বিড়াল
বিড়াল, ছোটবেলা থেকেই বাঘের মাসি হিসেবে নানি-দাদিরা কবিতার বাক্যে পরিচয় করিয়েছেন অসংখ্যবার। কিংবা বিড়ালের মিউ ডাকটাই তাদের ডাকনাম হয়ে দাঁড়াত। গ্রামের রসুই ঘরের আশপাশে কিংবা শহরের বহুল বসতি বা বাজারের পাশেই সাধারণত দেখা মেলে এদের। বিড়ালের আদি পুরুষের বসবাস ছিল অরণ্যেই, সেখানে নানা ধরনের হিংস্র প্রাণী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এক জাত বিড়ালের দল বন ছেড়ে বসবাস শুরু করে মনুষ্য সমাজের পরিবেশে। আজ বুনো বিড়াল বিলুপ্তপ্রায় বললেই চলে, প্রতিযোগিতায় টিকে আছে অরণ্য ছেড়ে আসা বিড়ালরাই। তবু এদের বাঁচতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। নিজেদের খাবারের জোগান দিয়ে নানামুখী অসুস্থতা পার করেই এদের টিকে থাকতে হয়। তবে এই গল্পটা একটু ভিন্ন হয় পোষা বিড়ালগুলোর ক্ষেত্রে। শৌখিন ব্যক্তিরা ভিনদেশি জাতের কিংবা পার্সিয়ান জাতীয় বিড়াল শখে পোষেন অনেকেই। অনেকের হয়তো অজানা থাকতে পারে, দেশি বিড়াল পোষার চর্চাও আজকাল অনেক। একজন একা ব্যক্তির একাকিত্ব দূর করতে একটি বিড়াল ছানাই যথেষ্ট, যদি সে হয় আপনার পোষ্য ছানা। বিড়াল পোষার পেছনে একেক জনের একেক ধরনের ঘটনা রয়েছে। একেক জনের গল্প একেক রকম। স্কুলপড়ুয়া মেয়ে একটি বাইরের বিড়ালকে খাবার দিত বারান্দা থেকে। সে তো পোষ মানেনি। তবে মেয়েটির ঘরের কোণে প্রসব করা ছানাগুলো মেয়েটি ফেলতে পারেনি। ছানাগুলো এখন তার পোষ্য। অনেক শীতের সকালে ক্লাস করতে যাওয়া কলেজপড়ুয়া ছেলেটি রাস্তার পাশে অসহায় অবস্থায় অনবরত ডাকতে শুনছে একটি বিড়াল ছানাকে। মা বিড়ালও কাছে নেই। খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে তাকে দেখে! ছেলেটি বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে বাসায় এনে তার পোষ্য করে তুলল। এ ধরনের অনেক ঘটনার মাধ্যমে অনেকেই বিড়াল ছানাকে নিজেদের পোষা প্রাণী করে রাখছেন তাদের সঙ্গেই; তাদের পরিবারের একজনের মতো করে। এবার আসা যাক এই বিড়াল পোষা মানুষ নিয়ে আশপাশের মানুষের মন্তব্য। অনেকের ধারণা, বিড়ালের মাধ্যমে মানুষ আক্রান্ত হয় নানাবিধ অসুখে। কথাটি সত্যি হলেও পুরোপুরি নয়। এই আধুনিক বিশ্বে ইন্টারনেটে ব্রাউজ করলেই মেলে অনেক কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের তথ্য। পশু চিকিৎসকদের মতে, একটি পোষা বিড়ালের নানাবিধ রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বাইরের বিড়ালের চেয়ে অনেকাংশে কম। তবুও নিজের পোষ্য বিড়ালের নানা রোগের টিকা বা প্রতিষেধক দেয়া যায়, যা নিয়মিত ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ে থাকলে পোষা বিড়ালের রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। অনেকের ভাবনা থাকতে পারে, বিড়াল কেনই বা পুষব, কী লাভ হবে তাতে? ঠিক, বিড়াল পুষে হয়তো মালিকেরা তেমনভাবে লাভবান হন না। কিন্তু একটি প্রশান্তি নিয়ে থাকেন বিড়ালপ্রেমীরা। যারা বিড়াল ভালোবাসেন, তাদের আসলেই কোনো লাভের প্রয়োজন হয় না। তারা নিতান্তই নিজেদের ভালোলাগা ও প্রাণীদের প্রতি প্রেম থেকেই এদের উদ্ধার করেন। একটি নিরাপদ বাসের জায়গা আর খাবারের নিশ্চয়তা ও রোগমুক্ত সুন্দর জীবন দিয়ে থাকেন। আর এর বিপরীতে তারা শুধুই প্রশান্তি খুঁজে পান। বলতে পারেন, বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। কিন্তু প্রাণীও আমাদের পরিবেশের সম্পদ। প্রাণীপ্রেমীদের জেনে ভালো লাগবে, বর্তমানে এই লাভহীন প্রাণীদের নিয়ে ভাবতে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। এরাও পরিবেশের সম্পদ। আর এই উপলব্ধিতেই অনেক প্রাণীপ্রেমী দেশের নানা অঞ্চল হতে যে যেভাবে পারছেন, প্রাণীসম্পদ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। গড়ে উঠেছে রেসকিউ টিম। ফেসবুকে এ গ্রুপগুলোতে দেখা মেলে লাখো প্রাণীপ্রেমী ও বিড়ালপ্রেমীদের, যারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাঘের মাসিদের সংরক্ষণ করতে। মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করে বিড়াল হত্যা কম করতে। তারা আপনার-আমার মতোই সাধারণ মানুষ ও প্রাণীপ্রেমী। হয়তো রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচাতে এই ব্যস্ত আর শহুরে জীবনে আমাদের করণীয় খুব কম, কিন্তু চাইলে সবাই বাঘের মাসিকে টিকিয়ে রাখতে পারি। ঘরে তুলে পোষা না গেলেও অন্তত অকারণে এদের প্রাণনাশ না করেও সম্ভব এদের জন্য এগিয়ে আসা।