বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।



স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটি আজ ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’। অথচ ১৯৬২ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ এর অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ ও স্বাধীনতা ঘোষণার পরিকল্পনা প্রণয়ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় দেশি-বিদেশি ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার প্রধান ও সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট শোনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই বাড়িটি। এই বাড়িটি থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বহুবার গ্রেফতার করেছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে এই বাড়িতেই তাকে সপরিবারে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট প্রাণ দিতে হয়েছিল। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হলে তিনি এটি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এর কাছে হস্তান্তর করেন। ট্রাস্ট এই বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করে।এসব গুরুত্বপূর্ণ কথা আব্বার কাছ থেকে শুনে ঐতিহাসিক তাৎপর্যমণ্ডিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি খালাতো ফুফাতো ভাই বোন মিলে দেখতে গেলাম। কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ৩০ টাকার বিনিময়ে টিকিট কিনে ভেতরে প্রবেশ করলাম। একতলার প্রথমেই চোখে পড়ল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, মনে হল যেন বঙ্গবন্ধুই দাঁড়িয়ে আছেন। মাথা নুয়ে এলো শ্রদ্ধায় কৃতজ্ঞতায়। ঐতিহাসিক মুহূর্তের অনেক দুর্লভ ছবি সুবিন্যস্তভাবে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। মার্শাল টিটো, ইন্দিরা গান্ধী, সালভাদর আলেন্দে, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, আনোয়ার সাদাত, ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি একেবারেই জীবন্ত মনে হয়। চীনের নেতৃবৃন্দ, কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ, জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা, ও আই সি সম্মেলন সহ বহু অজানা বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হলাম। এটি ছিল ড্রয়িং রুম, এর পাশের কক্ষটিই তার পড়ার ঘর। শুনলাম এখানে বসে পড়ার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করতেন। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে দৃষ্টি থমকে গেল দেয়ালে, গুলিবিদ্ধ অনেক ছিদ্র। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে অসংখ্য গুলি ছোড়া হয়েছিল ব্রাশফায়ারে, সেই নিদর্শন এখনো তাজা মনে হয়। এখানে বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি প্রতিকৃতি রয়েছে। একবারের বেশি তাকানো যায়না অশ্রুসিক্ত হয়ে আসে দৃষ্টি। দোতালায় প্রথমেই বঙ্গবন্ধুর শোবার ঘর, তারপর হাসিনা-রেহানা, কামাল ও জামালের ঘর। এগুলোতে রয়েছে তাদের ব্যবহৃত নানা আসবাব ও জিনিসপত্র। প্রদর্শন সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেলের বল, হকিস্টিক ব্যাট, হেলমেট, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত পাইপ, চশমা সহ বিভিন্ন জিনিস। কেউ নেই আজ, কেবল তাদের ব্যবহৃত জিনিস গুলো রয়েছে মূল্যবান স্মৃতি হয়ে। গাইডের আবেগঘন বর্ণনায় দুচোখ বুজে এসেছে বারবার। চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলাম হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক স্মৃতিধন্য ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে। কখনো ভুলবো না, কোনদিন এই ভুলবো না বঙ্গবন্ধুকে, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের নিদর্শনগুলোকে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post