"ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়" অবলম্বনে একটি খুদে গল্প রচনা কর ।
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়
মানুষ তার স্বপ্নের চেয়ে বড় হতে পারে। মানুষ যা আশা করে তা যদি সে বিশ্বাসে
রূপান্তর করতে সক্ষম হয় তাহলে সত্যিই সে সফল হয়- এটাই জীবনের ধর্ম। প্রকৃতির
স্বাভাবিক নিয়মও এটাই। তেমনি একজন সফল মানুষ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কেয়া
কসমেটিকস এর স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল খালেক পাঠান। যিনি ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতেন
ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হবেন। সে ইচ্ছা অনুযায়ী তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণিতে
পড়া অবস্থায় বাবা স্কুলে টিফিন বাবদ যে আট আনা বা বারো আনা দিতেন তা জমিয়ে
চকলেট ও বিস্কুট কিনতেন। রাস্তার পাশে বসে সেগুলো বিক্রি করে যে লাভ হয়েছিল তা
দিয়ে শুরু করেছিলেন মুরগি ব্যবসা। স্থানীয় বাজার থেকে কিনে দূরের বাজারে বিক্রি
করায় ভালই লাভ হয়। কিন্তু তার পরিবারের কেউ তা পছন্দ করতো না বলে বন্ধুর বাসায়
মুরগি রাখতো। একদিন সেই বন্ধু বললো, মুরগীগুলো শেয়ালে খেয়েছে। তার বুঝতে বাকি
রইল না কোন শেয়ালে খেয়েছে। খুব কষ্ট পেলেও তিনি হাল ছাড়ার লোক নন। তাকে তো সফল
হতেই হবে। অনেক কষ্টে নানা বাড়ি থেকে কিছু টাকা নিয়ে পাইকারি দরে পান-বিড়ি
কিনে রাস্তার ধারে বসে খুচরা বিক্রি শুরু করে। এদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অটো
প্রমোশন তার ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়ালো। এক লাফে ক্লাস ফোর থেকে সিক্সে উঠল।
তার বাবার কড়া হুঁশিয়ারি আর এসব ব্যবসা নামক চিন্তায় সময় নষ্ট করা চলবে না,
এবার লেখাপড়ায় মন দিতে হবে। যাই হোক পরিবারের প্রচণ্ড চাপে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ
করে ১৯৭৮ সালে মেট্রিক পাশ করেন তিনি। এর মাঝে কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করে
ফেলেন। দুই পরিবারের কেউই তা মেনে নেয়নি। স্ত্রী তার জমানো ছয়শ টাকা ও বাবার
বাড়ি থেকে পাওয়া গহনা বিক্রি করে পাঁচ হাজার টাকা স্বামীর হাতে তুলে দিল। ভরসা
পেয়ে আব্দুল খালেক আবার শুরু করলো লাকড়ির ব্যবসা। মাঝখানে পুকুর লিজ নিয়ে মাছ
ছেড়েছিল। কিন্তু তাতে যে সময় লাগবে সে ধৈর্য নেই তার। তাই আবার শুরু হলো
লাকড়ির ব্যবসা। এতদিনে তার শ্বশুর মশাই বুঝতে পারলেন যে তার জামাই খুব পরিশ্রমী।
তাই তাকে নিয়ে নিজের ইট ভাটায় ছয়শ টাকা বেতনে চাকরি দিলেন। এত অল্প টাকায় তার
চলবে না। বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন। চাকরি ছেড়ে প্রগতি থেকে কিস্তিকে একটি
ট্রাক কেনা হলো। নিজেও ড্রাইভিংটা শিখে নিলেন। একজন ড্রাইভার দিনে চালান আর তিনি
রাতে চালাতেন। ছয় মাসে ভালোই পুঁজি হলো। তা দিয়ে ইট ভাটা করার পরিকল্পনা করলেন।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রথমে ঋণ দিবে বললেও পরে অপারগতা প্রকাশ করে। শ্বশুর সে কথা
শুনে দুই লাখ টাকা ঋণ দিলেন আর পরের বছর সোনালি ব্যাংক থেকে আরো তিন লাখ টাকা ঋণ
নিয়ে ইট ভাটা করা হলো। এবার তার স্বপ্ন নিটিং এন্ড ডাইং গার্মেন্টস করবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা কম বলে ব্যাংক তাকে ঋণ দেবে না বলে জানায়। যেহেতু এ ব্যবসা
শতভাগ রপ্তানি নির্ভর তাই বিদেশি ক্রেতাদের সাথে তাকে কথা বলা ও যোগাযোগ করতে হবে
ইংরেজিতে, যা তার মত মেট্রিক পাশ লোকের দ্বারা সম্ভব নয়। ব্যাংকের এমন আচরনে তার
জিদ ধরল। ভারত থেকে ১৮টি নিটিং মেশিন এনে পুরোদমে কাজ শুরু করলো। এসব দেখে ব্যাংক
কর্মকর্তারা এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ বরাদ্দ করলেন। আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে
হয়নি। প্রতি বছর তার প্রতিষ্ঠান থেকে চল্লিশ কোটি টাকার কাপড় রপ্তানি হতো।
প্রায় তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানে। সবশেষে তিনি হাত
দিয়েছেন কসমেটিকস ব্যবসায়। শুরু করেছেন কেয়া নারিকেল তেল, পাউডার, সাবান
ইত্যাদি উৎপাদন ও বাজারজাত করণের কাজ। আজ তার প্রতিষ্ঠান দেশ সেরা। তিনি একজন
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ইচ্ছা থাকলে যে উপায় হয় তিনি তা প্রমাণ করেছেন নিজের
পরিশ্রম ও সততা দ্বারা।