অনুচ্ছেদ : হরতাল বা ধর্মঘট

হরতাল বা ধর্মঘট


'হরতাল' একটি গুজরাটি শব্দ; এর বাংলা শব্দ 'ধর্মঘট'। কিন্তু ভারতের পশ্চিম বাংলায় একে 'বনধ' বলে। আর ইংরেজিতে একে বলে 'strike'। যখন কোনো সংঘবদ্ধ দল বা সংগঠন তাদের অধিকার বা দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য চলমান জনজীবনকে এক বা একাধিক দিনের জন্য অচল করে রাখে তখন তাকে হরতাল বা ধর্মঘট বলে। বর্তমানে আমাদের দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা হরতাল শব্দটির সঙ্গে সুপরিচিত। 'হরতাল' একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ভিন্নমতের বিরুদ্ধে শাস্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর একটি স্বীকৃত পন্থা হচ্ছে 'হরতাল'। পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ জানানোর একটি স্বীকৃত পন্থা হলো 'হরতাল'। পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্ন নামে হলেও প্রতিবাদের এ প্রক্রিয়া চালু আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই গণতান্ত্রিক উপায়টির যথেচ্ছা ব্যবহার হচ্ছে ইদানীং। নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায় হিসেবে ‘হরতাল’ আজকাল পালিত হচ্ছে না। সহিংসতা, বোমাবাজি, হত্যা ও সংঘর্ষে রূপান্তরিত হচ্ছে অধিকাংশ হরতাল। এতে লোকক্ষয় ও সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে, জাতীয় জীবনে নানা দুর্যোগ ও দুর্ভোগ দেখা দিচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসেবে হরতাল পালিত হলে দেশের মানুষ রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হয়। ক্ষমতাসীন সরকার বা যার বিরুদ্ধে হরতাল করা হয় তারা নিজেদের কার্যকলাপ ও নীতি নির্ধারণ সম্পর্কে সচেতন হয়। যদি কোনো দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে হরতাল ডাকা হয়, তাতে জনজীবনে অনর্থক দুর্ভোগ বাড়ে। প্রকৃতপক্ষে এতে সাধারণ লোকের কোনো লাভ হয় না। আমাদের দেশে আজকাল প্রতিনিয়ত যে হারে হরতাল ডাকা হচ্ছে তাতে দেশের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। এ ক্ষতি শিক্ষাঙ্গনে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে, সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে সীমাহীন কষ্ট ডেকে নিয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে 'হরতাল' করার অধিকার যেমন প্রয়োজন, তেমনই এ অধিকারকে যথেচ্ছা ব্যবহার করে স্বেচ্ছাচার ও অরাজকতা সৃষ্টিও কোনো দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। হরতালের ব্যাপারে গঠনমূলক কারণ থাকা চাই, নচেৎ অমঙ্গল অনিবার্য। কারণ প্রতিনিয়ত 'হরতাল' আহ্বান জাতীয় জীবনের অভিশাপ ছাড়া কিছুই নয়।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post