ভাষণ : জাতিগঠনে নারী সমাজের ভূমিকা

‘জাতিগঠনে নারী সমাজের ভূমিকা’ সম্পর্কে একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরি কর।

‘জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক বক্তৃতা

শ্রদ্ধেয় সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি উপস্থিত সুধীমণ্ডলী আসসালামু আলাইকুম।

দিগ্বিজয়ী নেপোলিয়ন বোনাপার্টের একটি বাণী দিয়ে আমার বক্তব্য শুরু করছি। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, 

"The hand that rocks the cradle rules the world" 

অর্থাৎ, যে হাত দোলনা দোলায়, সেই হাতই বিশ্ব শাসন করে।

আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন—


আজকের এ আলোচনা সভা বাঙালি জাতির জাতীয় উন্নয়নের নিরিখে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইতোমধ্যে আপনারা অবহিত হয়েছেন। নারী-পুরুষ সমাজ-দেহের দুটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ – জগৎ ও জীবনের পরিপূরক। দেশ ও জাতি গঠনে উভয়ের সমান ভূমিকা রয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীকে সমান তালে জাতি গঠনে ভূমিকা নিতে হবে। তাই নারীশিক্ষার গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

বন্ধুগণ,
আজ এখানে সমবেত সকলকে প্রথমেই একটি প্রশ্ন করি – শিক্ষাক্ষেত্রে কী কেবল পুরুষের একচ্ছত্র অধিকার, নাকি পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থার পক্ষপাতপূর্ণ এবং প্রবঞ্জনামূলক অলিখিত এক বিকৃত নির্দেশনামা? যদি উত্তর না হয় তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় তবে কেন আমাদের দেশে নারীশিক্ষার হার পুরুষের তুলনায় এত নৈরাশ্যজনক? আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী এবং এর বিরাট অংশ শিক্ষার আলোকবর্জিত। আর মানুষ জাতির অর্ধেক নারী শিক্ষা গ্রহণ না করলে এবং জাতিগঠনে পুরুষের সঙ্গে সমভূমিকা না রাখলে জাতি সভ্যতার অগ্রযাত্রায় শামিল হতে পারবে না।

সুধীবৃন্দ,
আমাদের এ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অর্ধাংশ নারীসমাজকে যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে তারা যে আমাদের জাতীয় জীবনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি যুগে যুগে যেমন– বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত, মাতোঙ্গিনী হাজেরা, ইলামিত্র, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এঁরা অতি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাষট্টি-ছেষট্টি-ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ও নব্বইয়ের গণবিস্ফোরণে নারীরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
নেপোলিয়ন বলেছিলেন,
“আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।”
কিন্তু আমাদের নারীসমাজ পরিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা থেকে এখনও বঞ্ছিত। অনেক পিতা-মাতা কন্যাদের চেয়ে শিক্ষার প্রতি অধিক সচেতন। কিন্তু নারী জাতির মধ্যে যে অসীম শক্তির সম্ভাবনা, বিস্ময়কর মেধা ও প্রতিভা প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে তা আমরা উপলব্ধি করি না। পর পর তিনবার নারী শাসন প্রতিষ্ঠার পরও বাংলাদেশের নারীদেরকে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমান মর্যাদা এবং পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষিত নারী যে বিকাশশীল পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতির সকল প্রেরণার উৎস ও প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে তা আমরা মনেই করি না। অথচ আজকের পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখা যায় চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিচারক, প্রশাসক, আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা বাহিনী এমনকি বৈমানিকের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নারীরা নিজেদের নিয়োজিত করে তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছে। সমাজ প্রগতিতে এটা শুভ লক্ষণ।

প্রিয় বন্ধুগণ,
প্রগতিশীল গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য নারীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। সেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধাংশকে ধরে বসিয়ে রেখে জাতির উন্নয়ন আশা করা মূঢ়তার শামিল। তাই সর্বাগ্রে চাই সে
মৃঢ়তা থেকে মুক্তি। চাই নারীর সর্বক্ষেত্রে বিচরণের পূর্ণ অধিকার। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো হোক এবং জাতি গঠনে সমান ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া হোক এই আশাবাদ ব্যক্ত করে শেষ করছি।

সবাইকে ধন্যবাদ।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post