'আমার শৈশব স্মৃতি' শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
আমার শৈশব স্মৃতি
‘হারানো সে দিনের কথা বলব কী রে হায়- সে চোখে দেখা প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।'
হ্যাঁ, আমার জন্ম গ্রামে। বাংলাদেশের হাজারো গ্রামের মতো আমার গ্রামটিও ছায়া
সুনিবিড়। জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু আমার শৈশব দিনগুলো আমার
স্মৃতিপটে অক্ষয় হয়ে আছে।
স্নিগ্ধ পল্লিপ্রকৃতি ছিল আমার শৈশবের অন্তরঙ্গ বন্ধু। মনে পড়ে শৈশবের সেই দুরন্ত
দিনগুলোকে। দস্যিপানায় ছিলাম অদম্য। সারাদিন কাটত ছোটাছুটি, লুটোপুটিতে। চাকরির
প্রয়োজনে বাবা থাকতেন বিদেশে। মায়ের আদর ভালোবাসা শাসনের তুলনা ছিল অনেক বেশি।
ফলে আমার ইচ্ছাটাই অনেক ক্ষেত্রে প্রাধন্য পেত। তার উপর দাদিমা ছিল আমার সব কাজের
পক্ষে। তবে মাকে ভয়ও পেতাম খুব। সকাল হলেই ছুট দেয়ার জন্য মনটা উড়ু উড়ু করতো।
নাশতাটা করতে পারলেই হতো, ছুটে বেরিয়ে যেতাম। বাড়ির পাশেই ছিল আমবাগান। যেখানে
বন্ধু রাশেদকে নিয়ে গোপন আস্তানা তৈরি করেছিলাম।
বৈশাখের আম কুড়ানো ছিল সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। ভোর হতেই দাদির তৈরি করে দেওয়া
সুপুরির খোলার ব্যাগ নিয়ে আম কুড়াতে বেরোনো, কালবৈশাখীর সময় গাছতলায় ছোটাছুটি
ইত্যাদি মধুময় স্মৃতি এখনও মানসপটে জ্বলজ্বল করে। সবচেয়ে যে আমার চেতনায় সদা
জাগ্রত সেটা আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীকে।
গ্রামের শীর্ণ নদীতে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা ছিল আমার নৈমিত্তিক কাজ। প্রতিদিনের
মতো সেদিনও সাঁতার কাটছিলাম। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম যে, একবারেই সাঁতরে
নদীর ওপারে যেতে পারবো। জেদের বশবর্তী হয়ে সাঁতার দিলাম কিন্তু মাঝ নদীতে গিয়ে
পড়লাম ঘূর্ণিস্রোতে। আর এগুতে না পেরে অবশেষে চিৎকার দিলাম, যা শুনে মাছ ধরতে আসা
জেলেরা আমাকে উদ্ধার করে। শৈশবের এসব মধুর স্মৃতি মানসপটে এখনও অমলিন। জীবনে
সবকিছু ভুলে গেলেও শৈশবের সেই মধুময় স্মৃতিগুলো কখনো ভোলার নয়।
একই খুদে গল্প আবার সংগ্রহ করে দেওয়া হলো
‘হারানো সে দিনের কথা বলব কিরে হায়’... কথাটি সেই কবেকার। কার কাছে শুনেছি মনে নেই। কিন্তু কথাটা আমার স্মৃতিতে অম্লান। দিন যায় রাত আসে। রাত পেরিয়ে দিন। এভাবে কেটে যায় মাস, বছর। কিন্তু হারানো দিন সবসময় অমলিন। অতীতের সুখময় দিনগুলো কখনো ভুলবার নয়। আমারও আছে এক সুন্দর সুরভিত অতীত। ছোটবেলায় আমাদের ছিল এক দুষ্ট ছেলের দল । এই দলের কাজ ছিল সারাদিন হৈচৈ করে বেড়ানো, পুকুরে সাঁতার কাটা, গ্রামের মাঠে ঘাটে ফুটবল, ক্রিকেট, গোল্লাছুট খেলা আর ভোরবেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আম, জাম কুড়ানো। আমাদের দলে রাজিব আর শফিক ছিল সবচেয়ে দুষ্ট। ওরা মানুষকে নানাভাবে জ্বালাতন করে মজা পেত। অন্যের ঘরের মুরগি, হাঁস চুরি করে ওরা বনভোজনের আয়োজন করত। আমরা সবাই সে বনভোজনে করতাম। অধিকাংশ সময় এই বনভোজন হতো শফিকদের বাড়ির পেছনের সুবিশাল বাগানে। আমরা সবাই নিজ নিজ ঘর থেকে লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে যেতাম। রহমত ছিল রান্নায় সিদ্ধহস্ত। সে সানন্দে রান্নার দায়িত্ব গ্রহণ করত। তবে সে যেহেতু রান্না করত এজন্য বাসা থেকে সে কিছু নিয়ে আসতো না। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে সিরিয়াস ছিল মুন্না। একসাথে হাফ কেজি চালের ভাত সে একাই হজম করতে পারতো। এজন্য বনভোজনের দিন সে বাসা থেকে একাই এক কেজি চাল চুরি করে আনতো। সারাদিন খাওয়া-দাওয়া করে আড্ডা দিয়ে দুপুরের পরে সবাই বাসায় ফিরতাম। এরপর বাবা-মায়ের বকুনি খাওয়ার পালা শুরু হতো। আমার মা অবশ্য খুব বেশি বকাঝকা করতেন না। শুধু কয়েকবার কড়া গলায় জিজ্ঞেস করতেন— কোথায় ছিলি সারাদিন? আমি দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করতাম। আর মা ধমক দিয়ে বলতেন— যা, খাওয়া-দাওয়া করে পড়তে বস। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তো মুন্না । ওর বাবা লাঠি হাতে নিয়ে ওকে তাড়া করতো। ও দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে খড়ের গম্বুজের নিচে গিয়ে আশ্রয় নিতো। এরপর কোনো বন্ধুর বাসায় রাত কাটিয়ে পরের দিন পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে বাসায় ফিরতো। হারানো দিনের এসব অমলিন স্মৃতি কখনো ম্লান হবার নয়।
Outstanding..😍
ReplyDelete