তোমার হোস্টেল জীবনের অভিজ্ঞতা

তোমার হোস্টেল জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।



হোস্টেল জীবন সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না। মনে মনে বড় ভয় ছিল, নিরাপত্তার অভাবের কথাও মনে হতো। কিন্তু হোস্টেলে না এসেও আমার কোনো উপায় ছিল না। গ্রামের স্কুল থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেছি। আশেপাশে কোন কলেজ নেই। বাধ্য হয়েই আমাকে থানা বা জেলা সদরের কলেজে ভর্তি হতে হবে। তাছাড়া ভালো একটা কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে আমার। কাছে দূরে যেতে হবে। বাবা খুব আপত্তি করলেও বুঝিয়ে বলার পর রাজি হয়েছেন। আপাতত আর কোন বাধা নেই। তবে ভর্তি হলেও থাকবো কোথায়? শহরে তো আমাদের তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। হোস্টেলেই একমাত্র ভরসা। মা-বাবা আমাকে ছেড়ে কখনো থাকেননি। তাছাড়া আমি তাদের একমাত্র সন্তান। শুনেছি হোস্টেলে মাঝে মাঝেই মারামারি হয়। মা-বাবার ভয় সেখানেই। কবির ভাষায়-
‘তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।'
আমি থানা ও জেলা সদরে সরকারি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করলাম। কিন্তু কোথাও হলো না। অগত্যা করোটিয়া সা'দত কলেজের সুযোগ পেয়ে ভর্তি হলাম। অনেক দূরে হলেও এটি বহু পুরনো একটি স্বনামধন্য কলেজ। হোস্টেল সিটের জন্য আবেদন করলাম‌। সিটও পেয়ে গেলাম। কলেজটা ঘুরে ফিরে দেখলাম। হোস্টেল ঘুরে দেখলাম, সিটও খুঁজে নিলাম। আমার রুমমেট এর সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। সে আমাকে সাথে নিয়ে বড় ভাইয়াদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তারা আমাকে সাহস আর উৎসাহ দিলেন। চারদিকে গাছপালা, সামনে ফুলের বাগান। পাশে বড় একটি পুকুর, দু'পাশের শান বাঁধানো ঘাট। আর পুকুরের চারদিকে নারকেল ও অন্যান্য গাছ। খুব ভালো লাগলো। এক সপ্তাহ পরে এসে সিটে উঠলাম। শুরু হলো হোস্টেল জীবন। রাত সাড়ে এগারোটায় ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে ফ্রেশ হয়ে এক গ্লাস পানি খাই। রুমমেট ভাইয়ের সাথে হালকা ব্যায়াম করি। তারপর গোসল সেরে নাস্তা করি। ক্লাসে চলে যাই। দুপুরে ফিরে খাবার খাই। প্রতিবেলায় থাকে শাক সবজি, মাছ মাংস ডাল। রান্না মন্দ নয়। বিকেলে ক্লাস থাকলে করি অথবা লাইব্রেরী ওয়ার্ক করি। ফিরে এসে নামাজ ছেড়ে পড়তে বসি। কখনো কখনো পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে টিভি রুমে যাই। এভাবেই অনেকের সাথে আলাপ হয়ে গেল। বন্ধুত্ব হল কয়েকজনের সাথে। তারা আমাকে নানা বিষয়ে সাহায্য করে। বেশ চমৎকার পরিবেশ। মাকে লিখে জানালাম সব। মা খুশি ও নিশ্চিন্ত হলেন। মাঝে মাঝেই আলোচনা-বিতর্ক, গানের প্রতিযোগিতা হয়। আমিও অংশ নিই। হোস্টেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যারও খুব আন্তরিক। সব মিলিয়ে হোস্টেল জীবন খুবই সহায়ক ও সুন্দর।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post