পানিকে বােতলবন্দি করলে পানিসম্পদে পরিনত হয়।
অন্যদিকে জমি, গ্যাস, যন্ত্রপাতি - এগুলাে চাইলেই প্রচুর পাওয়া সম্ভব নয়।
অর্থাৎ এগুলাে আমাদের কাছে অপর্যাপ্ত দ্রব্য। এগুলােও সম্পদ।
৩. হস্তান্তরযােগ্য : সম্পদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলাে এর
হস্তান্তরযােগ্যতা। হস্তান্তরযােগ্য বলতে বােঝায় হাত বদল হওয়া। অর্থাৎ যে
দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায়, তা - ই হলাে সম্পদ। বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভাকে অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ বলা যাবে না। কারণ তার
প্রতিভাকে হস্তান্তর বা মালিকানা বদল করা সম্ভব নয়। আবার টিভির মালিকানা বদল
করা যায় বলে টিভি সম্পদ।
৪. বাহ্যিকতা : যে সমস্ত দ্রব্য মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ বােঝায়
তা অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ নয়। কেননা এর কোনাে বাহ্যিক অস্তিত্ব আমরা
উপলব্ধি করতে পারি না। যেমন : কোনাে ব্যক্তির কম্পিউটারের উপর বিশেষ অভিজ্ঞতা
বা জ্ঞান কিংবা কারাে শারীরিক সৌন্দর্য বা চারিত্রিক গুণাবলিকে সম্পদ বলা
যাবে না। তবে পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিতে নানাভাবে এগুলােকেও বিক্রয়যােগ্য
সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।
(গ) প্রদত্ত তিনটি বস্তু চিহ্নিতকরণ : সূর্যের আলাে, ভূমি ও নদীর
পানি এ তিনটির মধ্যে শুধুমাত্র ভূমি এবং নদীর পানি হচ্ছে সম্পদ। প্রকৃতির কাছ
থেকে পাওয়া যেসব দ্রব্য মানুষের প্রয়ােজন মেটায়, তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ
বলে। যেমন- ভূমি, বনভূমি, খনিজ সম্পদ, নদ - নদী ইত্যাদি। অর্থাৎ অর্থনৈতিক
ভাষায় ভূমি এবং নদীর হচ্ছে সম্পদ। আর সূর্যের আলাে কোনাে সম্পদ নয়।
আর সূর্যের আলাে কোনাে সম্পদ নয়।
(ঘ) সম্পদের শ্রেণিকরণ : উৎস বা উৎপত্তির দিক থেকে সম্পদ তিন
প্রকার। যথা :
১. প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া যেসব দ্রব্য
মানুষের প্রয়ােজন মেটায় , তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমন- ভূমি, বনভূমি,
খনিজ সম্পদ, নদ - নদী ইত্যাদি।
২. মানবিক সম্পদ : মানুষের বিভিন্ন প্রকার যােগ্যতা ও দক্ষতাকে
মানবিক সম্পদ বলা হয়। যেমন শারীরিক যােগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা,
সাংগাঠনিক ক্ষমতা ইত্যাদি মানবিক সম্পদ।
৩. উৎপাদিত সম্পদ : প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যে
সম্পদ সৃষ্টি হয় তাকে উৎপাদিত সম্পদ বলা হয়। যেমন কাচামাল, যন্ত্রপাতি,
কলকারখানা, যাতায়াত ও যােগাযােগব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,
স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি মানুষ তৈরি করে বলে এগুলাে উৎপাদিত সম্পদ।
উচ্চতর গণিত | পৌরনীতি ও নাগরিকতা | ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং | জীববিজ্ঞান | অর্থনীতি | হিসাব বিজ্ঞান | রসায়ন | ভূগোল ও পরিবেশ | ব্যবসায় উদ্যোগ | পদার্থ বিজ্ঞান | বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট
অধ্যায় ০১
অর্থনীতি পরিচয়
১ম সপ্তাহ
অ্যাসাইনমেন্ট : ‘বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত ও সরকারি উদ্যোগ
সম্মিলিতভাবে কাজ করে’ -উক্তিটিতে নির্দেশিত অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
উল্লেখপূর্বক বিভিন্ন অর্থ ব্যবস্থার তুলনামূলক সুবিধা ও অসুবিধা মূল্যায়ন।
নমুনা সমাধান
বিভিন্ন অর্থ ব্যবস্থার তুলনামূলক সুবিধা ও অসুবিধা মূল্যায়ন
‘বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত ও সরকারি উদ্যোগ সম্মিলিতভাবে কাজ করে’ –
উক্তিটিতে নির্দেশিত অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক বিভিন্ন অর্থ
ব্যবস্থার তুলনামূলক সুবিধা ও অসুবিধা মূল্যায়ন করা হলাে :
বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধারণা : মােট উৎপাদিত সম্পদের
অর্থমূল্য কীভাবে উৎপাদনের উপাদানগুলাের মধ্যে বণ্টন করা হয়, যা নির্ভর করে
দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা economic system এর উপর। যে ব্যবস্থা বা
কাঠামাের আওতায় উৎপাদনের উপাদানসমূহের মালিকানা নির্ধারিত হয় এবং উৎপাদন
প্রক্রিয়া উৎপাদিত সম্পপদের বণ্টন ও ভােগ প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে। এ ব্যবস্থা জনগণের অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং অর্থনীতি
বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত কাঠামাের সমন্বয়ে গড়ে উঠে।
বর্তমানে বিশ্বে চার ধরণের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর আছে :
- ধনতান্ত্রিক,
- সমাজতান্ত্রিক,
- মিশ্র ও
- ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়
উৎপাদনের উপাদানসমূহ ব্যক্তিমালিকানাধীন। উদ্যোগ গ্রহণে ব্যক্তি একক বা
গােষ্ঠীবদ্ধ স্বাধীনতার অধিকারী। অবাধ প্রতিযােগিতা, ভােক্তার স্বাধীনতা,
সর্বাধিক মুনাফা অর্জন, শ্রমিক শােষণ ইত্যাদি ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার
বৈশিষ্ট্য।
সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়
উৎপাদনের উপকরণসহ সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে
সরকারি নির্দেশনা, ভােক্তার স্বাধীনতার অভাব, অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল
উদ্দেশ্য সর্বাধিক মুনাফা অর্জন, আয় বণ্টন ইত্যাদি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক
ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য।
মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক
ব্যবস্থার পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বে আর একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিরাজমান। সেটি
হচ্ছে মিশ্র অর্থনীতি। এটি ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কিছু কিছু
বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠা একটি ব্যবস্থা।
ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : ইসলামী অর্থব্যবস্থা মানুষের জীবনের
সামগ্রিক আলােচনা করে। সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, মানুষের জন্য
প্রয়ােজনীয় সবরকম দ্রব্যসামগ্রী, জীবজন্তু, পরিবেশ ও বস্তুসমূহও সৃষ্টি
করেছেন। মানুষ সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এসকল বস্তুসামগ্রী ও পরিবেশ প্রকৃতি ব্যবহার
করে ধর্মানুমােদিতভাবে অধিকতর সম্পদ সৃষ্টি ও ভােগ করবে। এটাই ইসলামের বিধান।
মিশ্র অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য : মিশ্র অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ
হচ্ছে
১. সম্পদের মালিকানা : এ অর্থব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে।
এখানে সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানার পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানা বিদ্যমান। আবার
উৎপাদনের উপায়সমূহের ক্ষেত্রেও ব্যক্তি মালিকানার পাশাপাশি সরকারি মালিকানা
স্বীকৃত।
২. ব্যক্তিগত ও সরকারি খাতের সহাবস্থান : মিশ্র অর্থনীতিতে
ব্যক্তিগত ও সরকারি খাত পাশাপাশি অবস্থান করে। এখানে, ব্যক্তিগত ও সরকারি খাতের
শিল্প কারখানা একত্রে কাজ করে। এই অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত খাতে মুনাফা অর্জনই
লক্ষ্য তবে সরকারি খাতে সামাজিক কল্যাণকে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়। অনেক সময়
ব্যক্তিগত খাতের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বিধি নিষেধ আরােপ করা হয়।
৩. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : এখানে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কেন্দ্রীয়
পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের
উন্নয়ন পরিকল্পনাকে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় করা হয়।
৪. দাম ব্যবস্থা : এ অর্থব্যবস্থায় বাজার অর্থনীতির দাম ব্যবস্থাকে
অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ এখানে দ্রব্য বা সেবার দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা ও
যােগানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। তবে সরকার রাষ্ট্রীয় প্রয়ােজনে দাম ব্যবস্থা
নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৫. ব্যক্তি স্বাধীনতা : মিত্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষিত
হয়। এখানে ব্যক্তি কি পরিমাণ ভােগ করবে এবং উৎপাদক কি দ্রব্য উৎপাদন করবে সে
ক্ষেত্রে রাষ্ট্র খুব বেশি হস্তক্ষেপ করে না। তবে সমাজের স্বার্থে কোন কোন সময়
ভােগ বা বিপণনের ক্ষেত্রে সরকার বিধি - নিষেধ আরােপ করে।
৬. বণ্টন ব্যবস্থা : যেহেতু এ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা বিদ্যমান,
সেহেতু জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন এখানে নিশ্চিত করা কঠিন।
৭. মুদ্রাস্ফীতির উপস্থিতি : মিশ্র অর্থনীতিতে যেহেতু ব্যক্তি উদ্যোগ
স্বীকৃত এবং মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়, ভাই অনেক সময় অতি
উৎপাদন বা কম উৎপাদন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতিও দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন অর্থব্যবস্থার তুলনামূলক সুবিধা ও অসুবিধা মূল্যায়ন : নিম্নে
বিভিন্ন অর্থব্যবস্থার তুলনামূলক সুবিধা ও অসুবিধা আলােচনা করে মূল্যায়ন করা
হল :
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, বন্টন ও দাম প্রক্রিয়া এবং উৎপাদনের
উপায়সমূহ সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন। এখানে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে
উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার
মাধ্যমে এখানে ভােক্তা বা ফার্মের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা থাকে। এ কারণে এ
ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যে দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনে মুনাফা বেশি, ফার্মসমূহ
সেই পণ্য উৎপাদন করে। এভাবে কি প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়। আবার যে
প্রযুক্তিতে ব্যয় কম হবে বা উৎপাদন লাভজনক হবে সে পদ্ধতিতেই উৎপাদন হবে। এভাবে
কি প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়। আবার যে প্রযুক্তিতে ব্যয় কম হবে বা উৎপাদন
লাভজনক হবে সে পদ্ধতিতেই উৎপাদন হবে। যা কি ভাবে প্রশ্নটির সমাধান করে।
অন্যদিকে ভােক্তাদের সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে সামাজিক উৎপাদন তাদের মধ্যে
বণ্টিত হয়। এভাবে কার জন্য প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়। সমাজতান্ত্রিক
অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্রই সকল ক্ষমতার ধারক। এখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম যথা :
উৎপাদন, বন্টন, বিনিময় ও ভােগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান, এই
ধরনের অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্র কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার মৌলিক তিনটি সমস্যার
সমাধান করে দেয়। এখানে একদিকে ভােক্তা যেমন তার ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুযায়ী
দ্রব্য বা সেবা ভােগ করতে পারে অন্যদিকে উৎপাদকও দ্রব্যের চাহিদা ও সামর্থ্য
অনুসারে দ্রব্য উৎপাদন করে। এখানে কি উৎপাদিত হবে এবং কি পরিমাণ উৎপাদিত হবে তা
কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশিত হয়। একইভাবে, কিভাবে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত হবে বা
কোন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে তাও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
সবশেষে আয় ও সম্পদের বণ্টনও নির্ধারিত হয় কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক।
সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মুনাফা সর্বোচ্চকরণ নয় বরং সামাজিক
কল্যাণের জন্য সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকারি ও ব্যক্তিগত খাত পাশাপাশি অবস্থান করে। তাই এখানে
উৎপাদন , বিনিময় , বণ্টন ও ভােগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পাশাপাশি
সরকারি নিয়ন্ত্রণও বজায় থাকে। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ব্যক্তিগত ও সরকারি
খাতের ভূমিকা নির্দিষ্ট করা হয়। যেমন- গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহ সরকারি
নিয়ন্ত্রণে রেখে অন্যান্য খাতসমূহকে উদার বেসরকারিকরণ করা হয়। এ
অর্থব্যবস্থায় কি উৎপাদন হবে এবং কিভাবে উৎপাদন হবে এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত
গ্রহণে ও বাস্তবায়নে সরকারি ও ব্যক্তিগত খাত উভয়ের ভূমিকা বিদ্যমান। সম্পদের
মালিকানা ও ভােগের ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকলেও সম্পদ ও আয় বণ্টনের
ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণও বজায় থাকে। এখানে স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা ও
সরকারি নির্দেশে দামব্যবস্থা পরিচালিত হয়।
ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ইসলামের বিধি বিধান অনুযায়ী
পরিচালিত হয়। এখানে ভােক্তা তার পছন্দ অনুযায়ী যেকোন দ্রব্য ইচ্ছামত ভােগ
করতে পারে না। আবার উৎপাদন ও তার ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন করতে
পারে না। উৎপাদন ও ভােগের ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত বিধি অনুসরণ করে
চলতে হয়। এক্ষেত্রে হালাল - হারামের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয় | ইসলামী
অর্থব্যবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা যায় না। এখানে উৎপাদনকারী
বা বিক্রেতা শােষণমুক্ত দামে দর বিক্রি করবে যাতে তার ন্যায্য মুনাফা অর্জনের
পাশাপাশি ভােক্তা ঐ দ্রব্য ক্রয় করে তার উপযােগ সর্বোচ্চ করতে পারে। এভাবে
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদিত দ্রব্যের
উদ্বৃত্ত অংশ যাকাত ও সাদকাহ এর মাধ্যমে বণ্টন করে সামাজিক কল্যাণ ও বৈষম্য দূর
করা যায়।
যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি ভালাে তার স্বপক্ষে যুক্তি : উপরে উল্লেখিত
চারটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে আমার দৃষ্টিতে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
সবচেয়ে ভাল। আমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হলাে। এই অর্থনীতি
ব্যবস্থায় অন্য সকল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মিশ্রণ রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও
সরকারি উভয় মালিকানা থাকবে। তবে ব্যক্তিগত মালিকানা থাকলেও সেক্ষেত্রে সরকারের
হস্তক্ষেপ থাকবে এবং কোন পণ্য কী পরিমাণ উৎপাদন করতে হবে ও দাম কেমন হবে
এসবকিছুর ক্ষেত্রে সরকারি কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার
আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলাে ভােক্তার চাহিদা বা ইচ্ছানুযায়ী পণ্য উৎপাদন করা।
সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলাের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগীতা থাকা এই
অর্থনীতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত পরিকল্পনা
অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। সকল উন্নয়নশীল দেশে এরকম
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশেও এরকম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু
রয়েছে।