সন্ধ্যা যদি নামে পথে, চন্দ্র যদি পূর্বাচল কোণে
না হয় উদয়
তারকার পুঞ্জ যদি নিভে যায় প্রলয় জলদে
না করিব ভয়
হিংস্র ঊর্মি ফণা তুলি বিভীষিকা মূর্তি ধরে যদি
গ্রাসিবারে আসে
সে মৃত্যু লংঘিয়া যাব সিন্ধুপারে, নবজীবনের
নবীন আশ্বাসে ৷
ভাব-সম্প্রসারণ : জীবনযুদ্ধে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই লক্ষ্যস্থলে পৌছাতে হয়। জীবন চলার পথ কঠিন এবং সংগ্রামমুখর। উন্নতির পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। নিতান্ত বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ। জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হলে জীবনের সমস্ত ঝড়, বাধাবিঘ্নকে উপেক্ষা করে সম্মুখের দিকে অগ্রসর হতে হবে। নবীন আশ্বাসে তরুণদেরকে জয়যাত্রা শুরু করতেই হবে। কিন্তু এ পথ বিপদংকুল। সব রকমের বাধাবিপত্তি, ভয় বিভীষিকা তুচ্ছ করে অদম্য মনোবল নিয়ে দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য, দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য, সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সংকল্প তাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। বিপদ দেখে ভয় পেয়ে যদি আমরা দমে যাই, তাহলে চলবে না। ঝড়, বৃষ্টি, ঝঞ্ঝা জীবনে অনেক আসবে। মাঝ পথে যদি হতাশার অন্ধকার শত গ্লানি নিয়েও আসে তবুও আমাদের সেগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে আলোর আশায়; অর্থাৎ নবজীবনের নবীন আশায়। বিপদের হিংস্র ফণা বিভীষিকাপূর্ণ মূর্তি ধারণ করে খেয়ে ফেলার উপক্রম করবে। সেখানে মৃত্যুও আসতে পারে। কিন্তু সবকিছুকেই উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এমনকি মৃত্যু ভয়ও যদি আসে সে ভয়কে লঙ্ঘন করে নতুন জীবন রচনা করতে হবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সংকল্প কবিতায় হাজারো বাধা অতিক্রম করে গন্তব্যে যাওয়ার সংকল্প করেছেন। সিদ্ধির পথ কণ্টক সমাচ্ছন্ন, সে কণ্টককে পদদলিত করে রক্তসিক্ত পদেই মানুষকে যাত্রা করতে হবে। যে ব্যক্তি পদ্ম তুলতে গিয়েছে তাকে কাঁটার ভয় করলে চলবে না, ভয় করলে কখনো তার পক্ষে পদ্ম আহরণ সম্ভব নয়। দুঃখের মূর্তি দেখে পশ্চাৎপদ হলে চলবে না। সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে তাকে অগ্রসর হতে হবে। বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে পারলেই জীবন সুন্দর হবে। বাস্তব জীবনের পূর্ণতা আসবে। জয় হবে চলমান ও গতিশীল জীবনের।