‘বিষাদ স্মৃতি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখো।
বিষাদ স্মৃতি
ছুটিতে দাদুবাড়ি এসেছে আনন্দ। পড়ন্ত বিকেলে সে দাঁড়ায় তার স্মৃতিবিজড়িত
নদীটির তীরে। তার শৈশবের বহু স্মৃতি আছে এ নদীকে ঘিরে। আনন্দ প্রথমবার নদী
দেখতে এসেছিল ওর ছোট চাচার সঙ্গে। ওর দাদু বাড়ি থেকে নদী বেশি দূরে নয়, স্পট
দেখা যায়। এক দৌড়ে পার হওয়ার মতো রাস্তা। প্রথম দিন সে এসেছিল ছোট চাচার
কাঁধে চড়ে, শীতের সময়। তখন নদীতে স্রোত ছিল না, ছিল স্বচ্ছ পানি। পানির নিচে
শেওলা, শেওলার সঙ্গে দু একটা ছোট মাছ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। সেদিন নৌকায় চড়ে
নদীর শান্ত পানি পাড় হয়ে ওপারে গিয়েছিল। সেখানে বাদাম খেত। চাচা অনেক বাদাম
গাছ তুলেছিলেন। নদী দেখে, নৌকায় চড়ে কাঁচা বাদাম পেয়ে আনন্দ যে কী আনন্দ
পেয়েছিল তা আনন্দই জানে। সেদিনের সেই আনন্দ স্মৃতি আনন্দের যতটা মনে পড়ে তার
চেয়ে বেশি মনে পড়ে একটা কষ্টের স্মৃতি। আনন্দ তখন গ্রামের স্কুলে নাইনে
পড়ে, ইচ্ছে হলেই সহপাঠীদের নিয়ে নদীতে সাঁতার কাটে, মাছ ধরে।একবার মার্চ মাসে
প্রথম বৃষ্টিতে নদীতে খানিকটা পানি জমেছে। নদী পুরোপুরি ভরেনি, বড় একটি দীঘির
দৈর্ঘ্যের সমান দৈর্ঘ্যের পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। খুব সহজেই সাঁতরে পার
হওয়ার মতো পানি। নদীর তীরে গিয়ে কজন সাঁতার প্রতিযোগিতার পরিকল্পনা করল।
তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সাঁতার কাটে মুন্না। রবিন খুব মোটা, সাঁতরাতে পারে
না। তার কাছে জামা জুতা রেখে, হ্যাফপ্যান্ট পরে সাঁতারের জন্য তৈরি হলো
মুন্না, মামুন, নয়ন, জামিল আর আনন্দ। সাঁতারে একশ টাকাবাজি ধরল। সবাই অর্ধেক নদী
পার হওয়ার পর মুন্না সাঁতার শুরু করবে। যদি সে সবার আগে ঐ পাড়ে উঠতে পারে তবে
একশ টাকা অন্যেরা মুন্নাকে দিবে, আর ওরা যদি আগে ঐ পাড়ে উঠে যায় তাহলে মুন্না
ওদের একশ টাকা দিবে। রবিন এক, দুই, তিন মুভ বলে সাঁতার প্রতিযোগিতার সূচনা
করলো। মুন্নাকে ছাড়া সবাই সাঁতরে নদী পার হচ্ছে। মাঝামাঝি যাওয়ার পর মুন্না
পানিতে ঝাঁপ দিল। পানি তোলপাড় করে মুন্না দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। রবিন ধরে নিল
মুন্নাই জিতবে, সে আর সেদিকে তাকিয়ে থাকল না। মাঝিকে ডাকল ওপাড়ে যাবে বলে।
ওপাড়ে গিয়ে সবার জামা কাপড় দিল। সবাই জামা কাপড় পরে নিল। থাকল শুধু মুন্নার
জামা। মুন্না! মুন্না কোথায়? মুন্না সাঁতার দেয়নি? রবিন বলল, দিয়েছে। কেউ বলল-
শালা বাজিতে হেরে গিয়ে পালিয়েছে। কেউ বলল, পালিয়ে যাবে কোথায় চান্দু? সন্ধ্যায়
ঈদগা মাঠে তো আসতেই হবে। কেউ বলল, না রে, মুন্না পালানোর মতো ছেলে নয়, সে পালাতে
পারে না। রবিন বলল, মুন্নার কি টাকার অভাব যে একশ টাকার জন্য তোদের ফাঁকি
দিবে, সেবার পিকনিকে মনে নেই তোদের সবাইকে আইসক্রিম খাইয়েছিল। ব্যাডমিন্টন
খেলার র্যাকেট, ফেদার তো সব মুন্নাই কিনেছে, নাকি? সবাই থমকে গেল, একে অন্যের
মুখের দিকে চাইল, আনন্দ মাঝিকে ঘটনাটি খুলে বলল। মাঝি কিছু বলল না। সন্ধ্যা
ঈদগাহ মাঠে এলো না মুন্না। ওর সাইকেল ওর বারান্দায়। ওদের বাড়ির কাজের লোক এসে
সবার বাড়ি খুঁজে গেল। পরদিন ভোরে কতকগুলো কন্ঠের আর্তচিৎকার আনন্দর ঘুম ভাঙল।
চোখ মেলে দেখল অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মামুন, নয়ন, জামিল, রবিন।
মুন্নাকে পাওয়া গেছে কাসারী মাঠের চরে, আজ দুপুরে স্কুল মাঠে জানাজা।