হাসপাতালে চিকিৎসার অবস্থা সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রতিবেদন রচনা করো।
চরভদ্রাসন সদর হাসপাতালের বেহাল দশা
নিজস্ব প্রতিবেদক : ফরিদপুর : ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন সদর হাসপাতালটি এখন
নানা সমস্যায় জর্জরিত। অথচ চরভদ্রাসনের মতো একটি বর্ধিষ্ণু চিকিৎসার সবচেয়ে বড়
ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। প্রায় ২ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্যে নির্মিত এ
হাসপাতালটি জনগণকে তেমন কোনো চিকিৎসা সেবাই দিতে পারছে না। হাসপাতালটি এখন
নামসর্বস্ব হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। যেখানে ১০ জন ডাক্তার থাকার কথা সেখানে মাত্র
২ জন ডাক্তার আছেন। তাও তারা জেলা সদর থেকে আসেন। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং
যন্ত্রপাতির সংকট বর্তমানে চরম পর্যায়ে বিরাজ করছে। শয্যাসংখ্যা একেবারেই কম।
নার্সের সংখ্যাও কম। প্রতিদিন এ হাসপাতালে শত শত মানুষ আসে আউটডোর চিকিৎসাসেবা
গ্রহণের জন্যে। হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হয় ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী। আউটডোর লাইন
দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গরিব রোগীরা সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক সময় চিকিৎসা পায় না।
ওষুধপত্র তেমন কিছুই দেওয়া হয় না রোগীরা ওষুধ চাইলে বলা হয়, ওষুধ নেই বাইরে থেকে
কিনে নিতে হবে। দায়সারা ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হয় রোগীদের হাতে। ফলে গরিব
লোকেরা ওষুধ না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
হাসপাতালের পরিবেশ খুব নোংরা, অপরিষ্কার এবং অস্বাস্থ্যকর। হাসপাতালের করিডোর ও
বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে যে, চারদিকে ময়লা, আবর্জনা, থুথু, পানের পিক,
সিগারেটের টুকরা। ড্রেনের সাথে হাসপাতালের পায়খান সংযোগ থাকায় ময়লা আবর্জনা যা তা
অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে দুর্গন্ধ। শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য। এককথায়
চিকিৎসার কোনো অনুকূল পরিবেশ নেই। এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে রোগীদের
হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। হাসপাতালের বিছানাপত্র নোংরা। সেখানে ছারপোকা বাসা
বেঁধেছে।
জরুরি বিভাগে প্রায় সময়ই ডাক্তার থাকেন না। ফলে মারাত্মক অসুস্থ রোগীরা এসে চরম
দুর্ভোগে নিপতিত হয়। হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স আছে, এটিও বিকল। জরুরি ওয়ার্ডে
একটি সাকার মেশিন পর্যন্ত নেই। একটি অণুবীক্ষন যন্ত্র থাকলেও পরীক্ষা করার জন্যে
রি-এজেন্ট নেই। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ডাক্তারের অভাবে হাসপাতালে কোনো
স্টেরিলাইজেশন ও এক্স-রে মেশিন নাই। গাইনি ও শিশু ওয়ার্ডের জন্যে কোনো ডাক্তার
নেই। নেই দাঁতের ডাক্তারও। হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের আবাসিক ব্যবস্থাও
অপ্রতুল। এ নিয়ে হাসপাতালটি একটি নামসর্বস্ব হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। আর
চরভদ্রাসনবাসীর দুর্ভোগ উঠেছে চরমে। এ ব্যাপারে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
আশু পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।