আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

জোর করে আতিথ্য গ্রহণের অভিজ্ঞতা

জোর করে আতিথ্য গ্রহণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।



২০০১ সালের ঘটনা। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। এলাকার ভালো ক্রিকেটার হিসেবে নাম ডাক ছিল। এ গ্রাম সে গ্রাম থেকে হায়ার করে খেলতে নিয়ে যেত। সেদিন আমাদের গ্রাম থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অন্য এক গ্রামের মাঠে খেলা ছিল। খেলা শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমি ভালো খেললেও দল হেরেছে। তাই তারা আর কোনো সহানুভূতি না দেখিয়ে যে যার যার মত চলে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় তাদের সাইকেলের পিছনে গিয়েছিলাম। আসার সময় দেখি আমি একা, অচেনা এলাকা। কোনদিকে হাঁটছি জানিনা। প্রচন্ড ক্ষুধায় চোখে অন্ধকার দেখছি। মনে মনে দলের অন্যদের গালাগালি করছি আর প্রতিজ্ঞা করছি, কোথাও হায়ারে খেলতে যাব না। কিন্তু এখানে কে খেতে দেবে, কে থাকতে দেবে? রাত প্রায় দশটা বেজে গেল। চোখ-কান বুজে সঙ্কোচ কাটিয়ে একটা বাড়িতে ঢুকে পড়লাম। গিয়ে দেখি মধ্যবয়সী এক মহিলা উঠানের চুলোয় রান্না করেছে। কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। বললাম, 'পিসিমা কি রান্না করছেন? একটু তাড়াতাড়ি করেন। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। ভাবটা এমন, আমি যেন তার কোন পরমাত্মীয়। তিনি বললেন একটু বিরক্ত স্বরেই, 'কেডা তুমি, কনতে (কোথা থেকে) আইছো? আমাগো সগগলের হিসাবে রান্না। তুমি অন্যহানে দেহ। তাদের পারিবারিক অবস্থায় কোথাও দারিদ্র্যের ছাপ দেখলাম না। তবুও কেন বললেন এ কথা? তার বলার ধরনে আমি সাময়িকভাবে অপ্রস্তুত হলেও সামলে নিলাম। কোমল স্বরে বললাম, 'দেখেন আপনাকে আমার পিসিমার মত দেখতে। পিসিতো মায়ের মত। একটি ক্ষুধার্ত ছেলে খেতে চাইছে তাকে খেতে দেবেন না, মায়েদের মন এত কঠিন হয়? আমি এই খেতে বসলাম। না খেয়ে নড়ছি না।' আমার বলার ধরনে তিনি কি বুঝলেন জানিনা, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, 'হাত মুখ ধুইয়া বসো, আমি ভাত দিতাছি, আর সহালে খাইয়া তারপর যাইবা।' আমি এটুকুই বলতে পারি তারপরে যে যত্ন ও আন্তরিকতা পেয়েছিলাম তা খুব কম জায়গায়ই পেয়েছি।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post