খুদে গল্প : চিঠি

‘চিঠি’ বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :
চিঠি

আমাদের বাড়ি থেকে ডাকঘরটা খুব বেশি দূরে নয়। সকাল আর রাতের বেলা যদি কোনোদিন এ ডাকঘরের পেছনের জানালাটা খোলা হয় তবে তার কড় কড় করে ওঠা শব্দ আমাদের বাড়ি পর্যন্ত শোনা যায়। ছোটবেলায় একবার একটা চিঠি এলো আমাদের বাড়িতে, আমার বাবার প্রমোশন হয়েছে। সেই চিঠি পেয়ে বাড়ির সবাই তো অনেক খুশি। আর তখন আমি ভেবেছিলাম ওটা যেহেতু ডাকঘর থেকেই এসেছে তাই এর সমস্ত অবদান ওই ডাকঘরের। সেই তখন থেকে ডাকঘরের প্রতি কেন যেন একটা ভালোবাসার জন্ম নেয়। দিনে দিনে আমি এখন অনেক বড় হয়েছি কিন্তু সেই ভালোবাসা আজও আছে। তখন আমার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটত ডাকঘরে ডাকপিয়ন চাচার সাথে। তিনি আমাকে অনেক গল্প বলে শোনাতেন। পৃথিবীর কত দেশ থেকে তার এখানে চিঠি আসে, কত রঙের পোস্টকার্ড তিনি দেখেছেন আর কোথায় চিঠি পৌছাতে গিয়ে কে কী বলেছে সব।

একদিন সব চিঠি নাড়তে নাড়তে আমার মনে হলো, আমিও একটা চিঠি কারো বাড়িতে দিয়ে আসব। আমি তো জানি না চিঠিতে কী লেখা আছে কিন্তু ওই বাড়ির লোকজন যখন চিঠিটা খুলে পড়বে তখন আমি ভালোভাবে দেখব ওরা কী করে। ডাকপিয়ন চাচাকে বলে আমি একটা চিঠি নিলাম হাতে, রংচটা একটা খামের সেই চিঠির ওপরে নাম, ঠিকানা সবই লেখা ছিল। আমার মনে তখন হাজার রকমের প্রশ্ন, কী আছে ওই চিঠিতে, কী থাকতে পারে ওতে? তারপর আমি যখন চিঠিটা ওই বাড়ির এক বয়স্ক মহিলার হাতে দিলাম তিনি ওটা হাতে পেয়ে খুলে না পড়েই অনেক কেঁদেছিলেন। কেন কেঁদেছিলেন আর কী ছিল ওই চিঠিতে তা আজও আমার অজানা। তবে মাঝে মাঝেই আনমনে ওই বৃদ্ধার সজল চোখ দুটি আমার চোখ দুটোকে অশ্রুসিক্ত করে তোলে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post