"দরিদ্র মুস্তাফিজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা" শিরোনামে একটি খুদে গল্প লিখো।
দরিদ্র মুস্তাফিজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা
দরিদ্র ঘরের সন্তান হয়েও মুস্তাফিজ সফল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নলালন করে। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটা সেই ১৯৯৭-৯৮ থেকে। ভারতের শচিন টেন্ডুলকার, বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম বুলবুলদের খেলা দেখতে দেখতে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নদানা বাঁধতে থাকে তার মনে৷ তবে স্বপ্নের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তাকে লড়ে যেতে হচ্ছে দুঃস্বপ্নের সাথে। জন্মের পরপরই আক্রান্ত হন পোলিওতে। তাতে বাম পায়ের জোরটা আর আগের মতো থাকেনি। সঙ্গী করে নিতে হয় হুইলচেয়ার। তবু ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখা থামিয়ে দেননি। ব্যবসায়ী বাবা মোঃ জহিরুল ইসলাম ও মা শিউলি বেগমের পরিবারের তিন ছেলের সবার বড় মুস্তাফিজ। লেখাপড়াতেও ছোটবেলায় ভালো ছিলেন। ১৯৯১ সালে জন্ম নেওয়া মুস্তাফিজ এসএসসি ও এইচএসসি সফলভাবে কৃতকার্য হয়। পলিটেকনিক্যাল ইনিস্টিটিউটে দুই বছর কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ালেখা করলেও শেষ করতে পারেননি। লেখাপড়ায় হার মানলেও হার মানেননি ক্রিকেটযুদ্ধে। ক্রিকেট তার রক্তে এতটাই মিশে যায় যে, এসএসসি পরীক্ষার আগের দিনও চলে গিয়েছিলেন ক্রিকেট খেলতে। মুস্তাফিজের জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ– ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও প্রকার সহযোগিতা না পাওয়া। ক্রিকেট রক্তে মিশে গেলেও শারীরিক অক্ষমতার কারণে সেভাবে খেলার সুযোগ পাননি। হন্যে হয়ে ফিরেছেন বড় পরিসরে খেলার জন্য। এ পথে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার দলের বাকি সদস্যদের মতো মুস্তাফিজও পেয়ে যান দলটির অধিনায়ক মোহাম্মদ মহসিনের দেখা। ২০১৪ সালে শুরু হয় তার নতুন জীবন। সেই থেকে শুরু। মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠ। বল করেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার অনুকরণে। হুইলচেয়ারে বসে পেস বল করা কঠিন। তাই কষ্ট করে হলেও দৌড়ে বল করেন। মুস্তাফিজের জীবনের আদর্শ ও প্রিয় খেলোয়াড় একজনই, মাশরাফি ।
বাধা আসবেই, সেই বাধা পেরিয়ে চলার নামই জীবন। এমনই মনে করেন হুইলচেয়ার দলের এই ক্রিকেটার, 'কোনও কিছু নিয়ে আক্ষেপ নেই। আমার জীবনে আমি সব কিছুই পেয়েছি। হয়তো একটু দেরিতে। কিন্তু পেয়েছি। তবে বাংলাদেশ সরকার যদি আমাদের ক্রিকেট নিয়ে একটু সচেতন হতো তাহলে আমরা আরও উন্নতি করতে পারতাম। দল নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি।'