রায়ের বাজার বধ্যভূমি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা

রায়ের বাজার বধ্যভূমি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।



'বধ্যভূমি' শব্দটি শুনতেই আমাদের অনুভূতিতে উঠে আসে অন্যায় জবরদস্তি নির্যাতন হিংস্রতা হত্যা নির্মমতার অমানবিক কিছু শব্দ। স্বাধীনতা-উত্তর আমাদের দেশে অসংখ্য বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষ্য বহন করে। রায়ের বাজার বধ্যভূমি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অন্য পেশাজীবীদের এখানে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছিল। এখানকার মাটিতে মিশে আছে তাদের রক্ত, তাদের আর্তচিৎকার, তাদের অশ্রু, তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী চেতনা। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শনস্বরূপ এখানে নির্মিত হয়েছে 'বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ'। বধ্যভূমির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই গভীর আবেগে কথাগুলো আমার উদ্দেশ্যে বললেন আকাশ স্যার। সাভার কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ দেখতে। প্রধান প্রবেশ পথ পেরিয়েই চত্বরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি বট গাছ দেখতে পেলাম। ওদিকের অফিস থেকে একজন বেরিয়ে এসে আমাদের জানালেন এমন কাজটি শারীরিক শিক্ষা কলেজ প্রাঙ্গণসত আদি বটগাছটির প্রতীক। আদি বটগাছের নিচে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। চত্বরে লাগানো অন্যান্য গাছের পাতা ডিসেম্বরে ঝরে যায়। গাছগুলোর পত্রহীন অবস্থান শোকনুভূতিকে আরো আবেগময় করে তোলার প্রতীক। স্মৃতিসৌধের মুল স্থাপনার দিকে আমরা এগিয়ে গেলাম। গাইড আমাদেরকে জানালেন, স্মৃতিসৌধের প্রধান অংশটি ১৭.৬৮ মিটার উঁচু এবং ১১৫.৮২ মিটার দীর্ঘ। এটি ইটের তৈরি একটি বাঁকানো দেয়াল আদি ইটখোলার প্রতীক। এই ইটখোলাতেই বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহগুলো পড়েছিল। আমরা পুরো চত্বরসহ বাঁকানো দেয়ালটি ভালো করে দেখে নিলাম। দেয়ালের দুদিকে ভাঙ্গা। এ ভাঙ্গা দেয়াল ঘটনার দুঃখ-সুখের গভীরতার প্রতীক। দেয়ালের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে একটি বড় খোলা জানালা। এই জানালা দিয়ে পেছনের খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। বাঁকা দেয়ালের সামনে একটি স্থির জলাধার। এর ভেতর থেকে গ্রানাইট পাথরের একটি স্তম্ভ উঠে এসেছে। এটি গভীর শোকের প্রতীক। এই স্তম্ভের দিকে তাকিয়ে আমাদের বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। মনে হল এ হাহাকার যেন ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, ড. ফজলে রাব্বী সহ অনেক বুদ্ধিজীবীর। প্রচন্ড শোক ও বেদনা নিয়ে আমরা রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ থেকে বেরিয়ে এলাম।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post