ভাবসম্প্রসারণ : রাজা ভাবে, নব নব আইনের ছলে ন্যায় সৃষ্টি করি আমি। ন্যায় ধর্ম বলে, আমি পুরাতন, মোরে জন্ম কেবা দেয় যা তব নতুন সৃষ্টি সে শুধু অন্যায়।

রাজা ভাবে, নব নব আইনের ছলে ন্যায় সৃষ্টি করি আমি। ন্যায় ধর্ম বলে, আমি পুরাতন, মোরে জন্ম কেবা দেয় যা তব নতুন সৃষ্টি সে শুধু অন্যায়।

মূলভাব : সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠেছে মানুষের বিচার-বুদ্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ। জীবনচর্যাই মানুষকে শিখিয়েছে ভালো এবং মন্দের পার্থক্য। মানুষ একা বাঁচে না; সমাজের মধ্যেই সে সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। সমাজ-সত্তার সঙ্গে ব্যক্তি-জীবনের সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই কালক্রমে মানুষের জীবনে ও মননে সৃষ্টি হয়েছে ন্যায় ও অন্যায়ের সুস্পষ্ট ধারণা। মানুষের এই বোধের জাগরণে শাসকদের প্রণীত আইনের কোনো ভূমিকা নেই।

সম্প্রসারিত ভাব : ন্যায়-অন্যায়ের বোধ দেশকাল-নিরপেক্ষ। যুগের পরিবর্তনে, শাসকের পালাবদলে ন্যায় ও অন্যায় বোধের কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে না। তা চিরন্তন, অপরিবর্তনীয়। কিন্তু মানুষের অহমিকার শেষ নেই। ক্ষমতামত্ত, শক্তিমান শাসক সদরে ঘোষণা করেন নব নব আইনের বিধান। তিনি ভাবেন, অন্যায়কে দমিত করবার জন্যই নতুন ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করলেন। মানুষের কল্যাণ বুদ্ধি তার জাগ্রত চেতনায় অবস্থিত। নব নব ন্যায়-অন্যায়ের বিধান তার শাশ্বত ন্যায়বোধকে বিভ্রান্ত করলেও পরাভূত করতে পারে না। নতুন যুগ আসে, নতুন শাসকের আবির্ভাব ঘটে। ন্যায়ধর্মের নামে নতুন আইন ও বিধান ঘোষিত হয়। নতুন নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হয় শাসকের স্বার্থরক্ষা করার জন্যই। মানুষকে প্রবঞ্চিত করার জন্য তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ন্যায়ধর্মের আচ্ছাদন, ব্যক্তিগত বা শ্রেণিগত স্বার্থ যখন বড় হয়ে ওঠে তখন মনুষ্যত্ব খণ্ডিত হয়, মানবতা লাঞ্ছিত হয়। এত বড় অন্যায় আর কিছুতে নেই। অথচ এসব করা হয় ন্যায়ধর্মের দোহাই দিয়ে। ন্যায়ধর্ম রাজার অনুশাসনে, শক্তিমান শাসকের আইনে বাঁধা পড়ে না; ন্যায়ের ছদ্মবেশে সেখানে অন্যায়কে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয় মাত্র। ন্যায়ধর্ম হিমালয় শিখরের মতোই ভাস্কর, প্রবঞ্চকের হস্তস্পর্শ তাকে কিছুমাত্র মলিন করতে পারে না।

মন্তব্য : শাসকের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যুগে যুগে প্রণীত হয় নতুন নতুন আইনের। ন্যায় ধর্মের নামে সে.নতুন আইন ও বিধান ঘোষিত হলেও সে আইন অন্যায় এবং মানব কল্যাণ বর্জিত।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post