ফেসবুক ব্যবহারের ভালো ও মন্দ দিকগুলো নির্দেশপূর্বক একটি ভাষণ তৈরি করো।
ফেসবুক ব্যবহারের ভালো ও মন্দ দিকগুলো
ফেসবুক ব্যবহারের ভালো ও মন্দ দিক নির্দেশ করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই মহতী সভার
মাননীয় সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি, মঞ্চে উপবিষ্ট সম্মানিত আলোচক বৃন্দ ও
সম্মানিত সুধীমণ্ডলী আপনাদের জানাই আন্তরিক অভিবাদন।
আজ একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ভালোমন্দ দিক নিয়ে আলোচনা
করব। ‘ফেসবুক’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম৷ এটি
বিশ্ব সামাজিক আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট। ২০০৪ সালে ফেসবুক
প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মার্কজুকারবার্গ। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর
ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ। বর্তমানে এর সংখ্যা হয়েছে ১৮৫
কোটির চেয়ে বেশি। বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৪২ কোটি। এই ফেসবুক
এখন এতটাই জনপ্রিয় যে, যাবতীয় সামাজিক যোগাযোগ ছাড়াও অনলাইনে কেনাকাটার
কাজেও এই নেটওয়ার্কই ব্যবহৃত হয়।
সুধী,
ফেসবুকে অনেক সুবিধার মধ্যে অন্যতম সুবিধা হলো ‘যোগাযোগ’ ফেসবুকের মাধ্যমে
তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা সম্ভব। পুরনো বন্ধু-বান্ধবী খুঁজে পাওয়ার নির্ভরযোগ্য
মাধ্যম। পরিচিত ও অপরিচিত অনেককেই এর মাধ্যমে পাওয়া যায়। আমাদের অনেক বন্ধুর
ফোন নম্বর অজানা থাকে বা তার ফোন নম্বর পরিবর্তন করে থাকে তারপরও ফেসবুকের
মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করা যায়। যেকোনো কাজে আমরা একজন আরেকজনকে
বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে খুব
সহজেই এখন বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো যায়, সাহায্য পাওয়া যায়, হতদরিদ্রদেরও
সাহায্য করা যায়। ভালো কিছু ভিডিও, নিউজ, লেখা ইত্যাদি শেয়ার করে বন্ধুদের
দেখানোর সুযোগ রয়েছে। কারো সঙ্গে ভালো কিছু হলে বা অন্যায় কিছু হলে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে সেটার পক্ষে বা বিপক্ষে অনেক বড়ো আকারে সাড়া পাওয়া যায়।
প্রিয় সুধী,
ফেসবুকের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আলোচনা। এখানে অনেকেই গ্রুপের
মাধ্যমে আলোচনা করে থাকেন। সেটা হতে পারে ব্যবসায়িক, শিক্ষাবিষয়ক, সংগঠনিক,
রাজনৈতিক ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ করা। অনেকে নানা ব্যস্ততার মধ্যে
থাকে, অনেক সময় সংগঠন বা অন্যান্য মিটিং-এ অংশগ্রহণ করতে পারে না, তাই কোনো
বিষয়ে সংগঠন বা গ্রুপকে জানানোর প্রয়োজন হলে সবাইকে ফোন করা সম্ভব হয়ে ওঠে
না, তখন গ্রুপে একটি পোস্ট করে দিলে সবাই সেই বিষয়ে জানতে পারে। বর্তমানে
ফেসবুকে যে বিষয়টি সবচেয়ে বড়ো আকারে ধারণ করছে সেটা হলো ফেসবুক মার্কেটিং।
বর্তমানে নিউজ পোর্টালগুলো বেশিরভাগ ভিউ বা ট্রাফিক নিয়ে আসে এই ফেসবুকের
মাধ্যমে। অন্য দিকে অনলাইন শপিং এর মার্কেটিং করা হচ্ছে এর মাধ্যমে। ফেসবুক
থেকে আপনি ইনকামও করতে পারেন। এই মাধ্যমে মার্কেটিং করে।
সম্মানিত সুধী,
ফেসবুকের ভালোদিকের পাশাপাশি কিছু মন্দ দিকও রয়েছে। ফেসবুকের সবচেয়ে বড়ো
নেতিবাচক হলো এটি সময় নষ্ট করে। বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে যেখানে অনেকেই
ফেসবুকে ঢুকে বসে আছে যা ওই সময় একটা খারাপ দিক তুলে ধরে। কেউ কাউকে সময় দিতে
পারছে না। ফেক আইডি, মানে ভুয়া নাম, ঠিকানা, অন্য মানুষের ছবি ব্যবহার করে
মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে কিছু সংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারী। পরবর্তী পর্যায়ে
ভালোবাসার ফাঁদে ফেলছে কেউ কেউ এবং মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে।
সুপ্রিয় সুধী,
আইডি হ্যাক, মানে একজন ব্যক্তি অন্য একজনের ফেসবুক আইডিতে ঢুকছে তার অনুমতি
ছাড়া। বিভিন্ন কোডিং-এর মাধ্যমে এবং সেখানে আপত্তিকর ছবি ভিডিও আপলোড করে বা
তাকে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করছে অনেকেই। অন্যদিকে
তরুণ-তরুণীরা ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে তারা
অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ঘটনার শিকার হচ্ছে। মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই করছে
সাহায্যের নামে ব্যবসা। মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছে প্রচুর পরিমাণ অর্থ।
প্রিয় সুধী,
ফেসবুক একদিকে যেমন দিয়েছে বেগ, তেমনি কেড়ে নিয়েছে আবেগ। ফেসবুকের কল্যাণে
আমরা আজ আমাদের পরিবার পরিজন থেকেও দূরে সরে গিয়েছি। পরিবারের লোকজন আমাদের
কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সময় পায় না। ফলে সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক ভাঙ্গন এসব
প্রকট হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি ফেসবুকের নেশায় মত্ত হয়ে আজকের তরুণ সমাজ
পড়াশোনা থেকেও দূরে সরে যাচ্ছে, ফলে তাদের মেধাটাও ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে কাঙ্ক্ষিত মেধাবী ঝড়ে পড়ছে এবং ফেসবুকের নেশা ছাড়তে না পেরে আমাদের তরুণ
সমাজ পর্যায়ক্রমে আরো অবক্ষয়ের দিকেও ধাবিত হতে পারে। তাই প্রযুক্তির কল্যাণে
ফেসবুকের কাঙ্ক্ষিত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই ফেসবুক ব্যবহারে আমাদের
সচেতন হতে হবে।