মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি ক্লাবের/বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে কিছু বলার জন্য
একটি ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, “১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, ‘মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, “বিজয় দিবস চেতনায় অম্লান”–বিষয়ে আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, “১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, ‘মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, “বিজয় দিবস চেতনায় অম্লান”–বিষয়ে আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ রচনা কর।
‘মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা
সম্মানিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সমবেত সুধীমণ্ডলী এই মহান দিনে আমার
সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।
“মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি।”
এই মহান বাণী স্বাধীনতার অমর সংগীত আজও আমার হৃদয়ের বীণায় বাজে; একই সাথে আনন্দ
ও বেদনার অশ্রু ঝরায় চোখে। আজ ১৬ই ডিসেম্বর। বাঙালির জীবনে এক পরমানন্দের দিন,
শৃঙ্খল ভাঙার দিন, স্বাধীন আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়ানোর দিন। ১৯৭১
সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলার আকাশে যে শকুনের চঞ্চুর ঠোকর বসেছিল সেই ঠোকরের
প্রতিরোধে জ্বলে উঠেছিল লাখো বাঙালি। যার ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল
সাড়ে চারটায় ঢাকার রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে
আত্মসমর্পণ করেন পাকিস্তানি সেনাদের অধিনায়ক লে. জে. এ. কে. নিয়াজি। বিদায়
নেয় পাকিস্তানি শকুনেরা; অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের। ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির
আত্মত্যাগ ও গৌরবোজ্জ্বল মহিমায় ভাস্বর।
আজকে স্বাধীনতার ৪৬ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীনতা
লাভে আমাদের যে ভাইবোনেরা আত্মত্যাগ করেছেন। তাঁরা জীবন দিয়ে আমাদের পথ করেছেন
কন্টকমুক্ত এনে দিয়েছেন চিন্তার স্বাধীনতা।
প্রিয় স্বাধীনতাভোগী দেশপ্রেমিক বন্ধুগণ, বাঙালির ইতিহাস দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস। আবার শৃঙ্খল ভাঙার সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হওয়ার ইতিহাস। ১৯০ বছর ব্রিটিশ
শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে বাঙালি জনগোষ্ঠী। জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ
হয়ে শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিনের জিঞ্জির ছিঁড়ে
বেরিয়ে এসেছে বাঙালি জনতা, ব্রিটিশ বেনিয়ারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু
নব্য শোষক পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শোষণের বেড়াজালে বন্দি করে পিষ্ট করেছে পূর্ব
বাংলাকে। প্রথম আঘাত শুরু হয় ভাষা দিয়ে। কোটি কোটি জনতার মুখের ভাষাকে উপেক্ষা
করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করা হলে বাঙালি ছাত্র-জনতা
বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। রাজপথ রঞ্জিত করে আমার ভাইয়েরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার
মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে। ক্রমান্বয়ে ১৯৬৬
সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী
লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ। বিপুল জনগোষ্ঠীর এ রায়কে পাকিস্তানি
শাসকগোষ্ঠী উপেক্ষা করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বিপ্লবী বাঙালির রক্তে স্বাধীনতার
নেশা দুর্বার হয়ে ওঠে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা যুদ্ধ। অবশেষে ত্রিশ
লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাংলার মুক্তিপাগল মানুষ বিজয় অর্জন করে।
আজ এই মহান দিবসে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ আমরা যেন এই রক্তঝরা ইতিহাস ভুলে না
যাই। আজ স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত। এছাড়া
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, রাহাজানি, লুণ্ঠন, হত্যায় প্রতিনিয়ত মানুষ দিশেহারা হয়ে
পড়ছে। আসুন আমরা অঙ্গীকার করি, আমাদের সমাজ থেকে এই দুষ্টচক্রকে নির্মূল করে
প্রতিটি স্তরে শান্তি ফিরিয়ে আনবই। তাহলেই সমাজ
পরিবর্তন হবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।