↬ মানব উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি
↬ বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে তথ্যপ্রযুক্তি
ভূমিকা : ‘দারিদ্র্য’ এমন একটি অর্থনৈতিক অবস্থা, যখন একজন মানুষ তার
জীবনযাত্রায় মৌল-মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, বা স্বল্প আয়ের কারণে
জীবনযাত্রার নূন্যতম মান অর্জন করতে পারে না। আর বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে
মানুষ যা আবিষ্কার করে চলছে-তা-ই প্রযুক্তি। মানুষ নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেরর
জন্য তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি সৃস্টি করছে। প্রযুক্তির কল্যাণে
মানুষের কাছে সবকিছু সহজ হয়ে আসছে। চাকা আবিষ্কার, বিদ্যুৎ আবিষ্কার, টেলিফোন,
টেলিভিশন, জেনারেটর, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রযুক্তি
মানবজীবনকে করে তুলেছে আরামদায়ক ও আধুনিক। প্রযুক্তির কল্যাণেই মানুষ আজ নতুনকে
স্বাগত জানাতে অভ্যস্ত হয়েছে। দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ
ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ মানুষকে সীমাহীন
সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে মানুষ সুখভোগের উপায়
উদ্ভাবনে, উৎপাদনে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই অগ্রগতি উন্নয়নশীল দেশের
দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশে দারিদ্যের স্বরুপ : বাংলাদেশ দারিদ্রপীড়িত একটি উন্নয়নশীল দেশ।
দেশটি এখনো অতিরিক্ত জনসংখ্যার মূল - মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে
পারে নি। বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে
গৃহীত সকল নীতি পরিকল্পনায় দারিদ্র্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং তথ্য ও প্রযুক্তিগত সামান্য উন্নয়ন হলেও তা
মানুষের মৌল-মানবিক চাহিদা পূরণে এবং উন্নত জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব
বিস্তার করতে পারে নি। তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে দারিদ্র্য
নিচে বসবাস করে। যার ফলে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
দারিদ্রের প্রভাব : দারিদ্র্য মানবজীবনের জন্য অভিশাপস্বরূপ। একটি দেশের
আর্থ-সামাজিক জীবনে দারিদ্র্য ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। যেমন —
- দারিদ্রের কারণে দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, ইত্যাদি মৌল-মানবিক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
- দারিদ্রের কারণে কৃষি উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ব্যাহত হচ্ছে।
- স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতা বাড়ছে।
- শিক্ষাক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নয়নে ব্যর্থ।
- সামাজিক নিরাপত্তা ও অনিশ্চিয়তা বৃদ্ধি।
- পারিবারিক ভাঙন ও কলহ বৃদ্ধি।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
মানবজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব : আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার
দারিদ্র্য হ্রাসে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। প্রযুক্তি দারিদ্রের
দুষ্টচক্রের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টি আদিম মানুষের জীবনের
প্রতি লক্ষ করলে আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পারি। এককালে মানুষের পরিধানের বস্ত্র
ছিল না। তারা গাছের পাতা, ছাল-বাকল, পশুর চামড়া ইত্যাদি পরিধান করত। তারা আগুনের
ব্যবহার জানার আগে সবকিছু কাঁচায় খেত। সময়ের বিবর্তনে আর প্রযুক্তির প্রভাবে
মানুষ বর্তমান অবস্থানে উপনীত হয়েছে। মানুষ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও
তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছে। কর্মক্ষেত্রে মানসিক শ্রমের প্রয়োগ
বাড়ছে। প্রযুক্তির মানবজীবনকে ভোগ ও উপভোগের সমস্ত উপাদানের জোগান দিয়ে পৃথিবীকে
ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত করার চেষ্টা লাগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে কর্মস্পৃহা,
মানবীয়বোধ এবং সময়ের যথার্থ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলছে। মানুষের জীবনে
সুখ-শান্তির জন্য তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলছে। প্রযুক্তির প্রভাবেই
সমগ্র বিশ্ব আজ মানুষের মুঠোয়।
জীবনমান উন্নয়নে প্রযুক্তি : তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে মানবজীবনে
ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করছে। মানবজীবনের বিভিন্ন শাখায় বিজ্ঞান অবদান রেখে
চলছে। প্রযুক্তির কল্যাণে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। জমি চাষ, ফসল মাড়ায়
প্রভৃতি কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করে
সেচ কাজ সমাধান করছে। প্রযুক্তির কল্যাণে অধিক ফসল উৎপাদন করে মানুষের প্রধান
চাহিদা খাদ্য - চাহিদা মেটানো হচ্ছে। জল, স্থল, আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার
বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ রেডিও, টেলিভিশন, ফ্যাক্স, ই-মেইলের সাহায্য সারা
বিশ্বের খবর যেকোনো মুহুর্তে পেয়ে যেতে পারে। ইন্টারনেটের সাহায্যে প্রয়োজনীয়
তথ্যাদি লেন-দেন করা যাচ্ছে কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে। এভাবে প্রযুক্তি বিশ্বের
যেকোনো প্রান্তেই মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিচ্ছে পুরো পৃথিবীকে। চিকিৎসাক্ষেত্রে
প্রযুক্তি বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন
যন্ত্রপাতির, উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে। ফাইবার অপটিকলস ব্যবহারের ফলে মানবদেহের
অভ্যন্তরস্থ ফুসফুস, পাকস্থলীর, বৃহদন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত, অস্থিগ্রন্থি, শিরা,
ধমনি ইত্যাদির অবস্থা যন্ত্রের সাহায্য অবলোকন করে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা
যায়। শিক্ষার নানা উপকরণ এবং রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম
পরিচালিত হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ অল্প সময়ে অধিক কাজ সম্পন্ন
করছে। কর্মদক্ষতা, নিয়ন্ত্রণশক্তি বহু গুণ বেড়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও অগ্রগতির সাথে সাথে মানবজীবন হয়ে উঠেছে আরও উন্নত আরো
আধুনিক।
দারিদ্র্যবিমোচনে তথ্যপ্রযুক্তি : ‘দারিদ্র্য’ মানুষকে যে ধরনের সমস্যায়
ফেলে, তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারেত ফলে তা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি
উন্নত ও গবেষণাধর্মী উৎপাদনমুখি তথ্য সরবরাহ করে এ দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে
প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ উভয় প্রকার সহযোগিতা প্রদান করছে। ফলে দেশের কৃষি উৎপাদন
বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে করে অধিক জনসংখ্যার জন্য অতিরিক্ত খাদ্যের জোগান বাড়ছে। আর
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে তা দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে
যাচ্ছে।ফলে দারিদ্র্যের হার কমছে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা
পালন করছে বিশ্বের দেশগুলোর বিভিন্ন উন্নত শিক্ষা-কার্যক্রম ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের
সাথে নব নব পরিচয় ঘটিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি।দারিদ্র্যবিমোচনে বিভিন্ন পদক্ষেপ,
চিন্তা তুলে ধরা হচ্ছে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে। আর তা অতিদ্রুত চলে যাচ্ছে সাধারণ
মানুষের কাছে। সাধারণ মানুষ তা দেখে শিক্ষা নিয়ে আত্নসচেতন হচ্ছে এবং নিজেদেরকে
দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য তৎপর হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে যথাযথ
কর্তৃপক্ষ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সংবাদ ও তথ্য পাই। ফলে প্রাকৃতিক
দুর্যোগের হাত থেকে মানুষের জানমাল রক্ষা পায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মানুষের
প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। তাতে অনেক সচ্ছল ব্যাক্তি ও সব হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে
পড়ে। এভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ দারিদ্রের অভিশাপে অভিশপ্ত হয়। এই
অভিশাপের হাত থেকে তথ্যপ্রযুক্তি মানুষকে অনেকাংশে নিরাপদ রাখে। তাতে করে
জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ আত্ননির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ পায়। আর জাতীয়ভাবে ঐ সমস্ত
ক্ষতিগ্রস্ত লোকের জন্য যে পরিমাণ সাহায্যের প্রয়োজন হতো তা উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা
সম্ভব নয়। এভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে দারিদ্র্যবিমোচনে কাজ করে।
উন্নত চিকিৎসা
সেবাদানে তথ্যপ্রযুক্তি বৈপ্লবিক ভূমিকায় অবতীর্ণ। তথ্যগত সুবিধার কারণে মানুষ
নানারকম জটিল রোগের পরামর্শ প্রদান করা হয়। মানুষ তা থেকে সুবিধা লাভ করে শারীরিক
ও মানসিক সুস্থ থাকে। তারা শ্রম ও সাধনার মাধ্যমে নিজেদের অভাব - অনটন দূর করার
জন্য উৎপাদনমুখি কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হয়। এভাবে দারিদ্রতা হ্রাস পায়। মানসিক
অস্থিরতা মানুষের কর্মস্পৃহা কমিয়ে দেয়। মন ভালো না থাকলে কেউ কোনো কাজ মনোযোগী
হতে পারে না। তাই মনের সুস্থতা একান্ত জরুরি। তথ্যপ্রযুক্তি চিত্তবিনোদনের
ব্যবস্থা করে মানুষকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখে, মনকে প্রফুল্ল করে। মানুষ তখন পুর্ণ
উদ্যমে যায়। এভাবে তথ্যপ্রযুক্তি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করে দারিদ্র্যবিমোচনের
ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর
ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচনে কাজ করে।
১. উৎপাদন বৃদ্ধিতে উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি, বীজ, কীটনাশক, ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য
সরবরাহ করে।
২. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার চলচ্চিত্র ও তথ্য প্রদান করে।
৩. শিশুমৃত্যু-মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস বিষয়ক পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করে।
৪. সুস্থ-সবল জাতি গঠনে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।
৫. প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনার মাধ্যমে কলকারখানা স্থাপন ও তাতে শ্রমের ব্যবস্থা
করে বেকারত্ব হ্রাসের মাধ্যমে।
৬. জনসংখ্যার বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যচিত্র প্রকাশ ও প্রদর্শন এবং
সরবরাহ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে জনসংখ্যা রোধ করা করে।
৭. প্রাপ্ত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকল্প বিশ্বের নানা দেশের মানুষের
সম্পদের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে।
৮. কর্মমুখি ও যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে
তোলার নানা যুক্তি ও তথ্য সরবরাহ করে।
৯. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নত শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আবিষ্কার, বিভিন্ন
প্রকার গ্রন্থাদি ইত্যাদির সাথে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ পরিচয় ঘটিয়ে আত্ননির্ভরশীল
জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার অনুপ্রেরণা জোগায়।
১০. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভবিষ্যত পরিবেশ বিপন্নের পরিণতি ইত্যাদি সম্পর্কে
তথ্য ও খবরাখবর সরবরাহ করে।
১১. বিশ্বের ধনী ব্যাক্তিদের জীবনের নানা ঘাত - প্রতিঘাত পেরিয়ে উত্থানের বিষয়াদি
নিয়ে তথ্যচিত্র সরবরাহ করে আশাহতদে জীবন - যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে উত্তীর্ণের জন্য
অনুপ্রেরণা দান করে।
১২. মানুষের মধ্যে মানবীয় বোধ, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয়ে মহান ব্যাক্তিদের আদর্শ ও
তাদের সংসারধর্ম, দারিদ্র্য উত্তীর্ণের বিষয় সম্পর্কে অভিহিত করে
দারিদ্র্যবিমোচনে আত্নশক্তি অর্জনে সহায়তা দান করে।
তথ্যপ্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব : প্রযুক্তির কল্যাণে মানবসভ্যতা এগিয়ে
গিয়েছে সত্যি, কিন্তু এটি শুধু মানুষের উপকারই সাধন করে নি, অনেক অপকারও করে। ভুল
তথ্য সরবরাহ তথ্যপ্রযুক্তির একটি নেতিবাচক প্রভাব। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রসংবলিত
বিভিন্ন শিল্প-কারখানা নানা ভাবে পরিবেশ নষ্ট করে চলছে। সহজেই তথ্য আদান
-প্রদানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হচ্ছে। ঘরে বসেই তথ্যপ্রযুক্তির
মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধচক্র বিভিন্ন দেশে যুদ্ধবিগ্রহ লাগিয়ে দিয়ে বিশ্বের শান্তি
নষ্ট করছে। বৈজ্ঞানিক ভয়াবহ আবিষ্কারের তথ্য সরবরাহ করে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়ে
মানুষকে বিভ্রান্ত ও আতংকগ্রস্থ করে তুলছে। প্রযুক্তির এ ধরনের অপব্যবহারের জন্য
আমরা বিজ্ঞানকে দায়ী করতে পারি না। এর জন্য প্রযুক্তির অপ্রয়োগকারী মানুষরাই
দায়ী।
উপসংহার : তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার মানুষকে দারিদ্রের অভিশাপ থেকে
মুক্তি দিতে পারে। কারণ আগামীর পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে তথ্যপ্রযুক্তি। সাইবার
আক্রমণ, মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট এবং নতুন মোবাইল আ্যপ্লিকেশনের হাত ধরে অনলাইন কাজ
আজ বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। আসছে ২০২০ সালে এটি হবে
অপরিহার্য। অর্থাৎ বিশ্বের অধিকাংশ নাগরিকের কাছেই পৌঁছে যাবে ইন্টারনেটের সুফল।
ব্যবসায়, বিপণন এবং ভার্চুয়াল যোগাযোগ — এ তিন পথই এখন তথ্যপ্রযুক্তির প্রধান
প্রযুক্তি ইন্টারনেটের দখলে। পরবর্তী সময়ে এই তথ্যপ্রযুক্তিই বিশ্বের পুরো
কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করবে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ততথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক
উন্নতির মাধ্যমেই বিশ্বের অনুন্নত জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আত্ননির্ভরতা অর্জন করবে। আর
আত্ননির্ভরতা এলে আমাদের দেশেও দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব হবে। বর্তমান বিশ্বের ১৭০
কোটি সক্রিয় ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে অধিকাংশই সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন।
আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি, উদ্যোগ ও পরিকল্পনার সমন্বয়
সাধন করে বিশ্বের সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।