তোমার কলেজ জীবনের কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
আমার কলেজ জীবন ছিল বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে আমি বন্ধুবান্ধব ও
শিক্ষকদের সাথে বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করেছি। এগুলোর মধ্যে সব থেকে
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো একুশে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন।
প্রথমে আমরা ছাত্র ও শিক্ষক মিলে কীভাবে মাতৃভাষা দিবস পালন করব তা নিয়ে আলোচনা
করি। অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশে আমাদের তিনটি ধাপে তিনটি কর্মসূচি পালনের নির্দেশ
দেওয়া হয়। আমরা একজন একজন করে শিক্ষকের নেতৃত্বে দশজন ছাত্র মিলে একটি করে দল গঠন
করি। একেক দল একেক নামে পরিচিত হয়। যেমন-শাপলা, দোয়েল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ইলিশ
ইত্যাদি। দুটি দলের দায়িত্ব ছিল কলেজ প্রাঙ্গের সাজসজ্জা। তারা বাংলাদেশের পতাকা,
লাল-সবুজ কাগজ ও ভাষা-শহীদদের ছবি দিয়ে খুব সুন্দর করে কলেজ প্রাঙ্গন সাজায়।
একুশে ফেব্রুয়ারির দিল সকাল বেলা ছাত্র শিক্ষক সকলে মিলে আমরা খালি পায়ে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গান গেয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ
করি। শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে অধ্যক্ষ স্যার একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা ও
তাৎপর্য বর্ণনা করেন। শহীদদের জন্য দোয়া মোনাজাত করেন কলেজ মসজিদের ইমাম সাহেব।
প্রথম পর্বের পর হালকা নাশতা বিতরণ শেষে শুরু হয় রক্তদান কর্মসূচি। কলেজ ছাত্র-
শিক্ষক-কর্মকর্তা ও আশেপাশের অনেক সাধারণ মানুষ এই রক্তদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ
করেন। আমরা যত্নসহকারে তাদের দেওয়া রক্ত সংরক্ষণ করি। আমি এই দলে কাজ করতে পেরে
খুবই আনন্দিত। এ সময় আমরা সাধারণ মানুষকে রক্তদানের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে
সচেতনতামূলক তথ্য দান করতে থাকি।
দুপুরের পর শুরু হত তৃতীয় পর্ব। তৃতীয় পর্বে শুরু হয় বইমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের
ওপর আমার নিজের লেখা একটি নাটিকা পরিবেশিত হয়। সেখানে আমি ও আমার বন্ধুরা অভিনয়
করি। নাটিকাটি দেখে দর্শক ও শিক্ষকরা খুব খুশি হন। সেদিন আমার খুব ভালো লেগেছিল।
এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় ও একক নাচ এবং গান পরিবেশিত হয়। বিকেলের দিকে
প্রচুর লোক সমাগম হয় কলেজ প্রাঙ্গণে। বাবা মা তাদের সন্তান্দের অনেক বই কিনে দেন।
সব শেষে অধ্যক্ষ স্যারের সমাপমী ভাষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। আমি মনে করি
প্রতিটি স্কুল কলেজে এভাবে মাতৃভাষা দিবস পালন করা উচিত। আমি কোনোদিনই আমার
কলেজের মাতৃভাষা দিবস পালনের অভিজ্ঞতা ভুলব না।