দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে (১৫ অক্টোবরের পর থেকে) নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুলতে পারবে। তবে তার আগে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিকা ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া ও না দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ একটি চিত্র জানাতে হবে।
হাইলাইস
- ১৫ অক্টোবর পর খুলতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত
- স্কুল ও মাধ্যমিকের সিদ্ধান্ত এখনই নয়
তবে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ সময় আরো দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে। কারণ, এ স্তরের শিক্ষার্থীদের যেহেতু এখনই টিকা দেওয়া সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য করোনা সংক্রমণের হার কমার ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নির্ভর করছে। এ জন্য সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে কোনো একটি সংখ্যা বিবেচনা করা যায় কি না, সে বিষয়ে করোনা–সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ চাইবে মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের এমন পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। এদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল সভায় খোলার আগে আরও কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সভায় এদিন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল এ সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ, করোনা–সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবিরসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে চান তাঁরা। টিকা দেওয়ার পর ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখন নিম্নমুখী। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগে খুলে দেওয়া হবে। তবে করোনা পরিস্থিতি যদি অবনিত হয় তাহলে আবার ভিন্ন চিন্তা করতে হবে।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আরেক দফায় বাড়ানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ছুটি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ল। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, এ ছুটি ছিল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সেপ্টেম্বের কোনো এক সময়ে নির্ধারিত কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনার চেষ্টা করা হবে। এটি মাথায় রেখে চলমান ছুটি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ক্ষেত্রে ‘ফেসশিল্ড’ নিশ্চিত করা সাপেক্ষে খোলার সিদ্ধান্ত হবে। কারণ, শিশুদের মাস্ক পরার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হয়। উল্লেখ্য, তহবিল ইউনিসেফের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনা মহামারির পুরো সময় জুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধের তালিকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। দীর্ঘ সময় বন্ধের ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার প্রায় কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যত বেশি সময় ধরে শিশুরা বিদ্যালয়ের বাইরে থাকবে, সহিংসতা, শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহের ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। এতে তাদের ততই স্কুলে ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমে যাবে।
বৃহস্পতিবার সভা শেষে ইউজিসির একজন সদস্য বলেন, আগামী সাত থেকে আট দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে টিকাদানের অবস্থা জানিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। তা থেকে জানা যাবে, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে কাদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং কাদের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের আলাদা দুটি তালিকা থাকবে। একটিতে যাঁদের এনআইডি আছে, আরেকটিতে যাঁদের এনআইডি নেই। এনআইডি থাকা সত্ত্বেও যে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো টিকা দেননি, তাঁদের দ্রুত টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া বয়স ১৮ বছর হওয়ার পরও যাঁদের এনআইডি নেই, তাঁদের অল্প সময়ের মধ্যে এনআইডি পাওয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহায়তা করবে। তারা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবে। যদি অল্প সময়ের মধ্যে এনআইডি পেতে অসুবিধা হয়, তাহলে অন্য পরিচয়পত্রের (বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি হতে পারে বা জন্মসনদ) মাধ্যমে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ টিকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে আগামী ১লা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চূড়ান্ত বোর্ড সভার উপর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর আবারও এসব বিষয় নিয়ে সভা হবে। সেখানেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।