প্রতিবেদন : সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রসঙ্গে

পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন তৈরি করো।


প্রকৃতির লীলা নিকেতন : সেন্টমার্টিন দ্বীপ


শারমিন শিলা : টেকনাফ : বাংলাদেশকে বলা হয় প্রকৃতির কন্যা। সেন্টমার্টিন সেরকম একটি মনোরম স্থান। সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রকৃতির লীলানিকেতন। এ দ্বীপটির মনোরম পরিবেশ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। অথচ এ প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ধ্বংসের তৎপরতা প্রায় এক দশক ধরে শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গত এক দশকে এখানে সহস্রাধিক লোক নতুন করে বসতি স্থাপন করেছে। দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। মাত্র ১২ কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপে এখন জনসংখ্যা প্রায় চার হাজার। এদের মধ্যে প্রায় ৪০% লোক মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময় এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছে। পরিবেশবিদগণের মতে, আয়তন অনুপাতে সর্বাধিক দু হাজার লোকের বসবাস উপযোগী এ দ্বীপ।

পরিকল্পনাহীন কার্যকলাপের ফলে এই দ্বীপের পরিবেশ ব্যবস্থা এখন অত্যন্ত সংকটাপন্ন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এ দ্বীপে মেরিন পার্ক প্রতিষ্ঠা ও পরিবেশসম্মত পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করবে বলে কার্যক্রম শুরু করেছে। দ্বীপ এলাকা থেকে পাথুরে ও প্রবাদ শিলা আহরণ, সরকারি অনুমোদন ছাড়া নির্মাণ কাজ, যে কোনো নির্মাণ কাজে পাথুরে ও প্রবাল শিলা ব্যবহার, প্রবাল-শামুক-ঝিনুক আহরণ, যে কোনো রকম শৈবাল আহরণ, গাছপালা কাটা, সবরকম মাছ শিকার ও বন্য প্রাণী হত্যা, পাখি ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংস বা অনিষ্টকারী সব ধরনের কার্যকলাপ, ভূমি এবং প্রাণীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন সব কাজ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক যে কোন রকম কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ সকল নিষেধাজ্ঞা কেউ মানছে না এবং সরকারের তরফ থেকেও তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে না। ফলে দ্বীপটিতে এখন সামুদ্রিক সম্পদ লুটপাট হচ্ছে। এসব সম্পদ রোহিঙ্গারা আহরণ করে মিয়ানমারে পাচার করছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং ইকোট্যুরিজম গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে সেন্টমার্টিন মেরিন পার্কে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট পরিবেশ বান্ধব হোটেল নির্মাণ, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়াতের জন্যে সমুদ্রগামী ফেইবোট সার্ভিস চালু, পরিবেশসম্মত মেরিন পার্ক স্থাপন, গ্লাস বোটের মাধ্যমে পর্যটকদের সমুদ্রের তলদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখানো, দ্বীপের পানি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের জন্যে টাওয়ার স্থাপন, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা চালু, সামুদ্রিক প্রাণীদের জাদুঘর স্থাপন, গবেষকদের গবেষণার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

কিন্তু যথাযথ তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়ের অভাবে কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না। ২০০৩ সালে সরকার এই দ্বীপটিকে 'পরিবেশগত সংকটময় এলাকা' বলে ঘোষণা করলেও সংকটের হাত থেকে রক্ষা ও সঠিক ধারা উন্নয়নের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় নি। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির পরিবেশ রক্ষার দ্রুত প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া অতি জরুরি।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post