অন্য খরচের চেয়ে বাজে খরচেই মানুষকে চেনা যায়, কারণ মানুষ ব্যয় করে বাঁধা নিয়ম অনুসারে, অপব্যয় করে নিজের খেয়ালে।
মূলভাব : যে মানুষ নৈমিত্তিক প্রয়োজন অনুসারে খরচ করেন তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বোঝা দুরূহ। যেমন যিনি সাংসারিক কারণে প্রতিদিন বাজার করেন সেটা তার প্রাত্যহিক কর্তব্য। তার বৈশিষ্ট্য আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু যিনি উল্লিখিত কাজগুলোর পাশাপাশি অপব্যয় করেন তার অপব্যয় হয় বইকেনা, ভ্রমণ বা ছবিসংগ্রহে।
সম্প্রসারিত ভাব : প্রাত্যহিক জীবনের অত্যাবশ্যক চাহিদা পূরণে ব্যস্ত হিসেবি মন। জীবন পরিক্রমায় নিত্যদিনের হিসাব মেলাতে গিয়ে এ মন বাঁধা পড়ে ছকবাঁধা বাধ্যবাধকতার মধ্যে। এ মনের অধিকারী মানুষের জীবনে থাকে না স্বচ্ছন্দে বিচরণের স্বাধীনতা। এই বাধ্যবাধকতার গণ্ডিতে আবদ্ধ সকল মানুষ স্বভাব-বৈশিষ্ট্যে প্রায় একই রকম। তাদের না থাকে মনের স্বাধীনতা, না বোঝা যায় তাদের বিচিত্র মনের খেয়ালের স্বরূপ। হিসেবি মানুষের চেয়ে বেহিসেবি মানুষ স্বভাব-বৈশিষ্ট্যে একেবারে আলাদা। তাদের দৈনন্দিন খরচের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় তাদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যকে। সংসারের ছক বাঁধা জীবন তাদের আকর্ষণ করে না। তাদের কেউ সংসার-বিবাগী উদাসী বাউল, কেউ অর্থ-সম্পদ উজাড় করে দেন মানবকল্যাণে। তারা স্বভাবে কৃপণ নন, স্বার্থপর নন। তবে কেউ যদি নিছক বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেওয়ার জন্যে বাজে খরচে ধনসম্পদ উজাড় করে দেন তবে তাতে প্রকাশ পায় উচ্ছৃঙ্খলতা। আবার সৌন্দর্যপিপাসু, সংস্কৃতিবান মানুষ অভাব-অনটনের মধ্যেও বেহিসাবি খরচ করেন দেশভ্রমণে, বই কেনায় কিংবা ভালো লাগা ছবি বা পুরাকীর্তি সংগ্রহে ।
মন্তব্য : বস্তুত খরচের মধ্যেই মানুষের মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিগত মানসপ্রবণতা, যা তার স্বাতন্ত্র্যের পরিচায়ক ।