একজন রাস্তার হকার
রাস্তার হকার বলতে আমরা একজন করুণাযোগ্য ফেরিওয়ালাকে বুঝি যে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে। একজন ফেরিওয়ালার জীবন খুবই বৈচিত্রময়। সে সামান্য পুঁজি দ্বারা তার ব্যবসা পরিচালনা করে। সে সাধারণত নকল গহনা দ্রব্যসামগ্রী, ফিতা, টুকিটাকি জিনিসপত্র, গৃহ সরঞ্জাম, কুমারের তৈরি মাটির জিনিসপত্র ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে। মাঝে মাঝে সে মিষ্টিজাতীয় খাবার বিক্রি করে। তাকে কাপড় বিক্রি করতেও দেখা যায়। কোনো কোনো ফেরিওয়ালা রাস্তা ও শহুরে গলির আশপাশে বসবাসকারী গৃহিণীদের আকৃষ্ট করতে তাদের সাথে বাঁশি রাখে। আবার অনেকে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য উচ্চ স্বরে মুখ দিয়ে সুর করে। মাঝে মাঝে শহরের রাস্তাঘাটে তাদেরকে এক জায়গায় দাঁড়িয়েও পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সরকার তাদের প্রায়ই উচ্ছেদ করে। বাধ্য হয়েই তারা তখন তাদের অপর্যাপ্ত পণ্য নিয়ে শহরের দ্বারে দ্বারে ঘুড়ে বেড়ায়। একজন ফেরিওয়ালা অত্যন্ত পরিশ্রমী, সচেতন ও বিচিত্ররূপী। সে প্রায়ই গৃহিণীদের কাছে বেশি দামে জিনিস বিক্রয়ের জন্য সুযোগের অপেক্ষা করে। সে প্রধানত দুপুরের খানিকটা পূর্বে গৃহিণীদের কাছে যায় এবং খুব চঞ্চল ও নিপুণ ভঙ্গিতে তার পণ্যের প্রচারণা চালায়। এতে গৃহিণীরা আকৃষ্ট হয় এবং বেশি দামে সস্তা পণ্য ক্রয় করে। সব দিনই একজন ফেরিওয়ালার সমান যায় না। সে মাঝে মাঝে খুব কম লাভ করে। তখন তার পথ চেয়ে বসে থাকা পরিবারের মুখগুলির চিন্তায় তাকে বিষণ্ণ দেখায়। অন্যদিকে যখন সে ভালো লাভ করে, তখন তার চেহারা খুব হাস্যোজ্জ্বল থাকে। কিন্তু তার পরেও আমাদের দেশের ফেরিওয়ালাদের আর্থিক অবস্থার সামান্যতম উন্নতি হচ্ছে না বললেই চলে। তাদের অধিকাংশ পরিবারই বহু সদস্যে ভারাক্রান্ত, যারা অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা বস্তিতে রোগশোকের সাথে নিত্য সংগ্রাম করে চলে। তাই একজন ফেরিওয়ালার দুর্দশাগ্রস্ত ভাগ্যের অবসান হওয়া উচিত এবং সরকারের উচিত তাদের জন্য স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়া।