'দ্বীপ জ্বেলে যাই' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
দ্বীপ জ্বেলে যাই
ষাটের মতো বয়স তবিবুর রহমানের। ঢাকায় আছেন স্বাধীনতার পর থেকেই। একটা কারখানায়
চাকরি করতেন প্রথম দিকে। মালিকের অপমান সহ্য করতে না পেরে চাকরি ছেড়ে দেন। হাতে
যা টাকা পয়সা ছিল তার কিছু দিয়ে নিজের পরিকল্পনায় একটা চটপটির গাড়ি তৈরি করেন।
ব্যবসায় শিখে নেন তার বন্ধুর কাছ থেকে। জিনিসপত্র যা দরকার কিনে আনেন কারওয়ান
বাজার অথবা চকবাজার থেকে। নিজের হাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে তৈরি করেন ফুচকা ও
চটপটি। সকালে ভিকারুননেসার সামনে এবং বিকেলে সংসদ ভবনের পাশের রাস্তায়। গরিব
বাবার সংসারে লেখাপড়া করতে পারেনি। অথচ খুব শখ ছিল। এজন্যই ভালোবেসে শিক্ষিত বউ
ঘরে এনেছেন। মগবাজার বস্তিতে একটা বড় ঘর ভাড়া নিয়ে একদিকে তারা থাকেন আর
অন্যদিকে কিছু এতিম গরিব ছেলেমেয়েকে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন, যার নাম 'দ্বীপ
জেলে যাই'। এদের বই খাতা, পেন্সিল আর একজন মাস্টারের বেতন তবিবুরই বহন করেন।
তার স্ত্রীকেও তিনি পড়ানোর জন্য বেতন দেন। তার স্ত্রী বেতন জমিয়ে সাতারকুলে
একটি জায়গা কিনেছেন। ভবিষ্যতে সেখানে উঠে যাওয়ার ইচ্ছে আছে তাদের। তাহলে এখন যে
শিক্ষার আলো জ্বালাচ্ছেন, তার কী হবে? তার সহজ জবাব, দ্বীপ জ্বেলে যাবো ওখানেও।
সেটা তো আমার নিজের জায়গা। আপনার মেয়ে যদি সেখানে থাকতে চায় কী করবেন? মেয়ে
জামাই দুজনেই চাকরি করে, নাতি নাতনি আছে। তারা যদি আমার বাড়িতে থাকতে চায় সে তো
আমার জন্য আরো ভালো। তারা যদি আপনার 'দ্বীপ জেলে জ্বেলে যাই' ব্রত সমর্থন না
করেন? তারা কেউ আমার ব্রতে বাধা সৃষ্টি করবে বলে মনে করি না। বরং সাহায্য করবে।
আমার ভাঙা ঘর থেকে দীপশিখা নিয়ে বেশ কয়েকজন বড় স্কুল পাস করেছে, এখানেই আমার
তৃপ্তি আমার সাফল্য। আমরা দুজন যতদিন বেঁচে আছি 'দ্বীপ জ্বেলে যাই'-এর দীপশিখা
হয়ে জ্বলতে থাকব।