"বন্ধুত্ব" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
বন্ধুত্ব
রুবেলের সঙ্গে যেদিন কামালের দেখা হয় সেদিন ঘুণাক্ষরেও কামাল অনুমান করতে
পারেনি যে তাদের দুজনের আবার দেখা হবে এবং সেই থেকে বন্ধুত্ব গাঢ় থেকে গাঢ়তর
হবে। সাইকেল নষ্ট হয়ে গেলে সে পাশের পাড়ায় গিয়েছিল সাইকেল ঠিক করতে এবং
সেখানেই হঠাৎ তাদের দেখা হয়েছিল এক পলকের জন্য তারপর তাদের দেখা হয়েছিল খেলার
মাঠে এবং সেখানেই কেমন করে যেন দুজনের বন্ধুত্ব হয়ে গেল। রুবেল ভালো ক্রিকেট
খেলত। মাঠের সবাই ওকে দলে নেওয়ার জন্য চাপাচাপি করত। কিন্তু ও সেই দলেই খেলত
যে দলে কামাল থাকত। কামালও বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখত। একেক দিন একেক রকম খাবার
নিয়ে আসত রুবেলের জন্য। কোনোদিন গাছের পেয়ারা, কোনোদিন পাকা আম— কিছু না কিছু
থাকতই। এভাবে পরস্পরের বন্ধুত্ব আরও ঘনিষ্ট হলো। দুজন যেন একে অপরের হরিহর
আত্মা হয়ে উঠল। যেখানেই যায় একসঙ্গে যা করে একসঙ্গে। দুজনের পরিবারও বিষয়টি
জানে। রুবেলও কামালের বাসায় যায়, কামালও রুবেলের বাসায় চলে আসে। কিন্তু একটা
ঘটনা দুজনের মধ্যে একটু দূরত্ব তৈরি করে দিল। বিষয়টি তেমন কিছুই নয়। মাঠের
খেলা নিয়ে ঝগড়া হতেই রুবেল অন্য একজনের পক্ষ নিয়ে কামালকে তিরস্কার করে।
কামাল তেমন কিছু না বলেই মাঠ থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে এসে
রুবেলের বোধোদয় হয়। সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। পরদিন সকাল হতেই সে কামালের
সঙ্গে দেখা করার জন্য বেরিয়ে যায়। কিন্তু কামালের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া
যায় না। অগত্যা বিভিন্ন স্থানে রুবেল তাকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু তার দেখা মেলে
না। এদিকে রুবেলের মধ্যে অনুশোচনা বাড়তে থাকে। সে বার বারই নিজের কৃতকর্মের
জন্যে দুঃখিত হয়। পরদিন বড় পুকুরের ধারে কামালের সঙ্গে তার দেখা হয়। দুজনে
মুখোমুখি অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। তারপর প্রহর ভাঙে রুবেল, বন্ধুর কাছে গিয়ে
তার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। কামালও এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
মান-অভিমানের পর্ব শেষ হয়। দুজনে একসঙ্গে বাড়ি ফেরে। আজ বিদেশ-বিভূঁইয়ে এসে
বার বার এসব কথা মনে পড়ে রুবেলের। মনে পড়ে কামালের সঙ্গে কাটানো আরও অনেক
মজার মজার মূহুর্তের কথা। কিন্তু ইচ্ছে করলেই সে এখন কামালের কাছে যেতে পারে
না। ফোনে ও স্কাইপে মাঝে মাঝে কথা হয় দুজনার কিন্তু তাতে মন ভরে না রুবেলের।
একই অবস্থা কামালেরও— সেও তার বন্ধুর অভাববোধ করে সবসময়। আশপাশের মানুষজন
বন্ধুত্বের উদাহরণ দিতে কামাল ও রুবেলের কথা বলে। কামালের কাছ থেকে রুবেলের
খোঁজ খবর নেয়। সেও সানন্দে বন্ধুর খোঁজ-খবর দেয়। নতুন কোনো ঘটনা ঘটলে প্রবাসী
বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে কামাল। এভাবে দুজনার বন্ধুত্ব এগিয়ে চলে ভবিষ্যতের
দিকে।