‘আলোকিত সমাজ গড়ো’ শিরোনামে আলোচনা সভার প্রধান অতিথির জন্য একটি ভাষণ রচনা
কর।
আলোকিত সমাজ গড়ো
শ্রদ্ধেয় সভাপতি, উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ও সুধীমণ্ডলী আসসালামু আলাইকুম । ‘আলোকিত
সমাজ গড়ো' শীর্ষক আজকের এই মহতী আলোচনা সভার ব্যবস্থা করায় আমি প্রথমেই
আয়োজকদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত সুধীবৃন্দ,
“অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে
তারা
যাদের হৃদয়ে প্রেম নেই প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ
তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।”
বিশ্বব্যাপী জাতীয় নেতৃবৃন্দের চরিত্র ও কর্মকাণ্ড
দেখে সীমাহীন বিতৃষ্ণা নিয়েই এ কথাগুলো বলেছিলেন রূপসী বাংলার নির্বিরোধী কবি।
কিন্তু না, অমৃতের বরপুত্র, আলোকিত গ্রন্থের ধারক ও বাহক মানুষ এরূপ অদ্ভুত
আঁধারকে কখনো মেনে নেয়নি, মেনে নিতে পারে না। মনুষ্য সমাজ কোনো অন্ধকারপুরী
নয়, মনুষ্য সমাজ হলো আলোকিত সমাজ। দিয়াশলাইয়ের বাক্সে যে আগুন থাকে সে আগুন
থাকে প্রচ্ছন্ন। তাকে ঘষা দিয়ে জ্বালাতে হয়। অনুরূপভাবে মনুষ্য সমাজ আলোকিত
বলা হলেও সে আলো প্রচ্ছন্ন থাকে। তাকে জ্বালাতে হয় শিক্ষার মাধ্যমে। আর তাই
যৌক্তিক কারণেই আজকের সভার শিরোনাম- ‘আলোকিত সমাজ গড়ো’।
সুধীমণ্ডলী,
মানুষ হিসেবে জন্ম নিলেই প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা যায় না। মানুষকে মনুষ্যত্ব
অর্জন করতে হয়। মনুষ্যত্ব বলতে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা উৎকৃষ্ট গুণাবলি
বোঝায়। সে সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। জ্ঞান মানুষকে যোগ্যতা দান করে।
জ্ঞান মানুষকে বিশ্বজগতের সঙ্গে পরিচিত করে। মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের
জন্য জ্ঞানের সহায়তা অপরিহার্য। জ্ঞানের আলোকেই মানুষের জীবন বিকশিত হয়,
আলোকিত হয়। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষিত মানুষই আলোকিত
মানুষ। তাই আলোকিত সমাজ গড়ার অর্থ হলো শিক্ষিত সমাজ, জ্ঞাননির্ভর সমাজ গড়ে
তোলা।
সুধীবৃন্দ,
আলোকিত সমাজ ও জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে ওঠে
আলোকিত মানুষ। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও জাতির সার্বিক কল্যাণে আলোকিত মানুষই
মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষা মানুষের মানবিক, দৈহিক, নৈতিক প্রশিক্ষণের
ধারাবাহিক পদ্ধতি বলে বিবেচিত। জ্ঞানার্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে শিক্ষার বিভিন্ন
পদ্ধতির প্রয়োগে জীবনকে উৎকর্ষমণ্ডিত করা হয়, শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন
বিষয়ে পারদর্শিতা বিকাশ লাভ করে। ফলে তারা নানা গুণের সমন্বয়ে আলোকিত মানুষ
হয়ে উঠতে পারে, গড়তে পারে আলোকিত সমাজ।
সুধীমণ্ডলী,
আমরা আলোকিত মানুষ চাই, আলোকিত সমাজ চাই। ব্যক্তিজীবনের শিক্ষার আলো জাতীয়
জীবনে প্রতিফলিত হয়। প্রতিটি ব্যক্তি যদি শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানবিজ্ঞান ও
চরিত্র-মাধুর্যের আলোয় আলোকিত হয়, তাহলে জাতিকে আলোকিত বলা যায়। আলোকিত
মানুষের সমাজ ছাড়া জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন। শিক্ষার আলোকে জাতীয় জীবন
আলোকিত হলে জাতীয় জীবন বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় হয়। শিক্ষার
আলোয় জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে জাতি হয়ে ওঠে সমৃদ্ধ। যে জাতির শিক্ষিতের হার
যত বেশি সে জাতি তত উন্নত। কাজেই আমরা জাতির কল্যাণে আলোকিত সমাজ গড়ে তুলতে
চাই।
উপস্থিত গুণীজন,
মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু একজন মানুষের মূল্যবোধ যখন
নষ্ট হয়ে যায়, তখন সে আর মানুষ থাকে না। তার দ্বারা সমাজে যেকোনো অপকর্মই তখন
সংঘটিত হতে পারে। এ রকম মূল্যবোধহীন মানুষের সংখ্যা সমাজে বেড়ে গেলে সেই সমাজ
আঁধারে ঢেকে যায়। সমাজের সুস্থতার জন্য, সমাজের সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনে তাই
আলোকিত মানুষের প্রয়োজন। এসব আলোকিত মানুষ নিজেরা শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোয় যেমন
উদ্ভাসিত, তেমনি তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজের মানুষকে আলোক সঞ্চারিত করে
উদ্ভাসিত করে তুলতে পারেন। আর স্পর্শমণিরূপ এসব আলোকিত মানুষ পেতে হলে আলোকিত
সমাজ, শিক্ষিত সমাজ, জ্ঞাননির্ভর সমাজ গড়ে তোলার বিকল্প কিছু নেই।
পরিশেষে, এই মহতী ও সুন্দর অনুষ্ঠানের প্রধান আসনে বসিয়ে আপনারা আজ আমাকে যে
বিরল সম্মান প্রদান করলেন, আপনাদের এ বদান্যতার কথা, ভালোবাসার কথা আমি কোনোদিন
ভুলব না। এই সুন্দর অনুষ্ঠানটি যারা আয়োজন করেছেন এবং নেপথ্যে থেকে যারা
সুচারুভাবে পরিচালনা করছেন, তাদের সবাইকে জানাই কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। আর এতক্ষণ
ধৈর্য ধরে আলোকিত সমাজ গড়ার যেসব উদ্যোক্তা ও কারিগর আমাদের বক্তব্য শুনলেন,
সেই দর্শক-শ্রোতাদের পুনরায় কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এখানেই বক্তব্য
শেষ করছি।
আল্লাহ হাফেজ।