‘আকস্মিক দুর্ঘটনা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
আকস্মিক দুর্ঘটনা
সেই ধূসর মধ্যাহ্নে আমরা হাঁটছিলাম আঁকাবাঁকা পথ ধরে লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে।
ইতিহাসের অলিতে গলিতে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে গেল আমাদের পূর্বপুরুষদের কথা। কখন
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে আমাদের জানা নেই। ঠিক রাত যখন দশটা,
তখন আমাদের হুঁশ ফিরলো। হুঁশ ফিরেই দেখলাম আমি আর রবিন আমরা দুজনেই মাটিতে পড়ে
আছি আর আমাদেরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু অদ্ভূত চেহারার মানুষ। একটু ভালো করে
চোখ মেলেই বুঝতে পারলাম এরা পাহাড়ি উপজাতি। কিন্তু আমরা তো পাহাড়ে হাঁটছিলাম
এখানে আসলাম কী করে। ভাবতে লাগলাম বিগত কয়েক ঘণ্টা আগে আমাদের সাথে কী ঘটেছিল।
হা! মনে পড়েছে। আমি আর রবিন যখন পাহাড়ের পাদদেশে হাঁটছিলাম হঠাৎ করেই দমকা
হাওয়া শুরু হয়। তারপর ঝড়ো বাতাসে আমরা নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পা
পিছলে নিচে পড়ে যাই। আর কিছু মনে নেই। সম্ভবত আমরা নিচে পড়ে অজ্ঞান হয়ে
গেছিলাম। কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো এত উঁচু থেকে পড়েও আমরা বেঁচে আছি কী করে।
আমার ভাবনার সমাধান দিল পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক উপজাতি। দেখতে কিছুটা বেঁটে,
চ্যাপ্টা নাক, চুলগুলো উসকুখুসকু। যদিও তার ভাষা বুঝতে একটু কষ্ট হয়েছে। সে যা
বলেছে তার মর্মার্থ ছিল এরূপ, ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আপনারা বেঁচে গেছেন। ভাগ্যিস
নিচে অনেক ঝোপঝাড় ছিল। না হলে তো মারাই যেতেন। শব্দ শুনে পাশেই এক জুম চাষী
এগিয়ে আসে এবং আপনাদেরকে উদ্ধার করে। এটা বলে সে সামনে দাঁড়ানো মধ্যবয়সী জুম
চাষীকে দেখালো। আমি কৃতজ্ঞতার এগিয়ে তার দিকে দু’হাত তুলে নমস্কার করলাম। এরই
মধ্যে বারো-তেরো বছরের এক কিশোরী মেয়ে আমাদের জন্য খাবার ও পানি নিয়ে আসল।
দেখলাম ভাত, ডাল আর একটি অপরিচিত তরকারি নিয়ে এসেছে। দেখতে অনেকটা আমাদের
অঞ্চলের সাদা ডাঁটার মতো। খেয়ে বুঝলাম যে এটা আসলে পাহাড়িয়া কচি বাঁশ। পাহাড়ে
এটি একটি জনপ্রিয় খাবার। যাই হোক আমরা খাওয়া শেষ করলাম এবং রাতটা তাদের ডেরাতেই
কাটালাম। পরের দিন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা ও প্রণাম জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা
দিলাম। দশ-বারো বছরের একটি ছোট্ট ছেলে আমাদেরকে পথ দেখিয়ে মেইন রাস্তায় তুলে
দিয়ে গেলো। আমরা বাসে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। জীবনে অশেষ কৃপায় বিপদ
থেকে উদ্ধারও হই। ঠিক বেলা দেড়টার দিকে আমরা বাড়িতে পৌঁছাই ।