দীনবন্ধু মিত্র
দীনবন্ধু মিত্র কবে জন্মগ্রহণ করেন? — ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে।
দীনবন্ধু মিত্র কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — চৌবেড়িয়া গ্রাম, নদীয়া।
তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনা হয় কী দিয়ে? — কবিতা দিয়ে।
তিনি কার অনুপ্রেরণায় কবিতা লিখতেন? — ঈশ্বর গুপ্তের অনুপ্রেরণায়।
তাঁর কবিতা কোন কোন পত্রিকায় প্রকায় পায়? — সংবাদ প্রভাকর (১৯৩১), সংবাদ সাধুরঞ্জন (১১৮৪৭)।
তাঁর রচিত জনপ্রিয় কাব্যগুলো কী কী? — সুরধুনী কাব্য (১ম ভাগ ১৮৭১ ও ২য় ভাগ ১৮৭৬), দ্বাদশ কবিতা (১৮৭২)।
দীনবন্ধু মিত্র কী হিসেবে অধিক পরিচিত/ খ্যাত? — নাট্যকার হিসেবে।
নীলকর সাহেবদের বীভৎস অত্যাচারে লাঞ্ছিত নীল চাষিদের দুরবস্থা অবলম্বনে রচিত তাঁর নাটকের নাম কী? — নীল - দর্পণ (১৮৬০)।
'নীল - দর্পণ'কে বাংলাদেশের নাটক বলা হয় কেন? — কারণ, নাটকটির কাহিনী মেহেরপুর অঞ্চলের, দীনবন্ধু ঢাকায় অবস্থানকালে এটি রচনা করেন। নাটকটি প্রথম প্রথম হয় ঢাকার বাংলা প্রেস থেকে এবং প্রথম মঞ্চয়িত হয় ঢাকাতেই।
'নীল - দর্পণ' নাটকের মাইকেল মধুসূদন দত্ত কৃত ইংরেজি অনুবাদের নাম কী? — Nil Darpan or The Indigo Planting Mirror (1861)
মধুসূদন কোন ছদ্মনামে এই অনুবাদ করেছিলেন? — A Native
দীনবন্ধু মিত্র আর কী রচনা তাঁর দক্ষতার পরিচয় দেন? — প্রহসন।
ইংরেজি শিক্ষিত নব্য যুবকদের মদ্যপান ও বারবণিতা সঙ্গকে ব্যঙ্গ করে তাঁর রচিত প্রহসনের নাম কী? — সধবার একাদেশী (১৮৬৬)।
সমাজের প্রাচীনপন্থীদের ব্যঙ্গ করে তাঁর রচিত প্রহসনের নাম কী? — বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬)।
তাঁর রচিত অপরাপর নাটকগুলোর নাম কী? — নবীন তপস্বিনী (১৮৬৬), লীলাবতী (১৮৬৭), জামাই বারিক (১৮৭২), কমলে কামিনী (১৮৭৩) ইত্যাদি।
'নীল - দর্পণ' নাটক সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
— 'নীল - দর্পণ' (১৮৬০) নাটকটির ঘটনা, বিষয়বস্তু, রচনাস্থান, প্রকাশস্থান, মুদ্রণালয় এবং প্রথম মঞ্চায়ন সবই বাংলাদেশে হয়। প্রথম প্রকাশের সময় দীনবন্ধু মিত্রের নাম ছিল না। ''নীলকর - বিষধর- দংশন - কাতর- প্রজানিকর - ক্ষেমঙ্করেণ- কেনচিৎ পথিকেনাভি প্রণীতম'' এভাবে গ্রন্থাকারের নাম গোপন রাখা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নীলকরদের অত্যাচারে পীড়িত সাধারণ কৃষক জীবনের মর্মভেদ ছবি নাটকটিতে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তা প্রকাশ করেন রেভারেন্ড জেমস্ লঙ। নাটকের বাস্তবতা এবং চরিত্রগুলির স্বাভাবিকতার গুণের জন্য অনেকেই 'নীল - দর্পণ'কে 'Uncle Tom's Cabin' এর সঙ্গে তুলনা করেছেন৷ উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলো— গোলক বসু, নবীন মাধব, রাইচরণ, তোরাপ, সাবিত্রী, সরলতা, ক্ষেত্রমণি ইত্যাদি।
'সধবার একাদশী' সম্পর্কে লেখ।
— 'সধবার একাদশী' (১৮৬৬) প্রকাশিত একটি প্রহসন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সুরাপান ও বেশ্যাসক্তি একশ্রেণির যুবকের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। "সধবার একাদশী" সেই সামাজিক বিপর্যয়ের কাহিনী। নায়ক নিমচাঁদের জীবনে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ব্যর্থতা, অধঃপতন বোধ ও আত্মগ্লানি চরিত্রটিতে এক গভীর মাত্রা সংযোজন করেছে। চরিত্র সৃষ্টি, সংলাপ, ঘটনাপ্রবাহ, কৌতুক সবকিছু মিলে "সধবার একাদশী" বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য রচনা। এই নাটকের নায়ক চরিত্র নিমচাঁদ/ দত্ত বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। এছাড়া আরো যেসব চরিত্র আছে— জীবনচন্দ্র, অটলবিহারী, কেনারাম, সৌদামনী, গিন্নি ইত্যাদি।
'নীল - দর্পণ'কে কি ঐতিহাসিক নাটক বলা যায়?
— 'নীল - দর্পণ' নাটকের কাহিনী চিত্র বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত। বৃহত্তর নদীয়া জেলার চৌগাছা গ্রামের বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও পোড়াগাছা গ্রামের দিগম্বর বিশ্বাসের নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের কাহিনী এই নাটকের প্রেরণাভূমি। এদিক থেকে নাটকটি ঐতিহাসিক। কিন্তু নাটকের ঘটনা যেহেতু একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ তাই একে ঐতিহাসিক নাটক বলা চলে।
'নীল - দর্পণ' নাটকের কী কী ক্রুটি সমালোচকেরা নির্দেশ করে থাকেন?
— 'নীল দর্পণ' নাটকের প্রধান ক্রুটি অতি নাটকীয়তা। শেষ দৃশ্যে মৃত্যুর ঘনঘটা স্প্যানিশ ট্রাজিডির মতো ভৎস রস সঞ্চার করে। দ্বিতীয় ক্রুটি ভদ্রশ্রেণির চরিত্রগুলির সংলাপে কৃত্রিমতা, তৎসম শব্দবহুল সাধুরীতির ভাষা নিতান্ত কৃত্রিম হয়ে পড়েছে।
'নীল - দর্পন' নাটককে ট্রাজেডি নাটক বলা চলে কী?
— 'নীল - দর্পণ' নাটককে সেই অর্থে ট্রাজেডি নাটক বলা যায় না। কারণ এই নাটকে কোনো নায়ক চরিত্র ভুল - ভ্রান্তি হেতু দুঃখবহ পরিণতির জন্য দায়ী নয়। দর্শকচিত্তে ট্রাজেডিসুলভ pity জাগায় না নাট্যকার ট্রাজিক করুণরস সৃষ্টি করে ভয়ানক রস সৃষ্টি করেছেন। একে বরং মেলোড্রামা বলা যায়।
'বিয়ে পাগলা বুড়ো'র পরিচয় দাও।
— এটি একটি হাস্যরসাত্মক নাটক। এটি ১৮৮৬ সালে রচনা করা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলে যে এই নাটক কোনো "জীবিত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করিয়া লিখুত হইয়াছিল।" ১৮৭২ সালে নাটকরি প্রথম অভিনীতি হয়েছিল। এর চরিত্রসমূহ— নসিরাম, রতা, রাজীব, রাজমণি, কেশব ইত্যাদি।
দীনবন্ধু কবে মৃত্যুবরণ করেন? — ১লা নভেম্বর, ১৮৭৩।