‘ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির ভাষণ রচনা
কর।
“ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি” শীর্ষক সেমিনার
আজকের অনুষ্ঠানের সম্মানিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও আলোচকবৃন্দ এবং আমার
সামনে উপবিষ্ট সচেতন ব্যক্তিবর্গ, আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।
উপস্থিত সুধীবৃন্দ,
‘ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি’– বিষয়টি সম্পর্কে আপনারা
দীর্ঘসময় ধরে অতিথিবৃন্দের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনেছেন। আশা করি ইভটিজিংয়ের
বিরুদ্ধে আমাদের কী করা উচিত সেই বিষয়টি আপনাদের কাছে এখন পরিষ্কার। আমি
সংক্ষেপে বিষয়টি আর একটু সহজ করে আপনাদের বলতে চাই। সামাজিক জীব হিসেবে
মানবজীবনকে যথার্থ সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে তার নৈতিক মূল্যবোধ। মানুষের জীবনের
সাধনা হলো মনুষ্যত্ব অর্জনের সাধনা। এই সাধনায় আছে মহৎ গুণাবলি লাভের চেষ্টা।
সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আদর্শবাদিতা ইত্যাদি গুণের সমাবেশেই নৈতিকতার স্বরূপ
প্রকাশিত হয়। কিন্তু নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে আমাদের সমাজ আজ ভয়াবহ
সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যেসব সংকট আজ সমাজকে ঘিরে ধরেছে তার মধ্যে ইভটিজিং
অন্যতম। তাই ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রথমে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত ।
সুধীবৃন্দ,
সহজ কথায় নারীদের উত্ত্যক্ত করার নামই ইভটিজিং। সেটা যেভাবেই হোক কিছু কিছু
উদাহরণ বা নমুনা এখানে অনেকেই বলেছেন। আমি তার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।
বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীই কোনো-না-কোনোভাবে বিভিন্ন সময়ে ইভটিজিংয়ের শিকার
হচ্ছেন, যা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না, উচিতও নয়।
সুধীমণ্ডলী,
ইভটিজিং একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। এর শিকার হয়ে ইতোমধ্যেই অনেক নারীকেই
জীবন দিতে হয়েছে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী সিমি, মিরপুরের ফাহিমা খাতুন,
খুলনার রুমি, গাইবান্ধার তৃষা, স্বপ্না, সাভারের তিথিসহ অসংখ্য নারী
ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে জীবনের সমাপ্তি টেনেছে।
ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েও জীবন দিতে হয়েছে শিক্ষক, অধ্যাপকসহ
অনেক সচেতন ব্যক্তিকে। ফলে মেয়েদের শিক্ষা ও জীবন বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে
যাচ্ছে। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না।
সুধীবৃন্দ,
আপনারা সমাজের সচেতন নাগরিক। আর সময় ক্ষেপণ করা যাবে না- ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে
সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে সমাজের ভূমিকা সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ। নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন
দিয়েছেন। এর বেদনা শেষ হতে না হতেই ফরিদপুরের মধুখালিতে বখাটেদের হাত থেকে
নিজের মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন চাঁপা রানী ভৌমিক। তারা
সামাজিকভাবে ইভটিজিংকে প্রতিহত করার প্রেরণাদাত্রী। সম্মিলিতভাবে সামাজিক
আন্দোলন গড়ে তোলা হলেই ইভটিজিং প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুন্দর মানুষ ও শান্তিময়
সমাজ গঠনের জন্য সামাজিকভাবে ইভটিজিং প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আজকের
অনুষ্ঠানের সবাইকে ধন্যবাদ।