''বৃষ্টির দিনে মাহবুবের স্বপ্ন" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
বৃষ্টির দিনে মাহবুবের স্বপ্
বৃষ্টিভেজা বিকেলে মাহবুবের মন আর ঘরে টেকে না। প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিজেকে
বিলিয়ে দিতে সে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। বাড়ির অদূরে বাঁশের সাঁকো পেরিয়েই হলুদ সরষে
ক্ষেতের বিস্তীর্ণ মাঠ। মৃদু বাতাস আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে সে মাঠ যেন সৌন্দর্যের
পসরা বসিয়েছে। মাহবুবের উতলা মন ছুটে যায় বিস্তীর্ণ সে মাঠের ভেতর। সরষের
হলুদের মাঝে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যায় সে। বৃষ্টির নিরবতা আর সরষে ফুলের
দোলা তার হৃদয়েও ঢেউ তোলে। তার বাবা বেঁচে নেই তাতে কী হয়েছে। এ প্রকৃতিই তার
বন্ধু। এমন বৃষ্টির দিনে তার একটি শখ জেগে ওঠে। গ্রাম বাংলার দুরন্ত ছেলেরা এ
শখের সাথে খুবই পরিচিত। বর্ষায় গ্রামের খাল বিলগুলো পানিতে টইটম্বুর থাকে।
সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কেউ বর্শি দিয়ে কেউবা জাল পেতে মাছ ধরে। বৃষ্টির
দিনে খাল-বিলে হরেক রকম দেশীয় মাছের আনাগোনা চলে। দুরন্ত ছেলেমেয়েরা তখন ব্যস্ত
হয়ে ওঠে মাছ ধরতে। মাহবুব তাই সে সুযোগ হাতছাড়া করে না। খালে-বিলে ফেলার জন্য
গ্রামের বাজারে এক ধরনের ছোট কারেন্ট জাল পাওয়া যায়৷ মাহবুব একশ টাকা দিয়ে
একটি জাল কিনে আনে। সন্ধ্যার ঠিক পূর্ব মুহূর্তেই ক্ষেতের ভেতর সরষে গাছের ফাঁকে
ফাঁকে সে জাল ফেলে। এ ক্ষেতে কৈ, পুঁটি, টেংরা, খলশে, বাইলা, বাইম ইত্যাদি মাছ
খেলা করে। এ সুস্বাদু মাছ মাহবুবের খুবই প্রিয়। জাল ফেলে সে বিলের রাস্তা ধরে
বাড়ি ফেরে। রাতে তার ঠিকমতো ঘুম হয় না। সে কল্পনা করে জাল ভর্তি মাছ। সে মাছ
বাড়িতে নিয়ে এলে মায়ের ঠোঁটের কোণে খুশির হাসি, মায়ের হাতের ঝোল ঝোল রান্না,
একটি বড় চিংড়ি মাছ মা কড়া করে ভাজে। সেটা মুখে দিতেই অতি গরমে ঘুমের মধ্যে আহ!
করে চিৎকার করে ওঠে। এসব ভেবেই খুব ভোরে তার ঘুম ভাঙ্গে। ভোরবেলা তখনো বৃষ্টি
হালকা বৃষ্টি পড়ছিল ছাতা আর টর্চ লাইট নিয়ে সে ছুটে যায় বিলের ধারে যেতে যেতে
সে শুধু জাল ভর্তি মাছ ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না। একপাশে ছাতা রেখে চপাৎ চপাৎ
বিলের জলে নামে। কিন্তু হায় পুরো বিল তন্ন তন্ন করেও জাল খুঁজে পায় না। ছোট
মাহবুব হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। তার চোখের অশ্রুর যেন সকালের বৃষ্টিস্নাত
প্রকৃতিকেও নিস্তব্ধ করে তোলে। দক্ষিণা বাতাস হা-হুতাশ করে আহাজারি প্রকাশ করতে
থাকে। বাড়ির ভেতর ঢুকতেই তার মা ছুটে এসে কান্নার কারণ জানতে চায়। সব শুনে
তিনিও ছেলের ব্যথায় অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। ছেলেকে বুকে তুলে গালে চুমু খেয়ে মা
নতুন জাল কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মাহবুব কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে আবারও স্বপ্ন
দেখে বৃষ্টির বিকেল, সেই বিকেলে বিলের জলে জাল পেতে মাছ ধরবে সে।