সে লড়াই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই; যে যুদ্ধে ভাইকে মারে ভাই।
মূলভাব : গোটা পৃথিবীর মানুষ একে অপরের ভাই ভাই। কাজেই এক মানুষ অপর মানুষকে মারার অর্থ ঈশ্বরকে নিজ হাতে হত্যা করা।
সম্প্রসারিত ভাব : যুদ্ধ সংঘটিত হয় শত্রুর সঙ্গে মিত্রের সঙ্গে নয়। যখন মিত্রের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তখন সে আর মিত্র থাকে না-সে শত্রুরূপে পরিগণিত হয়। সর্বাপেক্ষা আপনজন নিজের ভাই। সে হত্যার অর্থ আত্মহত্যা—ঈশ্বরকে হত্যা। মানুষ মাত্রেই বিশ্বজননীর সন্তান। সেদিন থেকে মানুষ মাত্রই আমার আপনজন-আপন ভাই। সুদূর অতীত থেকে মানুষ মানুষের সাহচর্যে বাস করছে, তার সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে শ্বাপদ সংকুল আদিম পৃথিবীতে হিংস্র জীবজন্তুর সঙ্গে লড়াই করে এতদিন নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সমর্থ হয়েছে। মানুষ এ পৃথিবীতে আজও যে বেঁচে আছে, তার মূলেও আছে, তার সংঘ শক্তি। কবি তাই মানুষের বেদনায় হৃদয় কম্পিত আবেগে গেয়ে উঠলেন “শুনহ মানুষ ভাই সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।” মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আমরা খুঁজি ঈশ্বরকে, মানুষের অন্তরলোকেই আমরা খুঁজে পাই আমাদের অভীষ্ট ঈশ্বরকে। তাই পৃথিবীতে মানুষের জন্যই মানুষের হৃদয় কাঁদে, মানুষের ভালোবাসার জন্য কাঙাল হয়ে ফেরে মানুষের হৃদয়। কারণ মানুষই তার পরম সম্পদ, মানুষই তার ভাই। তবু মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় মানুষ, মানুষের রক্তে কলঙ্কিত হয় মানুষের হাত। কিন্তু সে তো ভ্রাতৃহত্যা। এ ভ্রাতৃ হত্যাতো ঈশ্বর হত্যার নামান্তর। তাই যুদ্ধ থেকে বিরত হয়ে মানুষের উচিত পৃথিবীতে শান্তি সুখের স্বর্গ গড়ে তোলা।
মন্তব্য : মানুষ যে দিন অন্যায় সমর থেকে বিরত থাকবে পারস্পরিক প্রীতি ও সৌহার্দ্যকে বিনষ্ট না করবে, সেদিন ঈশ্বরের করুণায় এ ধরাধামে স্বর্গীয় আবাস গড়ে তুলতে পারবে।