যাহারা তােমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলাে,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালাে?
ভাব-সম্প্রসারণ : স্রষ্টার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ। মানুষের এই শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করে তার বিবেক-বুদ্ধির ওপর। মানুষের সেই বিবেক-বুদ্ধি সীমাবদ্ধ। অসীম স্রষ্টার কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর করা তাই মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে মাঝে মাঝে মানুষ তার কাছে প্রশ্ন করে, তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জানতে চায়। জগতে ক্ষমা মহৎ গুণ হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীতে স্রষ্টার মনােনীত যত মহামানব এসেছেন, তাঁরা সবাই মানুষকে হিতােপদেশ দিয়েছেন। অন্তর থেকে বিদ্বেষ-বিষ দূর করে কল্যাণমন্ত্রে অন্তর ভরিয়ে তুলতে বলেছেন। তাঁরা সত্য ও ন্যায়ের বাণী প্রচার করে স্মরণীয়-বরণীয় হয়েছেন। মানুষকে ক্ষমার আদর্শে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। সবাইকে ক্ষমা করতে বলে, উদারতার সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমা লাভের অযােগ্যরাও ক্ষমা পেয়ে গেছে। তাই সীমাবদ্ধ ক্ষমতার মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে- যে অপরাধীকে মানুষ তার উদারতা দিয়ে ক্ষমা করে দেয়, স্রষ্টার কাছেও কি সেই অপরাধী ক্ষমা পেয়ে যায়? যারা স্রষ্টার দেওয়া কল্যাণকর নানা উপাদান নষ্ট করে, প্রকৃতির সুন্দরকে ধ্বংস করে, তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন কিনা? নাকি শাস্তি দেন এই ভাবনা উঠেছে ভাবুক মনে। কারণ জগতের সমস্ত সৃষ্টির কল্যাণকামী স্রষ্টা কারও একার তুষ্টির জন্য সমষ্টিকে কষ্ট দিতে পারেন না। তাঁর দেওয়া জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধির যারা অপব্যবহার করে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে পারেন না। কেননা জগতের হিতসাধনই তার কর্ম। কিন্তু মানুষ জ্ঞানের স্বল্পতায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, স্রষ্টা আসলে অপরাধীকে ক্ষমা করেছেন কিনা। ভাবুক মানুষের মনে এ সিদ্ধান্তহীনতার কারণ জগতে প্রতিকারহীন শক্তির নানা অপরাধে বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে, মানুষের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের অন্ধকারে ঢেকে যায়। মানুষ তাই অশ্রুজলে তাঁর কাছে প্রশ্ন তােলে, তিনি সত্যিই তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন কিনা?
মোছা : সুমাইয়া আক্তার
করতোয়া মাল্টিমিডিয়া কলেজ, বগুড়া।