জাতীয় স্মৃতিসৌধ দর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৫০জন ছাত্রছাত্রী সাভার উপজেলার নবীনগরে যাচ্ছি। এটি ঢাকা
থেকে ৩৫কি.মি. উত্তর পশ্চিমে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে গণকবর ও বধ্যভূমি
আবিষ্কৃত হয়। এ কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য ত্যাগ ও শৌর্যের
স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এখানে নির্মাণ করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
এটি একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স। ইতিহাসের হায়দার স্যার ব্রিফ করছেন, আমরা মনযোগ
দিয়ে শুনছি। অধিগ্রহণকৃত ৮৪ একর জমিতে সমগ্র কমপ্লেক্স এবং প্রায় ২৫ একর জুড়ে
রয়েছে সবুজ বনভূমি। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রথম পর্যায়ে ভূমি সংগ্রহ ও
প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণ, দ্বিতীয় পর্যায়ে গণকবর, হেলিপ্যাড, পার্কিংয়ের জায়গা,
পেভমেন্ট নির্মাণ তৃতীয় পর্যায়ে কৃত্রিম লেক, সবুজ বনভূমি, ক্যাফেটেরিয়াসহ
মূলস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোর নকশা তৈরি করেছেন
স্থপতি মঈনুল হোসেন। স্তম্ভটির সামনে রয়েছে বেশ কয়েকটি গণকবর ও একটি প্রতিফলন
সৃষ্টিকারী জলাশয় স্মৃতিসৌধের উপকরণগুলো প্রতীকী ভাবনা থেকে বিন্যস্ত করা হয়েছে,
যেমন - মূল স্তম্ভের সাতটি দেয়াল সাতটি জাতীয় আন্দোলনের (ভাষা আন্দোলন,
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, শাসনতন্ত্র আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান
ও স্বাধীনতা সংগ্রাম) প্রতীক, চত্বরের লাল ইট রক্তাক্ত সংগ্রামের, জলাশয় অশ্রুর,
গণকবর শহীদদের উপস্থিতি, সবুজ বেষ্টনী শ্যামল বাংলা এবং উঁচু নিচু পথ স্বাধীনতার
চড়াই উতরাইকে নির্দেশ করেছে। কয়েকজন বলে উঠল, ঐ যে দেখা যাচ্ছে স্মৃতিসৌধ। আমাদের
বাস পার্কিংয়ের জায়গায় এসে থামল। বাস থেকে নেমে আমরা দুই সারিতে দৃষ্টিনন্দন
প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকলাম। দুপাশের বাহারি ফুলের বাগান আমাদের ক্লান্তি দূর করে দিল।
আমরা উঁচু নিচু এলাকা ও পেভমেন্ট অতিক্রম করার সময় দুপাশের গণকবর দেখছি আর ভাবছি
কত মানুষকে কী নির্মম অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছে। পাশেই রয়েছে জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বোধনকৃত লিপি আর তার কাছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের কবিতার চারটি লাইন-
"উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষ প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।"
আমরা কৃত্রিম লেক দেখছি এবং লেকের উপর নির্মিত সেতু পার হচ্ছি। মূল স্মৃতিসৌধের
সামনে আমরা। অবাক হয়ে দেখছি আর মনে পড়ছে সাতটি ধাপের অর্থাৎ আন্দোলনের কথা।
প্রাচীরগুলো মাঝখানে একটি ভাঁজ দ্বারা কোণাকৃতির এবং একটির পর একটি সারিবদ্ধভাবে
বসানো। কাঠামোটির সর্বোচ্চ শীর্ষবিন্দু ১৫০ ফুট উঁচু। কাঠামোটি এমনভাবে বিন্যস্ত
যে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ভিন্ন ভিন্ন মনে হয়। এরপরে আমরা সবুজ চত্বরে
ঢুকলাম। এখানে নানা রকম ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রয়েছে। খুব সুন্দরভাবে সাজানো।
অনেকক্ষণ ঘুরে ফিরে এলাম ক্যাফেটেরিয়ায়। যার যার পছন্দমতো খেয়ে নিলাম। বাসে ওঠার
আগে আর একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স। হৃদয়জুড়ে ভালোবাসা নিয়ে ফিরে
এলাম।