তোমার বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত সদ্য সমাপ্ত শিক্ষাসফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে
তোমার বন্ধুর নিকট একটি পত্র লেখো।
রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম
২৮শে জানুয়ারি ২০১৫
মৌনতা,
ভালোবাসা নিও। তোমার চিঠি পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছি। আজকে তোমাকে কয়েকটি আনন্দঘন
দিনের কথা জানাব বলে লিখেছি।
শুনে তুমিও আনন্দিত হবে যে, আমি আমার দশম শ্রেণির বন্ধুদের নিয়ে একটি শিক্ষাসফরের
আয়োজন করেছিলাম। পাঁচ দিনব্যাপি আমাদের এ সফরে কর্মসূচি ছিল সিলেট জেলাকে কেন্দ্র
করে। তুমি তো জানই, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হচ্ছে সিলেট। শ্রীপুর, হরিপুর,
মাধবকুন্ড, জাফলং প্রভৃতি জায়গার অপুরূপ সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করেছি এ
কদিন।
আমাদের সফরকারি দলের সঙ্গে ছিলেন দুজন স্যার। স্কুল থেকে আমরা নির্ধারিত বাসে
চেপে ১৪ই জানুয়ারি সকাল ৭টায় যাত্রা শুরু করি 'দুটি পাতা কুড়ি'র দেশ সিলেটের
উদ্দেশ্য। মাঠা-ঘাট, বিল-হাওড়, শহর-বন্দর পেরিয়ে ৯ ঘন্টা পর আমরা পেলাম পাহাড়ি
পথের নিশানা। জীবনে প্রথম এই পাহাড়ি পথ ধরে যাত্রা শুরু হলো। কখনো উঁচু, কখনো
নিচু, দু’পাশে পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে চা বাগান- আমার চোখে অপার বিস্ময়। রাত্রি যখন
আটটা, আমরা গন্তব্যে পৌঁছলাম।
পরদিন সকালবেলা আমরা শিলং-এর পাদদেশ জাফলং শহরে গেলাম। এ যেন শহর নয়, ভাস্করের
শিল্পকর্ম অথবা কোনো শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা খেয়ালি মনের পরিচয়। পাহাড়ের ঢাল
দিয়ে চা বাগানে হাঁটছি, চা পাতা ছুঁয়ে দেখছি। অসীম আনন্দে ভরে গেছে হৃদয়।
পাহাড়িদের জীবন বড় বিচিত্র তবে বৃক্ষলতা, পশু পাখির সঙ্গে বসবাস ওদের মনকে করেছে
সরল। ওদের মনের পরিচয় পেয়ে আমি বিস্ময়াভিভূত হয়েছি।
হরিপুর ও শ্রীপুর ঘুরে ঘুরে দেখলাম গ্যাস ফিল্ড ও তেল ক্ষেত্রগুলো। আমরা
শিক্ষাসফরে এসেছি শুনে গ্যাস ফিল্ডের এক কর্মকর্তা আমাদের বিভিন্ন স্থান ঘুরে
ঘুরতে দেখালেন। গ্যাস কী প্রক্রিয়ার উত্তোলিত হচ্ছে এবং কোথায় শোধিত হচ্ছে তা
আমাদের ব্যাখ্যা করলেন। আমার কাছে মনে হলো এ যেন এক স্বপ্ন।
শেষ দিন মাধবকুন্ডের প্রাকৃতিক নিসর্গের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে আকন্ঠ পান
করলাম প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের নির্যাস। ঘুরতে কোন ক্লান্তি নেই, শান্তি নেই,
কোনো এক অতৃপ্ত পিপাসা যেন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আমার মন বলছিল যেন থেকে যাই
ওখানে, কোথায় খুঁজব এর চেয়ে অধিক সুখ?
১৮ই জানুয়ারি ফিরতি যাত্রা শুরু হলো। শুধু মনের মধ্যে জেগে থাকল শিলং-এর পাদদেশের
পাহাড়ি শহরের শুভ্র কিছু স্মৃতি। তোমার কুশল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি।
ইতি তোমার বন্ধু
দোলা