সূচনা : বাংলার কৃষক-মজুর-শ্রমিকের অতি আপনজন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। চিরকাল নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কাছাকাছি এসে দাড়িয়েছেন তিনি। মজলুম মানুষের সুখে-দুঃখে কাঁধে কাঁ মিলিয়ে তাদের কথা বলেছেন। সংগ্রাম করেছেন। এ জন্য তিনি মজলুম জননেতা।
জন্ম ও শিক্ষা : সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আবদুল হামিদ খানের জন্ম হয় ১৮৮০ সালে। তাঁর বাবার নাম হাজি শরাফত আলী খান। মায়ের নাম মোসাম্মৎ মজিরন বিবি। অল্প বয়সেই তিনি পিতৃমাতৃহীন হন। তাঁর চাচা ইব্রাহীম খান তাঁকে শৈশবে আশ্রয় দেন। এ চাচার কাছে থেকেই তিনি মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। এ সময় তিনি ইরাক থেকে আগত এক পীর সাহেবের স্নেহদৃষ্টি লাভ করেন। তিনি তাঁকে ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় পাঠিয়ে দেন। এ সময় তিনি দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হন।
কর্মজীবন : মওলানা হামিদ খান মাদরাসা পড়া শেষ করে টাঙ্গাইলের এক প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতার সময় তিনি জমিদারের অত্যাচার, নির্যাতন দেখতে পান। জমিদারদের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ ও সংগ্রাম শুরু করেন। এর ফলে তিনি জমিদারদের রোষানলে পড়েন।
রাজনৈতিক জীবন : আবদুল হামিদ খান যখন রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, তখন তিনি অভিজ্ঞতায় একজন পরিপক্ব মানুষ। তাঁর পরিকল্পনা ছিল ধর্ম ও রাজনীতি, উভয় পক্ষেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো। বাইশ বছর বয়সে কংগ্রেস নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আদর্শে তিনি অনুপ্রাণিত হন। তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। তিনি সতেরো মাস পর মুক্তি পান। এরপর ১৯২৪ সালে সিরাজগঞ্জে তিনি এক ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি কৃষক সাধারণের ওপর জমিদারদের শোষণ, নিপীড়ন ও অত্যাচারের কাহিনি তুলে ধরেন। স্থানীয় জমিদারদের ষড়যন্ত্রে তাঁর উপর গ্রেফতারের হুমকি সৃষ্টি হলো। রাজনৈতিক অঙ্গনে তখন তাঁর অবস্থান ছিল একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আবদুল হামিদ খান বাংলা ছেড়ে আসামে চলে যান।
কৃষকনেতা ‘উপাধি’ প্রদান : বাংলা থেকে বিতাড়িত হয়ে আবদুল হামিদ খান ১৯২৪ সালে আসামের ধুবড়ির নিকটবর্তী ভাসানচরে এসে ওঠেন। এ বছরই তিনি ভাসানচরে এক বিশাল প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করেন। এ সভায় তিনি বাঙালি কৃষকদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এই সমাবেশেই সাধারণ কৃষকরা তাঁকে ভাসানচরের মওলানা নাম দেয়। পরে তাঁকে ভাসানী নাম দেয়। তখন থেকেই তাঁর পরিচয় হয় মওলানা ভাসানী।
‘কাগমারি’ সম্মেলন ও পূর্ব বাংলার রাজনীতির সাথে ভাসানী : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠন তিনি আবার গ্রেফতার হন। সম্মেলন 'কাগমারি সম্মেলন' নামে খ্যাত। এ সম্মেলনে যোগ দেন দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতিমান মানুষ। মওলানা ভাসানী বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষকে শোষণ করছে। ১৯৭০ সালে তিনি পল্টন ময়দানে ভাষণ দেন এবং ভাষণে বলেন, এ দেশ একদিন স্বাধীন হবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং জনমুখী কর্মসূচি পালন করেন।
মৃত্যু : ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৯৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ। হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটি যুগের অবসান ঘটে। তাঁকে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
উপসংহার : মওলানা হামিদ খান ভাসানী স্বদেশপ্রেম, প্রগতিশীল আদর্শ ও প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক। তিনি চিরকাল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন এ দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে।
aro koyekti para dile vlo hoto ;;;;;;;etaoo vlo hoyeche;;;;good
ReplyDelete
DeleteRight