‘ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু' শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু
গতরাতে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরেছে রানিয়া। দীর্ঘ ভ্রমণের পর ক্লান্ত হয়ে রাতে
তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে সে। খুব ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে যায় তার। ঘুম থেকে উঠে
রানিয়া গ্রামের মেঠো পথে হাঁটতে বের হয়। হাঁটতে গিয়ে তার চোখে পড়ে রাস্তায়
দুপাশের ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু। পুব আকাশে সূর্যটা উঁকি দিচ্ছে। সূর্যের আলো
এসে পরছে শিশির বিন্দুর ওপর। শিশির বিন্দুগুলোকে রানিয়ার কাছে এক একটা মুক্তা
বলে মনে হয়। এই শিশিরবিন্দুগুলো তার মধ্যে হঠাৎ একটা ভালোলাগার আমেজ জাগায়
আর এই আমেজটা তাকে কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। সে ভাবে দেখতে দেখতে আটটি বছর কেটে
গেলো। মনে পড়ে, সেই শরতের শিশির ভেজা তৃণ আচ্ছাদিত শুভ্রস্নাত শীতের সকাল। যখন
সে কিশোরী ছিল। স্কুল কলেজের সময়টা তার গ্রামেই কেটেছে। তারপর চলে যায় ঢাকা।
গত আট বছরে সে এই শিশিরবিন্দু দেখতে পায়নি। ঘাসের ডগায় কয়েক ফোঁটা শীতের
শিশির তাকে মনে করিয়ে দেয়। জীবন সে তো পদ্ম পাতার শিশির বিন্দু। রানিয়ার ছোট
বেলায় কথা মনে পড়ে যায় ৷ এমনই কোনো এক হেমন্তের বিকালের কথা যখন হেমন্তের
অলস সূর্যটা আরও কিছুটা হেলে পড়ত দক্ষিণ আকাশে, রোদের তাপ থাকতো না সেই রাগী
উত্তাপের ছোঁয়া পরক্ষণেই রাতের কালো আকাশ চিরে নিঃশব্দে নেমে আসত কুয়াশার
চাদর, হিম হিম ঠান্ডা আমেজ জড়িয়ে থাকত সকাল অবধি। খিড়কি খুলতেই চোখে-মুখে
লাগতো কনকনে হিম ভেজা বাতাসের ধাক্কা। সূর্যিমামা পূর্বাকাশে উঁকি দিতেই বাড়ির
উঠোনে গিয়ে বসতো সে। তখনই চোখে পড়তো রাতের বেলা টুপটাপ করে ঝড়ে পড়া নিশির
শিশির। তার এই শিশুর বিন্দুয় আরো নৈকট্য পাবার আশায় সে ছুঁটে যেতো আমন
ক্ষেতের পানে। দেখতে পেতো গাছের ডগায় জমে থাকা শিশিরগুলো সূর্যালোক পেয়ে
হিরকের ন্যায় জ্বলজ্বল করছে। আর দূর হতে তাকে ইশারা দিচ্ছে। সেও সাড়া না
দিয়ে পারতো না। তাইতো হেমন্তের সাড়াটা সকাল শুধু শিশির কণাই খুঁজে বেড়াতো
সে। রানিয়া ভাবে, শহুরে জীবনের পাঠ চুকিয়ে একদিন আবার সে গ্রামে চলে আসবে।
কোনো এক স্কুলের শিক্ষক হয়ে থেকে যাবে এই গ্রামেই। কারণ এই ঘাসের ডগায় শিশির
বিন্দু যে তার অতি আপন। তাকে সারাক্ষণ কাছে ডাকে।