'বুলেট' শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি খুদে গল্প রচনা করো :
বুলেট
সে দিন রাত থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগেই পাশের
বাড়ির চাচা বাবাকে ডাক দিলেন। দূর থেকে যত টুকু বুঝতে পারলাম ওনারা বাড়ি ছেড়ে
চলে যাচ্ছেন এবং বাবাকে খুব তাড়াতাড়ি চলে যেতে বললেন। বাবা তার কথায় সে রকমের
কোনো ইচ্ছা দেখালেন না। এমনিতেই আমাদের সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছিল। কারণ
গতকাল পাশের গ্রাম থেকে তিনজনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
বাড়ি থেকে শোনা যাচ্ছিল থেমে থেমে কোথাও না কোথাও গুলি হচ্ছেই।
দুপুরের দিকে বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনে বাবা দেখার জন্য বাইরে গেলেন, তারপর
আর ফিরে এলেন না। মিলিটারি বাহিনী এসে বাবাকে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করার জন্য তুলে
নিয়ে যায়। সে সময় বাধা দিতে এলে আমার ছোট চাচা এবং আমার দাদাকেও ধরে নিয়ে
যায়। পরের দিন চাচা এবং দাদাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাবাকে আর ছাড়া হয়নি। এক
সাথে তিন বন্ধু ছিলেন ওরা। পরের দিন তিনজনকে মাঠের মধ্যে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে বলা
হয় চলে যাও তোমাদেরকে মুক্তি দেওয়া হলো কিন্তু তারা কিছুদূর যাবার পরেই
পাকিস্তানি হানাদারগুলোর রাইফেল গর্জন করে ওঠে। আমি আর বাবাকে দেখতে পাইনি।
এভাবেই কথাগুলো মাঝে মাঝেই গল্প করে শোনান আমার মা। যখন তিনি কথাগুলো বলেন বারবার
তার চোখ থেকে নেমে আসে অশ্রুধারা। কারণ নানার মৃত্যুর পর অনেক কষ্টের সময় নেমে
আসে তাদের সংসারে। নানি একা মানুষ কোলে আমার ছোটখালা আর মামা পাঁচ বছরের ছেলে আর
মার বয়স তখন তিন বছর। কতদিন খাবারের জন্য কেঁদেছেন, কতবার ছেঁড়া জুতার জন্য
রাস্তায় হোঁচট খেয়েছেন। আর একটা নতুন জামার জন্য মায়ের হাতে মার খেয়েছেন আবার
মারার পর মা নিজেও কেঁদেছেন কতবার তার হিসাব নেই। সেই একাত্তরের পাকিস্তানি
রাইফেলের একেকটি বুলেট বাংলার অনেক পরিবারকে আজও কাঁদায়। এখনও তারা ঘুমের মধ্যে
সেই সব দুর্দিনের স্বপ্ন দেখে কেঁদে ওঠেন। আমার মা যখন এভাবে কাঁদেন তখন আমার মনে
হতে থাকে তার সেই অশ্রু বলছে ‘আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।'