‘যানজটে অ্যাম্বুলেন্স’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো:
যানজটে অ্যাম্বুলেন্স
ঈদের ছুটিতে ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসে গল্প করার সময়
শাকিলের মোবাইল ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল। অপর প্রান্তের কথা শুনে শাকিল স্তব্ধ হয়ে
বসে থাকে। তার পৃথিবীটা দুলে উঠে মুহূর্তেই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি।
কেননা ঈদের ছুটির এই শেষদিনে সবার জন্য বাজার করতে গিয়ে একটা বাসের মুখোমুখি
পড়ে যান শাকিলের বাবা। সরে যেতে গিয়েও মারাত্মক ভাবে আহত হন তিনি। এলাকার
পরিচিত একজন লোক সেই দূর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলো। তিনিই শাকিলকে ফোন করেন এবং
তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যান। খবরটা শোনার পরই বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
শাকিলরা কয়েকজন মিলে তখনই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তারা গিয়ে দেখল
অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। ডাক্তার বলেছেন, উনার পায়ের রগ কেটে মাংসের সঙ্গে থেঁতলে
গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে নইলে বাঁচানো কঠিন
হবে। একথা শোনার পরই অ্যাম্বুলেন্সে করে শাকিলের বাবাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে
রওনা দেয়া হলো।
পথিমধ্যে কোন ঝামেলার মুখোমুখি না হলেও ঢাকার নিকট কাঁচপুরের কাছে এসে দেখা গেল
বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারের বিশাল লম্বা লাইন। যানজটে যদিও অ্যাম্বুলেন্সকে আগে
যেতে দেবার রীতিটাই প্রচলিত তবুও অনেকবার হর্ন বাজানোর পরও কারো কোন ভ্রুক্ষেপ
নেই। তখন সিন্ধ্যে ছয়টা বাজে। শাকিলের বাবার অবস্থার শুধু অবনতিই হচ্ছে। তিনি
শাকিলকে ডেকে বললেন, 'আমি বোধ হয় আর বাঁচব না, তোর মাকে দেখে রাখিস।' শুনে শাকিল
কান্নায় ভেঙে পড়ে। নেমে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে বলল, 'আমার বাবা খুবই অসুস্থ।
আমাদের অ্যাম্বুলেন্সটা কি আগে যেতে দেয়া যায় হাসপাতালে পৌঁছাবার জন্যে। কিন্তু
বিপরীত দিকের একটা ট্রাক উল্টো পথে আসার জন্যেই এই যানজটের সৃষ্টি। সেখানে
ট্রাফিক পুলিশের কিছু করার ছিল না। তিনি শাকিলকে বললেন, 'ভাই আপনাদের অসচেতনতার
জন্যেই আমরা এমন নিরুপায়। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা পর যানজট মুক্তির পর অ্যাম্বুলেন্স
আবার চলতে শুরু করল। কিন্তু শাহবাগ মোড়ে এসে আবারও যানজটের মুখোমুখি হতে হয়
তাকে। এদিকে তার বাবার অবস্থাও খুব আশঙ্কাজনক। শাকিল নিরুপায় হয়ে গাড়ি থেকে
নেমে আবার গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে বলল, 'আমাদের অ্যাম্বুলেন্সটা সামনেই দাঁড়ানো।
ভেতরে রোগী আছে। আপনি আমাদের অ্যাম্বুলেন্সটা আগে যেতে দিন দয়া করে।' কিন্তু
ট্রাফিক পুলিশ কোনো রকম গুরুত্ব দিয়ে তার কথা না শুনে বরং বিরক্ত হয়ে বলল, ‘যান
যান ভেতরে গিয়ে বসুন। সব গাড়ি ছাড়লে তবেই যাবেন।' অগত্যা শাকিল তার অসুস্থ
বাবাকে নিয়ে যানজটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে বসে রইল আর আল্লাহর কাছে
প্রার্থনা করতে থাকল। অবশেষে আরও এক ঘণ্টা পর অ্যাম্বুলেন্স যানজট মুক্ত হয়ে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায় শাকিলের বাবার
উন্নত চিকিৎসার জন্যে।