বিশ্বজোড়া পাঠশালা মাের সবার আমি ছাত্র,
নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায় পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতুহলে - সন্দেহ নাই মাত্র।
ভাব-সম্প্রসারণ : পৃথিবীটাই একটা শিক্ষাক্ষেত্র। কেবল বইপুস্তক এবং স্কুল-কলেজে শিক্ষা গ্রহণ সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃতির ব্যাপক পটভূমি থেকে নানা বিষয় থেকে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। মানুষের শেখার অন্ত নেই। পৃথিবীটা প্রকৃতপক্ষে বিরাট এক পাঠশালা। এখানে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে অনেক কিছু জানার আছে। একটু গভীরভাবে প্রকৃতির দিকে তাকালে, সেখান থেকে মানুষ অনেক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বাতাস অনবরত প্রবাহিত হচ্ছে। নিরন্তর বহমান বাতাসের কাছ থেকে কর্মী হওয়ার শিক্ষা লাভ করা যায়। মাথার উপর আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় কী বিরাট, কী উদার আকাশ। সুতরাং আকাশের কাছ থেকে উদার হওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায়। ফলভারে নত বৃক্ষের দিকে তাকালে দেখা যায় সম্পদে ও সমৃদ্ধিতে সে কত বিনয়ী, কত নত; কত নিরহংকার তার হৃদয়। নদীর দিকে তাকালে দেখা যায় সে দুকূলের মানুষকে জল বিতরণ করে নিঃস্বার্থভাবে সময়ের স্রোতের সঙ্গে তাল রেখে বয়ে যায়। সবুজ মিল্ক তরুলতা, বৃক্ষ, শােভাময় পুষ্প এদের কাছে সুন্দর হওয়ার শিক্ষা লাভ করা যায়। পৃথিবী সর্বংসহা, স্থির, সহিষ্ণু। ঝড় ঝঞা, বন্যা, খরা, স্নিগ্ধতা, রুক্ষতা, ধ্বংস, সৃষ্টি, ভালাে, মন্দ, সুখ, দুঃখ, বড়, ছােট সব বিষয়কে সে পরম ধৈর্যের বুকে ধারণ করে আছে। পৃথিবীর কোনাে অধৈর্য নেই অস্থিরতা নেই। এভাবে পৃথিবীর যেদিকেই তাকাই শেখার কোনাে শেষ নেই। বিশ্বজোড়া যেন ছড়িয়ে আছে শিক্ষার অগণিত উপকরণ। চলমান জীবনে আমরা শিখে চলেছি একটির পর একটি বিষয়। মানুষ সর্বংসহা এ পৃথিবীর কাছে ধৈর্য শিক্ষার পাঠ গ্রহণ করতে পারে। এমনিভাবে পৃথিবীর দেশে দেশে বিচিত্র মানুষের কাছে শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণ ছড়িয়ে রয়েছে। মানুষ মুক্তমনের অধিকারী হলে বিশ্বের সর্বত্র শিক্ষণীয় বিষয় খুঁজে পায়। তাই কবি বলেন,
“মুক্ত কর হে সবার সঙ্গে যুক্ত কর হে বন্ধ
সঞ্জার কর সকল কর্মে শান্ত তােমার ছন্দ।”
বস্তুত আমাদের এ সমগ্র পৃথিবীটাই একটা পাঠশালা। এর পটভূমি বা বুক থেকে আমরা শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং বেঁচে থাকার সমস্ত অভিপ্রায় পেয়ে থাকি। তাই পৃথিবীর সবকিছু থেকেই আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি। এমনিভাবে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং মুক্তমনে সবার নিকট পাঠ গ্রহণ করতে পারলেই মানুষের শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ হয়।