দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
যুক্তিবিদ্যা (২য় পত্র)
৩য় সপ্তাহ
ভূমিকা : যুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে যথাযথ যুক্তি প্রয়ােগের কৌশল এবং বৈধ যুক্তি
থেকে অবৈধ যুক্তি পার্থক্য করণের নিয়ম ও পদ্ধতি শিক্ষা দেয়। এ জটিল বস্তুজগতে
বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন চিন্তাশীল প্রাণী হিসেবে মানুষের পথ চলার শুরু থেকেই
যুক্তিযুক্ত চিন্তার সূত্রপাত হয়েছে। জীবন ধারণ ও জীবন বিকাশের বিভিন্ন
পর্যায়ে বিবিধ প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রামরত অবস্থায় যখনই মানুষ সমস্যার
মুখােমুখি হয়েছে তখনই সে ব্যবহার করেছে তার যৌক্তিক চিন্তা। এ জটিল বস্তুজগতে
বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন চিন্তাশীল প্রাণী হিসেবে মানুষের পথ চলার শুরু থেকেই
যুক্তিযুক্ত চিন্তার সূত্রপাত হয়েছে। জীবন ধারণ ও জীবন বিকাশের বিভিন্ন
পর্যায়ে বিবিধ প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রামরত অবস্থায় যখনই মানুষ সমস্যার
মুখখামুখি হয়েছে তখনই সে ব্যবহার করেছে তার যৌক্তিক চিন্তা। সুশৃংখল ও
পদ্ধতিগত যৌক্তিক চিন্তা হলাে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান। বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞান
হলাে যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান।
ক. যুক্তিবিদ্যার ধারণা : মানব জ্ঞানের প্রাচীনতম শাখাগুলাের একটি হলাে
যুক্তিবিদ্যা। পদ্ধতিগতভাবে এরিস্টটল থেকে যাত্রা শুরু করে গাণিতিক
যুক্তিবিদ্যা ও অতিসাম্প্রতিক কালের কম্পিউটার লজিক পর্যন্ত এর পরিসর বিস্তৃত।
যুক্তিবিদ্যা প্রতিটি বিষয়কে নির্ভুল, পদ্ধতিগত ও বাস্তবসম্মত হতে সহায়তা
করে। যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Logic শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে গ্রিক শব্দ
Logos হতে।
Logos অর্থ হলাে চিন্তা বা শব্দ বা ভাষা। তাই উৎপত্তিগতভাবে যুক্তিবিদ্যাকে
ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার আলােচনা বলা হয়। আক্ষরিক অর্থে বাংলায় যুক্তিবিদ্যা
বলতে আমরা বুঝি যুক্তির বিদ্যা বা যুক্তিসম্পর্কীয় বিজ্ঞান। অর্থাৎ যে বিষয়
পড়াশুনা করলে যুক্তি ও যুক্তির নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায় তাই
যুক্তিবিদ্যা।
এরিস্টটলের যুক্তিবিদ্যার ধারণা মতে যুক্তিবিদ্যা হলাে একটি উপকরণ বা কৌশল যাকে
যে কোনাে জ্ঞানের জন্য ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, যে প্রক্রিয়ায় এক বা
একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্ত হিসেবে একটি যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়
সে প্রক্রিয়ার আলােচনাই হলাে যুক্তিবিদ্যা। তিনি মনে করেন যে, নিরপেক্ষ
যুক্তিবাক্যই হলাে সবচেয়ে মৌলিক। তিনি নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্যেকে গুণ ও পরিমাণ
অনুসারে চার ভাগে ভাগ করেন। তিনি যুক্তিবাক্যের বিরােধিতার চর্তুবর্গ প্রতিষ্ঠা
করেন। এ একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্ত হিসেবে একটি যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা
করা যায় সে প্রক্রিয়ার আলােচনাই হলাে যুক্তিবিদ্যা। তিনি মনে করেন যে,
নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্যই হলাে সবচেয়ে মৌলিক। তিনি নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্যেকে গুণ ও
পরিমাণ অনুসারে চার ভাগে ভাগ করেন। তিনি যুক্তিবাক্যের বিরােধিতার চতুর্বর্গ
প্রতিষ্ঠা করেন। এ চতুর্বর্গের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, এক ধরনের
যুক্তিবাক্য অন্য ধরনের যুক্তিবাক্যের সত্যতা ও মিথ্যাত্ব নির্ধারণ করতে পারে।
তিনি অমাধ্যম অনুমানের ভিত্তি হিসেবে আবর্তন, প্রতিবর্তন ও আবর্তিত
প্রতিবর্তনের আলােচনা করেন।
জে. এস. মিলের যুক্তিবিদ্যার ধারণা তাঁর মতে, অবরােহ যুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠিত
সত্যের আলােকে আমাদের সত্য অনুসন্ধানকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে এবং বিজ্ঞানের
আমাদের সত্য অনুসন্ধানকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে এবং বিজ্ঞানের যুক্তিবিদ্যা বা
আরােহ যুক্তিবিদ্যা সত্য আবিষ্কারের জন্য আমাদেরকে প্রয়ােজনীয় নিয়ম সরবরাহ
করে। খড়মরপ গ্রন্থে যুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞায় বলেন, যুক্তিবিদ্যা হলাে আমাদের
জ্ঞানগত প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য এমন বিজ্ঞান যা বিচার বা প্রমাণের মাধমে
জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপণীত হওয়ার জন্য প্রয়ােজনীয় বুদ্ধিগত কাজ ও
বৌদ্ধিক ক্রিয়ার মানসিক প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে আলােচনা করে। Introduction to
Logic বইয়ে যুক্তিবিদ্যার স্বরূপ নির্ধারণ করার চেষ্টা করেন।তিনি On the
General Character of the Inquiry নামক অধ্যায়ে যুক্তিবিদ্যাকে একটি বিজ্ঞান
হিসেবে উপস্থাপন করেন। যােসেফ মনে করেন যে, যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান হিসেবে নিজস্ব
আলােচ্য বিষয়ের মূলনীতি ব্যাখ্যা করে। যেমন, যুক্তিবিদ্যা সংজ্ঞার নিয়ম,
যৌক্তিক বিভাজনের মূলনীতি, অনুমানের নিয়মাবলি নিয়ে আলােচনা করে।
যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আই. এম. কপির ধারণা (I. M. Copi on Logic) : আমেরিকান
অধ্যাপক আরভিং মারমার কপি (১৮ জুলাই ১৯১৭-১৯ আগস্ট ২০০২) যুক্তিবিদ্যার মূল
কাজকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আলােচনা করেছেন। কপি মনে করেন যে,
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেযুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করা যায়। যুক্তিবিদ্যার পাঠ
আমাদের শুদ্ধ যুক্তি থেকে অশুদ্ধ যুক্তি পার্থক্য করতে সহায়তা করে, জ্ঞান
অনুসন্ধানকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
বিজ্ঞান ও কলার বৈশিষ্ট্য : বিজ্ঞান ও যে জ্ঞানশাখা সুবিন্যস্ত ও
সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনাে সত্য বা ঘটনার অন্তর্নিহিত নিয়ম আবিষ্কার
করে, তাকে বিজ্ঞান বলে। যেমন-পদার্থবিদ্যা বিভিন্ন পদার্থের বৈশিষ্ট্য ও
ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করে এবং পরীক্ষণ প্রক্রিয়ায় সেগুলােকে বিশ্লেষণ করে
কতগুলাে সাধারণ নিয়মের আবিষ্কার করে। এসব সাধারণ নিয়মের সাহায্যে আবার
বিভিন্ন ক্ষেত্রে জড় পদার্থের বৈশিষ্ট্য ও ক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে। এভাবে
প্রত্যেক বিজ্ঞানই এসব সাধারণ নিয়মের সাহায্যে আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে জড়
পদার্থের বৈশিষ্ট্য ও ক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে। এভাবে প্রত্যেক বিজ্ঞানই এসব
সাধারণ নিয়মের সাহায্যে প্রকৃতির বিশেষ বিশেষ বিভাগের বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কে
সুনিশ্চিত ও সুশৃঙ্খল জ্ঞান দান করে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, বিজ্ঞানের কাজ
হলাে বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান দান করা। বিজ্ঞানের লক্ষ্য হলাে ব্যবহারিক
ও পরিপূর্ণ জ্ঞান অনুসন্ধান।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি | ইসলাম শিক্ষা | পদার্থবিজ্ঞান | ইতিহাস | ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা | জীববিজ্ঞান | উচ্চতর গণিত | সমাজবিজ্ঞান | ভূগোল | ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা | উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন | রসায়ন | অর্থনীতি | পৌরনীতি ও সুশাসন | যুক্তিবিদ্যা | হিসাব বিজ্ঞান | সমাজকর্ম
প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট
যুক্তিবিদ্যা (১ম পত্র)
১ম সপ্তাহ
নমুনা সমাধান
যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান ও কলা উভয়ই
ভূমিকা : যুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে যথাযথ যুক্তি প্রয়ােগের কৌশল এবং বৈধ
যুক্তি থেকে অবৈধ যুক্তি পার্থক্য করণের নিয়ম ও পদ্ধতি শিক্ষা দেয়। এ জটিল
বস্তুজগতে বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন চিন্তাশীল প্রাণী হিসেবে মানুষের পথ চলার
শুরু থেকেই যুক্তিযুক্ত চিন্তার সূত্রপাত হয়েছে। জীবন ধারণ ও জীবন বিকাশের
বিভিন্ন পর্যায়ে বিবিধ প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রামরত অবস্থায় যখনই মানুষ
সমস্যার মুখােমুখি হয়েছে তখনই সে ব্যবহার করেছে তার যৌক্তিক চিন্তা। সুশৃংখল
ও পদ্ধতিগত যৌক্তিক বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান। আর বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞান হলো হাত
যৌক্তিক চিন্তা হলাে যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান।
(ক) যুক্তিবিদ্যার ধারণা : মানব জ্ঞানের প্রাচীনতম শাখাগুলাের একটি
হলাে যুক্তিবিদ্যা পদ্ধতিগতভাবে এরিস্টটল থেকে যাত্রা শুরু করে গাণিতিক
যুক্তিবিদ্যা ও অতিসাম্প্রতিক কালের কম্পিউটার লজিক পর্যন্ত এর পরিসর
বিস্তৃত। যুক্তিবিদ্যা প্রতিটি বিষয়কে নির্ভুল, পদ্ধতিগত ও বাস্তবসম্মত হতে
সহায়তা করে। যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Logic শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে
গ্রিক শব্দ Logos হতে। Logos অর্থ হলাে চিন্তা বা শব্দ বা ভাষা তাই
উৎপত্তিগতভাবে যুক্তিবিদ্যাকে ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার আলােচনা বলা হয়।
আক্ষরিক অর্থে বাংলায় যুক্তিবিদ্যা বলতে আমরা বুঝি যুক্তির বিদ্যা বা যুক্তি
সম্পর্কীয় বিজ্ঞান। অর্থাৎ যে বিষয় পড়াশুনা করলে যুক্তি ও যুক্তির নিয়ম
সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায় তাই যুক্তিবিদ্যা।
এরিস্টটলের যুক্তিবিদ্যার ধারণা : যুক্তিবিদ্যা হলাে একটি উপকরণ বা
কৌশল যাকে যে কোনাে জ্ঞানের জন্য ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, যে
প্রক্রিয়ায় এক বা একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্ত হিসেবে একটি
যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা যায় সে প্রক্রিয়ার আলােচনাই হলাে যুক্তিবিদ্যা।
তিনি মনে করেন যে, নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্যই হলাে সবচেয়ে মৌলিক। তিনি নিরপেক্ষ
যুক্তিবাক্যেকে গুণ ও পরিমাণ অনুসারে চার ভাগে ভাগ করেন। তিনি যুক্তিবাক্যের
বিরােধিতার চতুর্বর্গ প্রতিষ্ঠা করেন। এ চতুর্বর্গের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি
যে, এক ধরনের যুক্তিবাক্য অন্য ধরনের যুক্তিবাক্যের সত্যতা ও মিথ্যাত্ব
নির্ধারণ করতে পারে। তিনি অমাধ্যম অনুমানের ভিত্তি হিসেবে আবর্তন, প্রতিবর্তন
ও আবর্তিত প্রতিবর্তনের আলােচনা করেন।
জে.এস.মিলের যুক্তিবিদ্যার ধারণা : অবরােহ যুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠিত
সত্যের আলােকে আমাদের সত্য করে এবং অনুসন্ধানকে বিজ্ঞানের যুক্তিবিদ্যা বা
আরােহ যুক্তিবিদ্যা সত্য আবিষ্কারের জন্য আমাদেরকে প্রয়ােজনীয় নিয়ম সরবরাহ
করে। মিল তার গ্রন্থে যুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞায় বলেন, যুক্তিবিদ্যা হলাে আমাদের
জ্ঞানগত প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য এমন বিজ্ঞান যা বিচার বা প্রমাণের মাধমে
জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপণীত হওয়ার জন্য প্রয়ােজনীয় বুদ্ধিগত কাজ ও
বৌদ্ধিক ক্রিয়ার মানসিক প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে আলােচনা করে।
যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে জোসেফ এর ধারণা : ব্রিটিশ অধ্যাপক হােরেস
উইলিয়াম ব্রিন্ডলেযােসেফ তার An Introduction to Logic বইয়ে
যুক্তিবিদ্যার স্বরূপ নির্ধারণ করার চেষ্টা করেন। তিনি তার বইয়ের
On the General Character of the Enquiry নামক অধ্যায়ে
যুক্তিবিদ্যাকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে উপস্থাপন করেন। যােসেফ মনে করেন যে,
যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান হিসেবে নিজস্ব আলােচ্য বিষয়ের মূলনীতি ব্যাখ্যা করে।
যেমন, যুক্তিবিদ্যা সংজ্ঞার নিয়ম, যৌক্তিক বিভাজনের মূলনীতি, অনুমানের
নিয়মাবলি নিয়ে আলােচনা করে।
যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আই . এম . কপির ধারণা : আমেরিকান অধ্যাপক
আরভিং মারমার কপি যুক্তিবিদ্যার মূল কাজকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তিবিদ্যা
সম্পর্কে আলােচনা করেছেন। কপি মনে করেন যে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে
যুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করা যায় যুক্তিবিদ্যার পাঠ আমাদের শুদ্ধ যুক্তি থেকে
অশুদ্ধ যুক্তি পার্থক্য করতে সহায়তা করে, জ্ঞান অনুসন্ধানকে এগিয়ে নিয়ে
যায় এবং আমাদের আগ্রহের যেকোনাে বিষয় বুঝতে সাহায্য করে। যুক্তিবিদ্যা
আমাদের বুদ্ধিগত যােগ্যতাকে প্রসারিত করে এবং বাস্তব করে তােলে। যুক্তিবিদ্যা
সকল ক্ষেত্রে গ্রহণযােগ্য ও শুদ্ধ যুক্তি গঠনে সাহায্য করে।
খ) বিজ্ঞান ও কলার বৈশিষ্ট্য :
বিজ্ঞান : যে জ্ঞানশাখা সুবিন্যস্ত ও সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়ায়
বিশেষ কোনাে সত্য বা ঘটনার অন্তর্নিহিত নিয়ম আবিষ্কার করে, তাকে বিজ্ঞান
বলে। যেমন -পদার্থবিদ্যা বিভিন্ন পদার্থের বৈশিষ্ট্য ও ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করে
এবং পরীক্ষণ প্রক্রিয়ায় সেগুলােকে বিশ্লেষণ করে কতগুলাে সাধারণ নিয়মের
আবিষ্কার করে। এসব সাধারণ নিয়মের সাহায্যে আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে জড়
পদার্থের বৈশিষ্ট্য ও ক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে। এভাবে প্রত্যেক বিজ্ঞানই এসব
সাধারণ নিয়মের সাহায্যে প্রকৃতির বিশেষ বিশেষ বিভাগের বস্তু বা ঘটনা
সম্পর্কে সনিশ্চিত ও সশলি জ্ঞান দান করে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে,
বিজ্ঞানের কাজ হলাে বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান দান করা। বিজ্ঞানের লক্ষ্য
হলাে ব্যবহারিক ও পরিপূর্ণ জ্ঞান অনুসন্ধান।
কলা : শিল্প বা কলার লক্ষ্য হলাে কাজে নৈপুন্য উৎপাদন। সৃজনশীল কাজে
নৈপুন্য উৎপাদনের জন্য বিশেষ বিশেষ নিয়ম বা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এ
পদ্ধতি বা নিয়মও কলার অন্তর্গত। কলাবিদ্যা হলাে এমন একটি জ্ঞানশাখা যা কোনাে
উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আমাদের জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে ব্যবহার বা
প্রয়ােগ করার বা কাজে লাগানাের রীতিনীতি শিক্ষা দেয়। অর্থাৎ অর্জিত জ্ঞানের
দক্ষতা বা প্রায়ােগিক কুশলতাই হলাে কলাবিদ্যা। যেমন : চারুকলা শিক্ষা দেয়
কীভাবে চিত্র আকঁতে হয়। নৌবিদ্যা আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে নৌযান পরিচালনা
করতে হয়। চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা দেয় কিভাবে ঔষধ প্রয়ােগ করে রােগ সারাতে
হয়। এখন দেখা যাচ্ছে যে প্রথমত, কলাবিদ্যা বলতে বুঝায় কর্ম সম্পাদনের
কৌশল দ্বিতীয়ত, কলাবিদ্যা বলতে বুঝায় দক্ষতা ও পারদর্শিতা। অর্থাৎ এ
ক্ষেত্রে প্রায়ােগিক কুশলতাই হলাে কলাবিদ্যা। কলার মূলকথা হলাে সৃজনশীলতা
বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন আনয়ন। সৃজনশীল কাজে নৈপুন্য উৎপাদনের জন্য বিশেষ
বিশেষ নিয়ম বা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এ পদ্ধতি বা নিয়মও কলার
অন্তর্গত।
(গ) যুক্তিবিদ্যার স্বরূপ-যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান না কলা :
বিজ্ঞান হিসেবে যুক্তিবিদ্যা : বিজ্ঞানকে অনেক ভাবে শ্রেণিকরণ করা
যায়। যেমন বস্তুগত বিজ্ঞান যা বস্তুসত্তার প্রকৃতি নিয়ে আলােচনা করে এবং
আকারগত বিজ্ঞান যা বিষয় বা বস্তুর আকার নিয়ে আলােচনা করে। বিষয়বস্তু
আলােচনা করার পদ্ধতির ভিত্তিতে বিজ্ঞান আবার দুই প্রকার যথা -বিষয়নিষ্ঠ
বিজ্ঞান ও আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। যে বিজ্ঞান বস্তুর উৎপত্তি, স্বরূপ, বিকাশ এবং
যথার্থ প্রকৃতির বর্ণনা দেয় তাকে বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে যেমন
-প্রাণিবিদ্যা; প্রাণিবিদ্যা প্রাণীর উৎপত্তি, প্রকৃতি, আচরণ, বিকাশ ইত্যাদির
যথাযথ ব্যাখ্যা ও বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে যে বিজ্ঞান কোনাে
আদর্শকে মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করে কোনাে বিষয়ের মূল্য বিচার করে তাকে
আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে। যেমন- নীতিবিদ্যা, নীতিবিদ্যার আদর্শ হলাে উত্তম বা
ভালাে (Good) অন্যভাবে আবার বিজ্ঞানকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যথা-
বর্ণনাধর্মী বিজ্ঞান ও ব্যবহারিক বিজ্ঞান সাধারণভাবে বলা যায় বিষয়নিষ্ঠ
বিজ্ঞানই হলাে বর্ণনাধর্মী বিজ্ঞান। যায়; যথা- বর্ণনাধর্মী বিজ্ঞান ও
ব্যবহারিক বিজ্ঞান। সাধারণভাবে বলা যায় বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞানই হলাে
বর্ণনাধর্মী বিজ্ঞান।
কলাবিদ্যা হিসেবে যুক্তিবিদ্যার যুক্তিবিদ : অলড্রিচ মনে করেন যে,
যুক্তিবিদ্যা কেবল কলাবিদ্যা। কলাবিদ্যা হিসেবে যুক্তিবিদ্যার কয়েকটি
বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হলাে :
১. যুক্তিবিদ্যা তার নিজস্ব বিষয়বস্তু সম্পর্কে অত্যন্ত যত্নশীল এবং সঠিক
চিন্তনের দাবী রাখে এবং অন্য বিষয় পাঠে অনুরূপ যত্নশীলতার অভ্যাস গড়ে তুলতে
আমাদেরকে সহায়তা করে।
২. যুক্তিবিদ্যা বৈধ যুক্তির সাধারণ নিয়মাবলি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানদান করে
এবং এর ফলে আমরা নিজের ও অন্যের যুক্তির যথার্থতা পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
যুক্তি প্রদান ও যুক্তি বিচার করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে নিয়মগুলাে ব্যবহার
করতে হয়।
৩. যুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে ভাষাগত ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন করে তােলে এবং এর
ফলে যুক্তি প্রদর্শন কালে আমরা অধিক সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি এবং অনেক
ক্ষেত্রে যুক্তির ভুল এড়াতে পারি। সর্বোপরি, যুক্তিবিদ্যা যুক্তি প্রদর্শনে
বা প্রয়ােগে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে, প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার
ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রাপ্তির পাশাপাশি যুক্তির বৈধতা ও অবৈধতা
সম্পর্কিত প্রচুর অনুশীলনী চর্চার ফলে এটি বাস্তব যুক্তি প্রয়ােগে আমাদের
দক্ষতা বৃদ্ধি করে। যুক্তিবিদ্যার ব্যবহারিক মূল্যের কারণেই যুক্তিবিদ্যাকে
কলাবিদ্যা বলে অভিহিত করা হয়।
(ঘ) যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান না কলা - এ সম্পর্কে আমার নিজস্ব মতামত
: যুক্তিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান। কারণ এটি নির্ভুল চিন্তার নিয়মাবলি নির্দেশ করে
এবং শুদ্ধ চিন্তা কাকে বলে সেটি শিক্ষা দেয়। আর সেই সাথে এটি একটি
কলাবিদ্যাও। কারণ যুক্তিবিদ্যা শুধুমাত্র চিন্তা বা যুক্তির সাধারণ নিয়মাবলি
নির্দেশ করেই ক্ষান্ত হয় না, সাথে সাথে চিন্তা বা যুক্তিকে সঠিকভাবে
প্রয়ােগের কলা-কৌশলও দান করে। তাই যুক্তিবিদ্যায় যেমন রয়েছে তাত্ত্বিক
দিক, তেমনি রয়েছে এর ব্যবহারিক বা প্রায়ােগিক দিক। অতএব, যুক্তিবিদ্যাকে
বিজ্ঞান কলা উভয় হিসেবে গণ্য করা যায়।
উপসংহার : যুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে যেমন যুক্তি ব্যবহারের কিছু
নিয়ম-কানুন শিক্ষা দেয়, তেমনি সেগুলাে প্রয়ােগের পদ্ধতিও শেখায়। তাই
যুক্তিবিদ্যা যেমন বিজ্ঞান, তেমনি কলাবিদ্যা। বিজ্ঞান হলাে কোনাে নির্দিষ্ট
নিয়ম অনুসারে প্রকৃতির কোনাে একটি বিষয়কে পদ্ধতিগতভাবে জানা। জ্ঞান অর্জনই
হলাে বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য। কলাবিদ্যা হলাে কোনাে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য
আমাদের অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তবক্ষেত্রে কাজে লাগানাে। কলার কাজ হলাে কাজে
দক্ষতা অর্জন করা। যুক্তিবিদ্যা একটি জ্ঞানশাখা হিসেবে আমাদেরকে তাত্ত্বিক
জ্ঞান দেয় এবং এ জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে আমরা বিশেষ দক্ষতা অর্জন করি। তাই,
যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান ও কলা উভয়ই।