"একটি ভৌতিক বিষয়" অবলম্বনে খুদে গল্প রচনা করো।
একটি ভৌতিক বিষয়
খেলাধুলা শেষ করে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা ছেলেটির নিয়মিত কাজ। আজও তার ব্যতিক্রম
হয়নি। বাসায় ফিরতেই মায়ের বকুনি। সারাদিন তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘরের কোন
কাজে তার মন নেই। বাবা একা একা মাঠে কাজ করে। তার খাবারটা নেয়ার মতো লোকও নেই
ইত্যাদি নানা কথার বকুনি চলে পরেশের ওপর। সে চুপ করে থাকে। সে জানে এ সময় চুপ
করে থাকাটাই তার জন্যে মঙ্গল। নইলে উত্তমমধ্যম পড়ার সম্ভাবনা নেহায়েৎ কম নয়।
ঘরে তেল নেই। ঘরের বাতি জ্বালাতে হবে। পরেশের বাড়ি থেকে একটু দূরেই তার খালার
বাড়ি। মা তাকে তেল আনার জন্য একটি প্লাস্টিকের পট হাতে দিয়ে খালার বাড়ি যেতে
বলে। কিন্তু এখানেই তার বিপত্তি। সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে যেতে তার ভয় হয়। যা
হোক, মায়ের আদেশ। অমান্য করার সুযোগ নেই। পট হাতে বের হল পরেশ। তাদের বাড়িটা
অনেক বড়। লম্বা দরজা। দুপাশে বিশাল সুপারি ও নারকেলের বাগান। সারি সারি লম্বা
গাছের মাঝখান দিয়ে সরু চলার পথ। ঝিঁঝি পোকার শব্দ আর দক্ষিণা শোঁ শোঁ বাতাস
বইছে। এরই মাঝে হেঁটে চলছে পরেশ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিসের যেন চেচামেচি শব্দ কানে
এল তার। পা আর চলে না তার। থমকে দাঁড়ায় সে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাবতে থাকে।
চোখ বন্ধ করে সাহস নেয়ার চেষ্টা করে। আবার চোখ খুলে সামনে পা বাড়ায়। বেশি দূর
যেতে পারে না। কে যেন তার পেছন পেছন হাঁটছে। পেছনে ফিরে তাকায় সে। কাউকে দেখতে
পায় না। ভয়ে দুরু দুরু বুক কাঁপে। আবার সামনে চলে। হঠাৎ লম্বা সুপারি গাছ থেকে
সাদা ধবধবে কি একটা যেন তরতর করে নামতে দেখে পরেশ। চিৎকার করে ওঠে সে। কিন্তু কেউ
তার চিৎকার শোনে না। কারণ বাড়ি থেকে সে অনেক দূরে চলে এসেছে। একবার ভাবে বাড়ি
ফিরে যাবে। আবার ভাবে ফিরে গেলে মায়ের মার খেতে হবে। কোন প্রকারে বাড়ির সীমানা
পার হয়ে রাস্তায় ওঠে সে। বাম পাশে বিশাল বাগান। ডানপাশে সুবিশাল মাঠ। মাথা নিচু
করে পথ চলে সে। ওপরে ওঠাতে ভয় হয়। ভয়ে ভয়ে মাথা উঠানোর চেষ্টা করে। চোখ
তুলতেই বিলের মাঝখানে বিশালদেহী কী যেন দেখতে পায়। মাটি থেকে আকাশ ছুঁই ছুঁই
লম্বা সাদা ধবধবে অবয়ব। নিজেকে সামলাতে না পেরে ভোঁ দৌড় দেয় পরেশ। এক দৌড়ে
খালার বাড়ির উঠোনে গিয়ে পড়ে যায় সে। শব্দ শুনে দৌড়ে আসে বাড়ির লোকজন। তার
খালা তাকে টেনে তুলে ঘরে নেয়। মাথায় পানি আর সরিষার তেল মিশিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ
পর জ্ঞান ফিরে পরেশের। চোখ খুলে আবারো চিৎকার দিয়ে মূর্ছা যায় সে। খালার
চেহারাকে বিলের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সে ভূতটিকে মনে করে। ঘুমিয়ে পড়ে সে। সকালে
ঘুম থেকে জেগে কিছুই মনে পড়ে না তার ৷