আহসান মঞ্জিল ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখ।
অনেকদিন যাবৎ ঢাকায় আছি অথচ ঢাকার ঐতিহ্য আহসান মঞ্জিল দেখা হয়নি। লজ্জিত হওয়ার
বিষয়ই বটে। একদিন সময় করে ঘুরতে গেলাম ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল।
আহসান মঞ্জিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কুমারটুলী এলাকার ঢাকার নওয়াবদের আবাসিক
প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাছারি। বর্তমানে নিজের বাসভবনে পরিণত করেন। ১৮৩০ সালে
খাজা আলীমুল্লাহ ফরাসিদের কাছ থেকে এ কুঠিবাড়ি কিনে নেন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার
সাধন করে এটি নিজের বাসভবনে পরিণত করেন। ১মিটার উঁচু বেদির উপর স্থাপিত দ্বিতল
প্রাসাদ ভবনটির নিচতলার মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫মিটার এবং দোতলায় ৫.৮
মিটার। প্রাসাদটির উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকে একতলার সমান উঁচু করে গাড়িবারান্দা।
দক্ষিণ দিকের গাড়িবারান্দার উপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে একটি সুবৃহৎ খোলা
সিঁড়ি নদীর ধার পর্যন্ত নেমে গেছে। বারান্দা ও কক্ষগুলোর মেঝে মার্বেল পাথরে
শোভিত।
আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তর ভাগে দেখা যায় গম্বুজের দুপাশে ভবনটি দুটি সুসম অংশে
বিভক্ত করা যায়। দোতলার পূর্ব দিকে রয়েছে ড্রইং রুম, উত্তরে লাইব্রেরি। পশ্চিম
দিকে আছে বৃহৎ জলসাঘর। এর উত্তরে হিন্দুস্তানি কক্ষ এবং পশ্চিম প্রান্তে ৪টি
বর্গাকারে কক্ষ। এসব দেখার পর গেলাম গম্বুজ কক্ষের উত্তর পাশের কক্ষটিতে। সেখানে
রয়েছে সিঁড়ি যা আঙুরলতা সমৃদ্ধ লোহার তৈরি ব্যালাস্টার এবং জ্যামিতিক নকশাসমৃদ্ধ
কাঠের সিলিং। প্রাসাদ কক্ষের দেয়ালগুলো প্রায় ০.৭৮ মিটার পুরু। দ্বিতল
অন্দরমহলটির উচ্চতা রংমহলের চেয়ে সামান্য কম হবে বলে মনে হলো। এ ভবনের ছাদ
নির্মাণে লোহার কড়ি বরগা ব্যবহৃত হয়েছে।
আহসান মঞ্জিলের সঙ্গে বাংলার ইতিহাসের বেশকিছু অধ্যায় জড়িত। উনিশ শতকের শেষভাগ
থেকে পাকিস্তানের প্রথম পর্ব পর্যন্ত পূর্ব বাংলার মুসলমানদের নেতৃত্ব দেওয়া
হয়েছে এখান থেকেই। বিট্রিশ ভারতের যেসব ভাইসরয় ও গর্ভনর ঢাকায় এসেছেন তাদের
প্রত্যেকেই এখানে এসেছেন। খাজা সলিমুল্লাহ তার যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড এ
প্রাসাদ থেকেই পরিচালনা করেছেন।
আহসান মঞ্জিলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকার এ ভবনটিকে জাদুঘরে
পরিণত করেন। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রাসাদটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের
নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রায় সারাদিন আহসান মঞ্জিলে কাটিয়ে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন
দেখে সন্ধ্যাফ আগেই বাসার পথে রওয়ানা দিই।