সিলেটের চা বাগান ভ্রমণের অর্জিত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
সিলেটের চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা বহুদিন শুনেছি। কিন্তু দেখতে যাওয়া
হয়নি। এবারে সেই সুযোগটা এসেছে। ভাগ্নের বিয়ে। নিজে এসে কার্ড দিয়ে বারবার করে
বলে গেছে উপস্থিত থাকতে। ১০ সিটের একটা মাইক্রো ভাড়া করে রওনা হলাম। আমরা চারজন,
খালাতো ভাই চারজন, ভাগ্নের বন্ধু দুজন। বন্ধু দুজনের বাড়ি মৌলভীবাজার। দুজন গাইড
পেয়ে আমাদের সুবিধা হয়ে গেল। বাস ধীরগতিতে চালাতে বলেছি যাতে দুপাশে দৃশ্য
উপভোগ করা যায়। এখানে কাঁচপুর ব্রিজের উপর যানজট। নিচে শীতলক্ষ্যার দুরবস্থা
দেখে বুড়িগঙ্গার কথা মনে পড়লো। বাস ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। দু'পাশের সবুজ ফসলের মাঠ
ছিল, এখন আর নেই। থাকলে আমাকে একটু পরেই পথ দু দিকে বেঁকে গেল। বাসের গতি এখন
বেড়েছে। সবুজ ধান ক্ষেতের ওপারে সবুজ গ্রাম। দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি
বলতে পারবোনা। এরই মধ্যে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার হয়ে গেছি। দু'পাশে
হবিগঞ্জে প্রায়ই ন্যাড়া পাহাড়ে চোখে পড়ছে। মৌলভীবাজারের ভেতর দিয়ে যাওয়ার
সময় মনে হল সবুজ গাছপালা ভরা টিলা এখনো আছে। সিলেটের গোপাল ভাগে এসে বাস থামল।
তিনটার মতো বাজে। কাছাকাছি চা বাগান থাকলে ঘুরে আসা যায়। এখানের একজন ছেলে
ভার্সিটিতে পড়ে। সে জানালো, সকালে গেলে চা পাতা তোলাও দেখতে পারবেন। এখন
খাওয়া-দাওয়া সেরে রেস্ট নীন। কিন্তু আমাদেরই তো তাড়া। ওকে নিয়ে গাড়ি করে
প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বড় একটা চা বাগানে এলাম। ছোট ছোট তিনটা
টিলা খাদ ঘিরে এ বাগান। গাছগুলো একসাথে ছাটে ছাটা-সমান্তরাল। উপর থেকে ধীরে ধীরে
নীচে নেমে এসেছে, যেন সবুজের সিঁড়ি। বেশ কয়েকটি অংশ এর। প্রতিটি পাশ দিয়ে একটি
করে চলার পথ। নিজে থেকে দেখতে দেখতে আর ছবি তুলতে তুলতে উপরে উঠছি। প্রতিটি অংশে
কয়েকটি করে গাছ যেন কড়া পাহারায় ব্যস্ত। বাচ্চারা চা-গাছ ধরতে যাচ্ছিল,
ওখানকার লোকেরা বাধা দিল। গাছ ছোঁয়া যাবেনা, পাতা ছেঁড়া যাবে না।ভেতরের ছবিও
তোলা যাবে না। তবু কিছু ছবি তোলা হলো। খুব পরিচ্ছন্ন, নিরিবিলি শান্ত সবুজের
মায়াভরা পরিবেশ। চোখ জুড়িয়ে গেল, মন ভরে গেল। একজন বলে গেলেন ৫ মিনিটের মধ্যে
বাগান থেকে বের হতে হবে। কিন্তু বের হতে ইচ্ছে করছে না। তবুও বের হতে হবে, তবু
যেতে হবে, এই সবুজ মায়া ছেড়ে অন্য কোথাও অন্য কোন গন্তব্যে। আমরা হাঁটছি না,
কারা যেন আমাদেরকে টেনে নামিয়ে দিচ্ছে। চা বাগানের উপর শেষ বিকেলের রঙিন আভা এসে
পড়েছে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! ভুলে যাওয়ার নয়। তাই আবার আসবো, আবার আসতে হবে
অপার সবুজের সান্নিধ্য পেতে, হৃদয়কে সতেজ ও স্বতস্ফূর্ত করতে।