কুসুমের সহকীট সুর শিরে যায়, সেই রূপ সাধু-সঙ্গ অধমে তরায়।
মূলভাব : ফুল অতি সুন্দর ও পবিত্র জিনিস হলেও তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে কীট বা পতঙ্গ। কিন্তু তাতে ফুলের মাধুর্যের কোনো কমতি হয় না। বরং ফুলের অনন্য পরিবেশনে কীটপতঙ্গও সেই সৌন্দর্যের সাক্ষী হয়। একইভাবে কোনো অসম ব্যক্তি যদি সাধুর সান্নিধ্যে জাসে তাহলে তার ভেতরের যাবতীয় পঙ্কিলতা দূর হয় এবং আত্মা শুদ্ধ হয়।
সম্প্রসারিত ভাব : বাগানের সৌন্দর্যকে অনন্য করে তোলে ফুল। ফুল ছাড়া একার্থে বাগানের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না। ফুল সুবাস ছড়ায়, প্রশান্তি ছড়ায়, সুগন্ধ ছড়ায়। প্রতিটি অনুষ্ঠানের আভিজাত্য ও পবিত্রতাকে উচ্চসিত করে ফুল। মন্দিরে দেবতাকে ফুল যেমন সজ্জিত করে, তেমনি প্রেমের স্মারক হিসেবেও ফুল প্রদত্ত হয়। ফুলের মহিমা অফুরন্ত; তার গুণকীর্তন করে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে সেই ফুলের অজ্ঞাতসারে বাস করে ক্ষুদ্রকীট। ফুলের রেণু ও মধু তার আহার্য হলেও তার মুখে স্বল্প হলেও বিষের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কিন্তু সেই বিষয় তীব্রতা না ফুলকে দগ্ধ করে, না তার রস আস্বাদনকারীকে। বরং সেই ক্ষুদ্রকীট ফুলের মধ্যে থেকেও ফুল নানা অনিন্দ্য সুষমার সমাবেশে নিজের অবস্থানকে তুলে ধরে। ফুলের মতোই কোমল হয় সাধু ব্যক্তির হৃদয়। মানবীয় নানা গুণ তাঁকে অনন্য মহিমা প্রদান করে। সাধু ব্যক্তি নিজের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের মানুষেরও কল্যাণকে ত্বরান্বিত করেন। তবে সমাজে এমন মানুষও আছে যারা অকল্যাণের পথেই নিজেদের চালিত করে। তাদের কাছ থেকে সমাজ ইতিবাচক কোনোকিছু পায় না। এমন ব্যক্তি যখন সাধু ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে সাধুসঙ্গ লাভ করে, তখন তার হৃদয়ের ইতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মনের অসাধুতা দূর হয়ে সেখানে কল্যাণের চিন্তার উদয় হয় এবং একপর্যায়ে সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয় সে। অর্থাৎ কোনো নীচ ব্যক্তি যদি সাধু ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে তবে ওই সাধু ব্যক্তির সঙ্গ তাকে মহৎগুণে দীক্ষা নিতে প্রেরণা জোগায়। এক্ষেত্রে দস্যু রত্নাকরের গল্পটি স্মরণীয়; নারদ মুণির সংস্পর্শে এসে সে দস্যু থেকে মহাঋষিতে পরিণত হয় এবং 'রামায়ণ' রচনা করে।
মন্তব্য : ফুলের সৌন্দর্য যেমন কীটের কুশ্রীরূপকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে, তেমনি সাধু ব্যক্তির সংস্পর্শও নীচকে সৎপথে পরিচালিত করে। অর্থাৎ সৌন্দর্য ও সাধুতা আপনগুণে অসৌন্দর্য ও অসততাকে পরাভূত করে।