ভূমিকা : বর্তমান বিশ্ব তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্ব। জীবন উন্নয়ন ও টেকসই বিশ্ব গড়তে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আবশ্যক। তাই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে নানা যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার। একটা সময় ছিল যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে চিঠি লিখেছে চিঠি যেতে এক থেকে দুই সপ্তাহ লেগে যেত। তার কারণ চিঠিগুলো লেখা হতো কাগজে, খামের উপর ঠিকানা লিখতে হতো। সেই চিঠি জাহাজে, ট্রেনে, গাড়িতে করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেত। তারপর সেগুলো আলাদা করা হতো। সবশেষে কোনো-না-কোনোভাবে খামের উপর ঠিকানা দেখে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হতো। বর্তমানেও চিঠি লেখা হয়। কিন্তু সেটি এখন হয়ে গেছে ইলেকট্রনিক। শুধু চিঠি না চিঠির সাথে ছবি, কথা, ভিডিও সহ সবকিছুই পাঠানো সম্ভব। একজন আরেকজনের সাথে যখন খুশি যেখানে খুশি যোগাযোগ করতে পারে। ফলে পুরো পৃথিবীটাই যেন একটা গ্রামে পরিণত হয়েছে যাকে এক কথায় বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ। ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য প্রযুক্তির চাহিদা ব্যাপক। ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এর অসম্ভব ব্যবহার চলছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার : কোভিডের জন্য স্কুল কলেজ যখন বন্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের পড়াশুনা চালিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাস করতে হয়েছে। বেড়ে গেছে অনলাইন পড়াশোনার নির্ভরশীলতা। শিক্ষকরা সরাসরি ভিডিও কলের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করাচ্ছেন। আর এই ক্লাসে উপস্থিত থাকা, কিংবা বাহিরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে না পারায় এখন একমাত্র আশ্রয়স্থল মোবাইল বা কম্পিউটার। এছাড়া বর্তমান অ্যাসাইনমেন্ট সম্পূর্ণ করতেও বিভিন্নভাবে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য গ্রহণ করতে হয়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার : আগে চিকিৎসার জন্য মাইলের পর মাইল ছুটে যেতে হতো দূরের হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মাইলের পর মাইল না ছুটে ঘরে বসে ডাক্তারের সিরিয়াল নেয়া যায় এবং খুব দ্রুত ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে ঘরে বসেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেলিমেডিমিনের মাধ্যমে নামকরা সব ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হয়। ফলে ভোগান্তি অনেক কমে এসেছে। বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যেকোন নামকরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া যায় তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে। আর কোভিড পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার ও সুবিধা ব্যাপকতা লাভ করেছে। দূর থেকে টেলিফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও কলের সাহায্যে চিকিৎসা নেয়া যাচ্ছে।
কৃষি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার : আমাদের দেশ হচ্ছে একটি কৃষিনির্ভর দেশ, আধুনিক উপায়ে চাষ করে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আইসিটি ব্যবহারের ফলে আমাদের দেশে চাষিরা কৃষিতে সুফল পাচ্ছে। জমিতে এখন কি সার দিতে হবে, কোন কীটনাশকে কোন পোকা দমন হয় এসব ইত্যাদি তথ্যের জন্য এখন কৃষকরা আর কৃষি অফিসে যায় না। ঘরে বসেই প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষি কর্মকর্তার থেকে সেসব তথ্য নেয় বা অনলাইনে অনুসন্ধান করে এসব তথ্য সংগ্রহ করে। তাই কৃষকদের অনেক উপকার হচ্ছে ফলে কৃষিক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিবেশ ও আবহাওয়া : আমাদের দেশে একসময় ঘূর্ণিঝড়ে অনেক মানুষ মারা যেত। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ে এ দেশের প্রায় ৫ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। বাংলাদেশে এখন ঘূর্ণিঝড়ে আগের মত এত বেশি মানুষ মারা যায় না। তার কারণ আইসিটি ব্যবহার করে অনেক আগে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যায় আবার রেডিও-টেলিভিশনে উপকূলের মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া যায়। পরিবেশে দূষিত পদার্থের মাত্রা কিংবা আজকের বা আগামী দিনের আবহাওয়া কেমন হতে চলেছে তা সহজেই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেই নির্ণয় করা হয়। ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে না।
উপসংহার : বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বলে শেষ করা যাবেনা। দিনে দিনে শুধু এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার হচ্ছে। প্রযুক্তি হল সভ্যতার কাছে এক প্রকার আশীর্বাদস্বরূপ। আর তথ্যপ্রযুক্তি সেই আশীর্বাদের সবচেয়ে বড় উপহার, যার ব্যবহার প্রতিদিন বৃদ্ধি পেতেই আছে । তাই আধুনিক বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সবাইকে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।