বঙ্গোপসাগরে ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের দোলায় তিন ঘন্টার অভিজ্ঞতা

বঙ্গোপসাগরে ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের দোলায় তিন ঘন্টার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।



২০১৭ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। এটা ছিল আমার প্রথম সমুদ্র দর্শন। ভোরের সূর্যদয় দেখে হোটেলে ফিরে নাস্তা করে আবার এলাম সমুদ্র পাড়ে। উদ্দেশ্য সমুদ্র স্নান করা। পার ধরে হাঁটছি দুই বন্ধু মিলে, দেখি সৈকতের বালুর উপর দিয়ে সাগরের মাছ ধরার ট্রলার গুলোকে পানিতে নামানো হচ্ছে চাকা আর কাঠের পাতের সাহায্যে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তখনই তারা মাছ ধরতে যাবে সমুদ্রের গভীরে। আমি একজনকে বললাম, ভাই আমাদের সাথে নেবে? উত্তরে বলল, 'আপনারা শহরের লোক, এসব জায়গায় গেলে ভয় পাবেন। আমরা ফিরবো সেই বিকালে।' আমাকে বলে ভয় পাব! পৌরুষে কেমন যেন ধাক্কা খেলাম। জোর গলায় বললাম, 'কোন ভয় পাব না। আমাদের নিয়ে চলো। যদি টাকাও লাগে তবুও আমরা যাব।' ওরা বলল, 'টাকা চাই না, তবে প্রচন্ড ঢেউ হয় তো তাই বলছিলাম ভয় পাবেন।' অবশেষে আমার জেদের কাছে তারা পরাজিত হয়ে বন্ধু রতন এবং আমাকে নিয়ে রওনা হলো। ট্রলার ঘন্টাখানেক চলার পর যার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেই মহা তরঙ্গের দেখা পেলাম। ট্রলার গুলো ছোট হলেও প্রবন্ধের মাঝেও চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা। ডুবে না গেলেও যে প্রলয় নাচন নাচছিল তাতে আমার অতি সাহসী মনটাও ভীত হয়ে উঠলো। রতন তো ভয়ে চিৎকার শুরু করল। আমাদের নিয়ে তারা সত্যিই বিপদে পড়েছিল। এদিকে সাগরের কত গভীরে আমরা তার ঠিক নেই। পারের কিছু দেখা যায় না। ভেতরে যখন সমুদ্রের পানি ট্রলারের উঠে পড়ে তখন প্রান্তিক সত্যিই ওষ্ঠাগত হয়। যাহোক আমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তারা একটি ফিফটি ট্রলারের আমাদের তুলে দিল এবং বলল যেটা সহ্য করতে পারবেন না সেটাকে নিয়ে বড়াই করবেন না। তাদের ওই শ্লেষ পূর্ণ কথায় কান না দিয়ে আমরা ফিরতি ট্রলারে উঠে বসলাম।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post