দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা (২য় পত্র)
৩য় সপ্তাহ
'বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পারস্পরিক সম্পর্ক
বিশ্লেষণ।'
নমুনা সমাধান
ব্যাংকের ধারণা : ব্যাংক শব্দটির আভিধানিক অর্থ কোন বস্তুবিশেষে স্তুপ,
কোষাগার, লম্বা টেবিল হিসেবেও এই শব্দটির বিস্তৃতি আছে।কোন কোন অর্থনীতিবিদদের
মতে প্রাচীন ল্যাটিন শব্দ Banco, Bangla, Banque, Bancus প্রভৃতি শব্দ থেকে
Bank শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। এই মতে অনুসারীদের যুক্তি অনুযায়ী শব্দের
ল্যাটিন অর্থ বেঞ্চ অথবা বসবার জন্য ব্যবহৃত লম্বা টেবিল যার সম্পর্কে ইতিহাসের
পাতায় সমর্থন পাওয়া যায়।
সাধারণ অর্থে, ব্যাংক এমন একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান যেটি এক পক্ষ
হতে আমানত হিসেবে অর্থ জমা রাখে এবং অন্য পক্ষকে আমানতি অর্থ ঋণ দেয়।ব্যাপক
অর্থে, ব্যাংক এমন একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান যার কাজ হচ্ছে আমানত
গ্রহণ, ঋণ দেওয়া, ঋণ ও অর্থ সৃষ্টি করা সহ বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা।
ব্যাংকের অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং বলে।
ব্যাংকের সংজ্ঞা বলতে গেলে আমরা বলতে পারি, 'এটি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান জনগণের
কাছ থেকে সুদের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ করে এবং মুনাফা অর্জনের নিমিত্তে
বিনিয়োগ করে এবং চাহিবামাত্র অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঞ্চয়কারীর কাছে
ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।'
ব্যাংক ব্যবসায়ের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য :
১) আর্থিকভাবে স্বচ্ছল : ব্যাংকিং কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য
আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রয়োজন। আর্থিক সচ্ছলতার অভাবের ব্যাংক দেউলিয়া হতে পারে
তাই আর্থিক স্বচ্ছলতা বা প্রাচুর্য ব্যাংকের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
২) নিরাপত্তার প্রতীক : ব্যাংক ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি
গ্রাহকের অর্থ ও ঋণ হিসাবে প্রদত্ত অর্থের নিরাপত্তা বিধান। নিরাপত্তা নিশ্চিত
করার জন্য ব্যাংকের ঋণ প্রদানের সময় ঋণগ্রহীতার আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সততার
বিচার করা এবং পর্যাপ্ত জামানত গ্রহণ করা হয়।
৩) বিশ্বস্ততার প্রতীক : দক্ষ ব্যাংক ব্যবসার পূর্বশর্ত হলো ব্যাংকের
উপর গ্রাহকের আস্থা। আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংক বিভিন্ন প্রকার সততা ও
বিশ্বস্ততার নীতি অবলম্বন করে থাকে। এ আস্থার বলে গ্রাহক তাদের অর্থ ও মূল্যবান
সম্পদ (লকার সেবা)ব্যাংকের কাছে জমা রাখে।
৪) সেবা বিক্রয় : ব্যাংকের গ্রাহকদের বহুবিধ সেবা প্রদান করা ব্যাংকের
একটি অন্যতম দায়িত্ব গ্রাহকদের পর্যাপ্ত বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা প্রদানের
মাধ্যমে ব্যাংকের উন্নতি সম্ভব।
৫) মূলধন গঠনের কারখানা : ব্যাংক ঋণ প্রদানের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প ও
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন বিনিয়োগ করে, যা একটি দেশের মোট উৎপাদন ও মূলধন
গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তাই ব্যাংককে মূলধন গঠনের কারখানা বলা হয়।
৬) অর্থনীতির চালিকাশক্তি : মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক
উন্নয়নে সাহায্য সহযোগিতা করা ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
৭) গোপনীয়তা রক্ষা : ব্যাংকের মক্কেলের আস্থা অর্জনের একটি উপায় তাদের
হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা করা। তাই গোপনীয়তা রক্ষা করা ব্যাংকের একটি অন্যতম
দায়িত্ব।
কার্যের ভিত্তিতে ব্যাংকের শ্রেণীবিভাগ:
১) কেন্দ্রীয় ব্যাংক : কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকের মুরুব্বি,
পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। কেন্দ্রীয়
ব্যাংক মুদ্রা বাজারকে সুসংগঠিত আকারে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে গঠিত।
সাধারণত মুদ্রা প্রচলন, অর্থসরবরাহ সহ ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতা ও
দায়িত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োজিত। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কেন্দ্রীয়
ব্যাংক।
২) বাণিজ্যিক ব্যাংক : মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে জনগণের সঞ্চিত অর্থ
আমানত হিসেবে গ্রহণ এবং সেই আমানত হতে ঋণ প্রদান কাজে প্রতিষ্টিত ব্যাংকে
বাণিজ্যিক ব্যাংক বলা হয়। যেমন ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।
৩) কৃষি ব্যাংক : কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষকগণকে বিভিন্ন
মেয়াদের ঋণ প্রদান সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে যে ব্যাংক কাজ
করে তাকে কৃষি ব্যাংক বলে। এটি একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
৪) শিল্প ব্যাংক : দেশের শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত
হয় তাকে শিল্প ব্যাংক বলে। যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ভূমিক্রয়, কারখানা নির্মাণের
জন্য শিল্প ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে। বিডিবিএল বাংলাদেশের এই ধরনের একটি
ব্যাংক।
৫) বিনিময় ব্যাংক : বৈদেশিক লেনদেন নিষ্পত্তির ও বৈদেশিক মুদ্রা
বিনিময়ের জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে বিনিময় ব্যাংক বলে।বৈদেশিক
মুদ্রা বিনিময়, রপ্তানি ইত্যাদি এই ব্যাংকের কাজ।
৬) বিনিয়োগ ব্যাংক : বিনিয়োগ ব্যাংক নবগঠিত শেয়ারের অবলেখক বা
underwriting, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান,
ব্রিজ ফিন্যান্স, ডিবেঞ্চার ফিন্যান্স সহ বিভিন্ন পরামর্শমূলক কার্যাদি সম্পাদন
করে থাকে।
৭) সঞ্চয়ী ব্যাংক : জনগণের অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় হিসেবে গ্রহণ ও মুনাফা
বা সুদ প্রদানের মাধ্যমে জনগণকে অধিক সঞ্চয়ে উৎসাহিত করে তোলাই এ ধরনের
ব্যাংকের উদ্দেশ্য। যে কোনো সময় এ ধরনের ব্যাংকে টাকা জমা এবং অর্থ উত্তোলনের
সুযোগ বা অন্যান্য নিয়মে এই ব্যাংকের সঞ্চয় পরিচালিত হয়।
৮) বন্ধকী ব্যাংক : ভূমি বন্ধক রেখে কৃষি শিল্পের প্রয়োজনে
দীর্ঘমেয়াদে যে ব্যাংক ঋণ প্রদান করে, তাকে বন্ধকী ব্যাংক বলে।
৯) পরিবহন : পরিবহন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে জেনে বিশেষায়িত ব্যাংক
প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে পরিবহন ব্যাংক বলা হয়। এ ব্যাংক যানবাহন নির্মাণ,
যন্ত্রাংশ আমদানি,আধুনিকরণ, খুচরা যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
১০) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক : ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত
করে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক আর্থিক
সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
১১) আমদানি- রপ্তানি ব্যাংক : আমদানি -রপ্তানি বাণিজ্যে সহায়তা
প্রদানের উদ্দেশ্যে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে আমদানি- রপ্তানি ব্যাংক বলা
হয়। মূলত আমদানির জন্য ঋণ সরবরাহ, প্রত্যয়নপত্র সুবিধা, আমদানি তদারকি
সহ বিভিন্ন উপদেশ মূলক কাজ করে থাকে।
১২) মার্চেন্ট ব্যাংক : মার্চেন্ট ব্যাংক, শেয়ারবাজারের
বিনিয়োগকারীদের মোট বিনিয়োগের উপর মার্জিন ঋণ প্রদান করে থাকে। এছাড়াও
দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়া, মক্কেলের সাথে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করা ও কোম্পানির
শেয়ার বা ঋণপত্র বিক্রি দায়িত্ব ও নেওয়া মার্চেন্ট ব্যাংকের কাজ।
সংগঠন কাঠামোর ভিত্তিতে ব্যাংকের শ্রেণীবিভাগ:
১) একমালিকানা ব্যাংক : একক উদ্যোগে ও পুঁজিতে এবং একক ব্যক্তি বা মালিক দ্বারা
পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাংককে একমালিকানা ব্যাংক বলা হয়।
২) অংশীদারি ব্যাংক : অংশীদারি ব্যবসার মতো অংশীদারি আইনের ভিত্তিতে যে
ব্যাংক গঠিত পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে অংশীদারি ব্যাংক বলে।
৩) যৌথ মূলধনী কোম্পানি ব্যাংক : কোম্পানি আইনের আওতায় যে ব্যাংকের মূলধন
গঠিত হয় এবং পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে যৌথ মূলধনী কোম্পানি
ব্যাংক বলা হয়।
৪) সমবায় ব্যাংক : সমবায়ের নীতি ও আইন অনুযায়ী গঠিত ও পরিচালিত ব্যাংককে
সমবায় ব্যাংক বলা হয়। সমবায় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো মুনাফা অর্জনের
উদ্দেশ্যে নয় বরং জনকল্যাণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। যেমন: মার্কেন্টাইল কো
অপারেটিভ ব্যাংক।
৫) রাষ্ট্রীয় মালিকানা : সম্পূর্ণভাবে সরকারি মালিকানায় ও পরিচালনায় যে
ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ব্যাংক বলা হয়। যেমন- সোনালী
ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশের প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পারস্পরিক
সম্পর্ক বিশ্লেষণ :
বর্তমান যুগে শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সকল দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে
ব্যাংকিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যাংকের সাহায্য ছাড়া বৃহদায়তন ব্যবসা
বাণিজ্য এখন কল্পনা করা যায় না। ব্যাংক শুধু ব্যবসায়ের চাকা সচল রাখেনা
উপরন্তু ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েও সাহায্য করে।তাই ব্যাংককে বিশ্ব বাণিজ্যের
দিক দর্শন যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। নিম্নে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং
ব্যবস্থার অবদান তুলে ধরা হলো :
১) সঞ্চয় সংগ্রহ মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ : ব্যাংক গুলো বিভিন্নভাবে
জনগণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে। ফলে সঞ্চিত অর্থ
মূলধনের পরিণত হয় এবং ব্যাংক কৃষি শিল্প প্রযুক্তি ও বাণিজ্য সহ বিভিন্ন খাতে
বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিশেষায়িত ব্যাংকের
পাশাপাশি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় দায়িত্ব পালন করে থাকে।
২) ঋণ প্রদান : ব্যাংক গুলো আমানতের একটি অংশ ক্ষুদ্র মাঝারি ও বড়
ব্যবসায়ীদের স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ও
বৈদেশিক বাণিজ্যে সহযোগিতা করে।
৩) বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি : ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের বিনিময়ের মাধ্যম
সৃষ্টি করে। এতে আর্থিক বিনিময়ের সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়। যেমন চেক, পে-অর্ডার,
ড্রাফট, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি হল বিনিময়ের মাধ্যম। এগুলো ব্যবহার করলে আর্থিক
বিনিময় শুধু সহজেই হয় না, ঝুঁকিমুক্ত থাকে।
৪) ব্যাংকের বিশেষায়ন : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের
ব্যাংক বহুমুখী বিশেষায়িত সেবা দিয়ে থাকে। যেমন -কৃষি ব্যাংক কৃষি খাতের
উন্নয়নে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয় এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক
সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে শিল্পের উন্নয়ন করে।
৫) বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ : ব্যাংক ছাড়া বৈদেশিক লেনদেন সম্ভব
নয়। বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিভিন্ন ব্যাংক নানাবিধ
সহযোগিতা প্রদান করে। যেমন - আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অর্থায়ন, আন্তর্জাতিক দেনা
পাওনা পরিশোধের সহযোগিতা করা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়, বৈদেশিক বাজার
বিশ্লেষণে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ প্রদান। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর Foreign
Exchange Division দায়িত্ব পালন করে।
৬) অর্থ স্থানান্তরের সহায়তা : আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থা এক স্থান থেকে
অন্য স্থানে নিরাপদে ও দ্রুত অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে লেনদেন ও
ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করেছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং এটি আরো সহজ করে
দিয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেন করেছে সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত।
৭) কৃষি উন্নয়ন : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। একসময় কৃষির উৎপাদন হতো
শুধু পারিবারিক ভোগের জন্য। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদন শুরু
হয়েছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্যে
স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ব্যাংক কৃষকদের বিভিন্ন মেয়াদী ঋণ দিয়ে
থাকে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একটি বিশেষায়িত ব্যাংক।
৮) শিল্প উন্নয়ন : বাংলাদেশের ব্যাংক গুলো শিল্প খাতে ঋণ দানের মাধ্যমে
অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নয়ন
ব্যাংক উৎপাদনশীল খাতে দিয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
৯) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : ব্যাংক ব্যবসা প্রসারের ফলে উৎপাদনশীল
খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ছে। এতে দেশের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১০) জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন : ব্যাংক বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ফলে মাথাপিছু আয় বেড়ে যায় এবং জীবনযাত্রার মানের
উন্নয়ন ঘটে। এছাড়াও ব্যাংক ভোগ্য পণ্যের জন্য ঋণ সহায়তা দিয়ে মানুষের
জীবনের গুণগত মান উন্নত করে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক
গুলো বিশেষ ভূমিকা রাখছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ের উন্নতির
পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি | ইসলাম শিক্ষা | পদার্থবিজ্ঞান | ইতিহাস | ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা | জীববিজ্ঞান | উচ্চতর গণিত | সমাজবিজ্ঞান | ভূগোল | ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা | উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন | রসায়ন | অর্থনীতি | পৌরনীতি ও সুশাসন | যুক্তিবিদ্যা | হিসাব বিজ্ঞান | সমাজকর্ম
প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট
ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা (১ম পত্র)
২য় সপ্তাহ
নির্দেশনা :
সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিরূপণে-
- অর্থায়নের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে।
- অর্থায়নের কার্যাবলির বর্ণনা দিতে হবে।
- অর্থায়নের নীতিসমূহের বর্ণনা করতে হবে।
- অর্থায়নের লক্ষ্য বর্ণনা করতে হবে।
নমুনা সমাধান
(ক) অর্থায়নের ধারণা : পরিকল্পনা প্রণয়ন তহবিলের উৎস নির্ধারণ তহবিল
সংগ্রহ এবং সংগ্রহীত তহবিল সুষ্ঠুভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে বন্টন সংক্রান্ত
কার্যাবলী সমষ্টিকে অর্থায়ন বলা হয়। মূলত ব্যবসায়ের কোন কাজ কিভাবে সম্পন্ন
করা হবে, কোথা থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হবে এবং কোথায় বন্টন করা হবে তার
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা ব্যবস্থাপনাকে অর্থায়ন বলা হয়।ব্যবসায়ে কি পরিমাণ
অর্থ কি কাজের জন্য প্রয়োজন অর্থ কোথা থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং কোথায়
বিনিয়োগ করা হবে সে সক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অর্থায়নের কাজ। অর্থায়ন মূলত
দুই প্রকার। সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়ন সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে ধারণা বা
বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলো:
সরকারি অর্থায়ন : একটি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন
আর্থিক নীতি ও আর্থিক পরিকল্পনা করা, আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ, সম্পদের সুষ্ঠু
বন্টন, মূল্যস্তরের ভারসাম্য রাখা ইত্যাদি সরকারি অর্থসংস্থানের মূল উদ্দেশ্য।
সরকারের বিভিন্ন আর্থিক দপ্তরসমূহ বা প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারি অর্থায়নের
নীতিমালা প্রণয়ন ও পরিকল্পনার দিকটির দায়িত্ব পালন করে, নিয়ন্ত্রণ ও
পরিচালনা করেন। সরকারি অর্থায়নে মূল উদ্দেশ্য জনকল্যাণ ও সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন
মুনাফা অর্জন নয়। রাষ্ট্রকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ
শত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করা, বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, জনকল্যাণ, উন্নয়ন এবং
বিভিন্ন খাতে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারকে বহুল অর্থ ব্যয় করতে হয় আর এই
জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানই হল সরকারি অর্থায়ন। এ অর্থায়নের জন্য বা অর্থ
সংস্থানের জন্য সরকারকে তহবিল সংগ্রহ করতে হয়। মূলত সরকার বিভিন্ন শুল্ক,
রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে যেমন আবগারি শুল্ক আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ইত্যাদি অর্থ
সংস্থান করে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশীয় ও বৈদেশিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে
ঋণ সংগ্রহ করেন।
বেসরকারি অর্থায়ন : সরকারি বা রাষ্ট্রীয় দপ্তরসমূহ ছাড়া যে সকল
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন ও আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন
তাকে বলা হয়। বেসরকারি অর্থায়ন মূলত তিন প্রকার যথা ব্যক্তিগত অর্থায়ন
ব্যবসায় অর্থায়ন ও ব্যবসায় অর্থায়ন। অর্থনীতিতে মূলত বেসরকারি অর্থায়ন
বলতে ব্যবসায় অর্থায়ন বা যৌথ মূলধনী ব্যবসায় অর্থায়ন কে বোঝায়। যৌথ মূলধনী
ব্যবসায় মূলত সংরক্ষিত মূলধন, শেয়ার বিক্রয় ও ঋণ সংগ্রহের মাধ্যমে অর্থ বা
তহবিল সংগ্রহ করে থাকে।
(খ) যৌথ মূলধনী কোম্পানির অর্থায়ন কার্যাবলী:
যে কোন প্রতিষ্ঠান গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কিছু মৌলিক কাজ সম্পন্ন
করতে হয়। নিচে তার বর্ণনা করা হলো:
১) তহবিল সংগ্রহ : অর্থায়নের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে সম্ভাব্য উৎস
হতে প্রয়োজন অনুসারে অর্থ সংগ্রহ করা। কোন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হবে তা
চিহ্নিত করার পর তহবিল সংগ্রহের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। তুলনামূলক কম
খরচ যুক্ত উৎস হতে তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।কেননা মূলধন খরচ কম হলে ব্যবসায়ী
মুনাফার পরিমাণ বেশি করার সুযোগ থাকে এবং ঝুঁকির পরিমাণ কম হবে।
২) মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত : প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য
সম্ভাব্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের পর অর্থায়নের কাজ হচ্ছে সংগ্রহীত তহবিল
বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা। প্রকল্পের জন্য কি পরিমাণ মূলধন এর প্রয়োজন
প্রকল্পের ব্যাক্তি এবং প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত আই এর পরিমাণ ইত্যাদি বিবেচনা
করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
৩) স্বল্পমেয়াদি সম্পদের ব্যবস্থাপনা : একটি প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদে
মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রয়োজন হয়।ব্যবসায়ের দৈনন্দিন কাজ
নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সম্পন্নের জন্য পর্যাপ্ত চলতি মূলধনের প্রয়োজন হয়।তাছাড়া
ব্যবসায় মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সুনাম বজায় রাখার জন্য চলতি মূলধনের
প্রয়োজন পড়ে। ব্যবসায়ী নগদ অর্থ থাকলে দায় পরিশোধের অক্ষমতা সংক্রান্ত
ঝুঁকি তথা আর্থিক ঝুঁকি ও পরিচালনা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয় না। এর ফলে
প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জন ক্ষমতা বজায় থাকে।পর্যাপ্ত নগদ অর্থ সংরক্ষন,
কাঁচামাল সংগ্রহ ইত্যাদি চলতি সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত।
৪) তহবিল বন্টন : সবচেয়ে মূলধন খরচ কম এমন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করার
পর উক্ত তহবিল যথাযথভাবে বন্টন করার পদক্ষেপ নিতে হয়। কোন প্রকল্পে বিনিয়োগ
করলে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব চিহ্নিত করা অর্থায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
অর্জিত মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের পর্যাপ্ত লভ্যাংশ, পাওনাদারদের সুদ,
সরকারকে কর প্রদান করতে হয়।
সুতরাং প্রতিষ্ঠানের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য, সফলতা আনয়নের জন্য
উল্লেখিত কার্যাবলী সম্পন্ন করতে হয়।
(গ) যৌথ মূলধনী কোম্পানির অর্থায়নের নীতিসমূহ :
১) তারল্য ও মুনাফা নীতি : এই নীতির মূল উদ্দেশ্য তারল্য ও মুনাফার
মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। তারল্য ও মুনাফা নীতি অনুসারে তারল্য ও মুনাফার
মধ্যে ঋণাত্মক বা বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ তারল্য যত কম, মুনাফার
পরিমাণ তত বেশি আবার তারল্যের পরিমাণ যত বেশি হবে মুনাফার পরিমাণ তত কম।
২) ঝুঁকি ও মুনাফা নীতি : এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ঝুঁকি ও মুনাফার মধ্যে
সমমুখী সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা। ঝুঁকি ও মুনাফার নীতির আলোচ্য বিষয় হল
ঝুঁকি ও মুনাফার মধ্যে ধনাত্মক বা সম্পর্ক বিদ্যমান। ঝুঁকি যত বেশি হবে মুনাফা
তত বেশি হবে, অন্যদিকে ঝুঁকি যত কম মুনাফা তত কম।
৩) পোর্টফোলিও বৈচিত্রায়ন নীতি : একটি প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে একাধিক
প্রকল্পে বিনিয়োগ করাই হল পোর্টফোলিও। পোর্টফোলিও বৈচিত্রায়ন নীতি হল ঝুঁকি
সর্বনিম্নকরনের করার উদ্দেশ্যে একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করার নীতি। এই নীতির
মূল উদ্দেশ্য হলো ঝুঁকি সর্বনিম্ন করা।
(ঘ) যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের অর্থায়নের লক্ষ্যসমূহ:
১) মুনাফা সর্বোচ্চকরণ : মুনাফা সর্বোচ্চকরণ ব্যবসায়ের স্বল্পমেয়াদী
লক্ষ্য। মুনাফা সর্বোচ্চকরণ বলতে কোন ফার্ম বা ব্যবসায়ের মুনাফা বাড়ানো কে
বোঝায়। মুনাফাকে আর্থিক দক্ষতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত
বিক্রি বাড়িয়ে, খরচ কমিয়ে,চাহিদা সৃষ্টি করে, মূল্য বাড়িয়ে মুনাফা সর্বাধিকরণ
করা হয়। এক্ষেত্রে শেয়ার প্রতি আয়কে মুনাফা সর্বোচ্চকরণের মাপকাঠি হিসেবে
ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ মুনাফা সর্বাধিকরণ হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার
প্রতি আয় সর্বাধিকরণ।
২) সম্পদ সর্বাধিকরণ:
সম্পদ সর্বাধিকরণ ব্যবসায়ের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য। আর্থিক কাজ ধারা
প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মূল্য বাড়লে তাকে সম্পদ সর্বাধিকরণ বলা হয়।
শেয়ারহোল্ডারদের সম্পদ সর্বাধিকরণ প্রতিষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য।
ফার্মের মালিকদের সম্পদের পরিমাণ নির্ণয় করা হয় শেয়ার এর বর্তমান বাজার
মূল্য দ্বারা। প্রকৃতপক্ষে সম্পদ সর্বাধিকরণ এর বিপরীত ধারণা হলো মুনাফা
সর্বাধিকরণ। সম্পদের সর্বাধিকরণের মাধ্যমে মুনাফা সর্বাধিকরণের সীমাবদ্ধতা দূর
হয়।
সম্পদ = প্রতি শেয়ারের দাম × শেয়ারের সংখ্যা।
এক্ষেত্রে শেয়ারের মূল্য, লভ্যাংশ, ঝুঁকির পরিমাণ, নগদ প্রবাহ, অর্থের সময়
মূল্য ইত্যাদি বিশ্লেষণ করা হয়।
সংক্ষেপে বলা যায় যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের এই দুটি লক্ষ্য মুনাফা সর্বাধিকরণ,
সম্পদ সর্বাধিকরণের স্বার্থ ভিন্ন মুনাফা সর্বাধিকরণ এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র
মালিকের স্বার্থ বিবেচনা করা হয় কিন্তু সম্পদ সর্বাধিকরণ এর ক্ষেত্রে
মালিকপক্ষের পাশাপাশি দেশ ও প্রতিষ্ঠানের অন্যান্যদের স্বার্থ বিবেচনা করা হয়।
Tnx ❤️❤️❤️
ReplyDelete